এখনো অধরা 'মহাপ্রতারক' রিজেন্টের সাহেদ করিম

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সাহেদ করিম
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়াসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট গ্রম্নপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শিবলীসহ ৮ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব)। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে রিজেন্ট গ্রম্নপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম আত্মগোপনে রয়েছেন। অভিযানের ছয়দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রিজেন্ট গ্রম্নপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে তিনি দেশেই আছেন। বিদেশে পালিয়ে যেতে পারবেন না। আমরা অনুসন্ধান করছি। তার স্বজন ও পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এছাড়াও গ্রেপ্তার হওয়া তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আশা করছি অচিরেই তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে। র্ যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিক বিলস্নাহ বলেন, 'রিজেন্ট গ্রম্নপের চেয়ারম্যান সাহেদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।র্ যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাহেদের অবস্থান নিশ্চিত করতের্ যাবের একাধিক টিমও কাজ করছে। আশা করি খুব দ্রম্নতই তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।' আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রিজেন্ট গ্রম্নপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে ১০ হাজারের বেশি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করেছিল করোনা আক্রান্ত রোগীদের ফ্রি-তে চিকিৎসা দেবে বলে। কিন্তু তারা রোগীর কাছ থেকে জোরপূর্বক মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এসব প্রতারণার মূলে রয়েছে গ্রম্নপটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিম। তবে অভিযানের পর থেকে তিনি পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের্ যাব-পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারক সাহেদ করিম বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে ছবি তুলতেন। এসব ছবি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গাতে ব্যবহার করে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ ও প্রতারণা করতেন। এছাড়াও তিনি হাসপাতালের স্টাফদের নিজের কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করতেন। এদিকে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, 'রিজেন্ট গ্রম্নপের চেয়ারম্যান সাহেদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে, বর্ডার যাতে ক্রস করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাহেদকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, অন্যথায় গ্রেপ্তার করা হবে। গত ৬ জুলাই (সোমবার) নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ ও করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া এবং রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রম্নপের দুটি হাসপাতালে অভিযান চালায়র্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেনর্ যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম। অভিযানে গিয়ে প্রতারণার সত্যতা মেলে, সেই সঙ্গে পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। পরদিন ৭ জুলাই (মঙ্গলবার) রিজেন্ট গ্রম্নপের মূল কার্যালয় এবং রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরের দুটি হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়া হয়। হাসপাতালটি প্রতারণা করে ১০ হাজারেরও বেশি করোনা পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়েছে। অভিযানের সময় রিজেন্ট হাসপাতালের পরিচালক ও ব্যবস্থাপকসহ আট জনকে আটক করেছের্ যাব। আটক কর্মীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শিবলীকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি সে হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদের সব ধরনের প্রতারণামূলক কাজের অন্যতম সহযোগী। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) ইমিগ্রেশন বিভাগকে চিঠি দিয়ে সাহেদ করিমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ। র?্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দিত রিজেন্ট হাসপাতাল। বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করলেও রিপোর্ট প্রতি সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আদায় করত এই প্রতিষ্ঠানটি। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে মোট ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিম।