ডিজিটাল পশুর হাটে ঝুঁকছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গরুর খামার -ফাইল ছবি
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সুপারিশ আমলে নিয়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কোরবানির পশুর হাট কমিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে পশু বেচাকেনার দিকে ঝুঁকছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে অস্থায়ী ১৩টি পশুর হাটের দরপত্র বাতিল করেছে সংস্থা দুটি। জনসমাগম এড়িয়ে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য ডিজিটাল হাট উদ্বোধন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। অস্থায়ী হাট কমে আসায় উত্তর সিটির আদলে ডিজিটাল হাটের চিন্তা করছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ১৪টি অস্থায়ী হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রথম দফায় তিনটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করে সংস্থাটি। রোববার এ সংক্রান্ত এক সভায় আরও দুটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করে ৮টি হাটের দরপত্র বাতিল করেছে। অপর একটি হাটের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ডিএসসিসি। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন যায়যায়দিনকে বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় ৫টি অস্থায়ী হাট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর বাইরে একটি ডিজিটাল পশুর হাট বসানোর প্রচেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আদলেই ডিএসসিসি একটি ডিজিটাল হাট বসবে বলে জানান তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশরনের সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ডিএনসিসি তিনটি অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা সম্পন্ন করেছে। দরপত্র বাতিল করেছে ৫টি হাটের। আরও তিনটি হাটের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শনিবার কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করে ডিএনসিসি। সরকারের আইসিটি বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন এবং বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় এ ডিজিটাল হাট পরিচালনা করবে ডিএনসিসি ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি ডিজিটাল গরুর হাট থেকে কেবল গরু কেনাই নয়, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাই করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে। এটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়েছে। এতে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। অনেক ভুলত্রম্নটি হতে পারে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই। যত্রতত্র গরু বেচাকেনা ও কোরবানি না করে অনলাইন মাধ্যমে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশু বেচাকেনা করা যাবে। এছাড়া আধুনিক উপায়ে পশু কোরবানিও দেওয়া যাবে। কোরবানিকৃত পশুর রক্ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও সুষ্ঠুভাবে করা যাবে। অনলাইনের মাধ্যমে পশু বেচাকেনা ও কোরবানি দেওয়া হলে পশুর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেগুলো আমরা ফেলে দিই, সেগুলো রপ্তানি করার জন্য সংরক্ষণ করা যাবে। চামড়া সংরক্ষণ করা আগের চেয়ে সহজ হবে। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ডিএনসিসির ডিজিটাল হাট থেকে প্রথম কোরবানির পশু ক্রয় করে অনলাইনে পশু বেচাকেনার উদ্বোধন করেন। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক কোরবানির জন্য গরু ক্রয় করেন। প্রসঙ্গত, প্রচলিত হাটে পশু কেনায় হাসিল দিতে হলেও এখানে কোনো হাসিল দিতে হবে না ক্রেতাদের। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল বাজারে এবার কোরবানির পশু ক্রয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরাসরি হাটে না গিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে এ ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। শহর অঞ্চল ছাড়াও গ্রামগঞ্জে একটি বা দুটি জায়গায় কোরবানির পশু বেচাকেনা করার জন্য নির্ধারণ না করে একটি ওয়ার্ডে বা ইউনিয়নে বিস্তৃৃত স্থানে আয়োজন করলে করোনা সংক্রমণের বিস্তাররোধে ভূমিকা রাখবে। এতে করে একদিকে যেমন পশু বেচাকেনার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না, অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য যেখানেই হাট বসানো হোক না কেন সেখানে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্বসহ সরকারের অন্যান্য নির্দেশনা মেনেই বসাতে হবে এবং এ লক্ষ্যে তার মন্ত্রণালয় একটি প্রাথমিক বৈঠক করেছে। এদিকে ডিজিটাল হাটের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও শিগগিরই এ পস্ন্যাটফরমের হাট চালু করতে যাচ্ছে ডিএসসিসি। এলাকাবাসীর কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করছে সংস্থাটি। তাছাড়া কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর বস্নক-ই, এফ, জির সেকশন ১ ও ২ নম্বর অস্থায়ী হাট বসাবে সংস্থাটি। প্রথমবার দরপত্র আহ্বান করা ১৪টি হাটের মধ্যে ৮টি হাটের ইজারা বাতিল করা হয়েছে।