সাহেদের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবও খুঁজছের্ যাব

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সাহেদ করিম
বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে শত কোটি টাকার ওপরে দেনা রয়েছেন রিজেন্ট সাহেদ। প্রতিদিনই পাওনাদাররার্ যাব সদরে গিয়ে একের পর এক অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু তার তিন অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে তার স্ত্রী সাদিয়া আরাবি রিম্মির ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলের্ যাবের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। যদিও মার্জিয়া নামে সাহেদের আরও এক স্ত্রী রয়েছে বলে রিমান্ডে থাকা আসামিরা দাবি করেছেন। সেই সূত্র ধরে মার্জিয়াকেও সন্ধান করা হচ্ছে। এদিকে ১০ দিন পার হতে চললেও সাহেদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনির্ যাব। ধারণা করা হচ্ছে, ধূর্ত সাহেদ সীমান্তবর্তী কোনো এলাকায় আত্মগোপন করে রয়েছে।র্ যাবের গোয়েন্দারা সে বিষয় মাথায় রেখেই গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছেন। র্ যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম যায়যায়দিনকে বলেন, প্রতিদিনই পাওনাদাররা আসছেন। সে হিসাবে দেখা গেছে, শত কোটি টাকার ওপরে সে মার্কেটে দেনা রয়েছে; কিন্তু তার তিনটি অ্যাকাউন্টে সে ধরনের কোনো টাকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক তার হিসাব জব্দ করেছে। তার স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টেরও সন্ধান করছে তদন্ত কর্মকর্তারা। র্ যাবের আইন গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিলস্নাহ জানান, সব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। আসা করা যাচ্ছে, দ্রম্নতইর্ যাব সাহেদকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে। সূত্রমতে, সাহেদের স্ত্রী রিম্মি রিজেন্ট গ্রম্নপের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি নিয়মিত অফিস করতেন না। তবে মার্জিয়া নামে আরেক নারী সাহেদের প্রথম স্ত্রী পরিচয়ে নিয়মিত অফিস করত। ঘটনার পর থেকে লাপাত্তা মার্জিয়া। তবে রিম্মি নিয়মিত মিডিয়ায় কথা বলছেন। এমন পরিস্থিতিতে রিম্মির ব্যাংক হিসাব সন্ধান করতের্ যাবের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরকে বলা হয়েছে। এরবিআর ইতোমধ্যে তদন্ত শেষ করেছে। তারা দুই একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে। বাংলাদেশ ফিনানসিয়াল ইন্টিলিজেন্স সেল সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে দুই-একদিনের মধ্যে তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশনা আসতে পারে। ওই নির্দেশনা আসা মাত্রই অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হবে এবং তাদের কর নথিতে থাকা আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখা হবে। জানা গেছে, বিটিভির সংবাদ পাঠিকা ছিলেন সাদিয়া আরাবি রিম্মি। তার মা শাহিদা আরাবি বিটিভির প্রডিউসার। ২০০৭ সালে প্রথম স্বামীকে ছেড়ে সাহেদকে বিয়ে করেন। তখন সাহেদ এমএলএম কোম্পানি চালাত। প্রচুর টাকাও উড়াতেন। অভিযোগ আছে, সেই লোভে পড়েই তিনি সাহেদকে বিয়ে করেন। সূত্রমতে, রাজধানীর বনানী ডিওএইচএসের ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসার নিচতলায় স্ত্রী সাদিয়া আরাবি রিম্মি ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া ৯০ হাজার টাকা। সাইরেন বাজানোর হুটার লাগানো গাড়িতে দেহরক্ষী নিয়ে চলতেন শাহেদের স্ত্রী। শাহেদের পাপের টাকায় তিনি ভোগ-বিলাসী দাম্ভিক জীবনযাপন করতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি দায় এড়াতে মিডিয়ার সামনে আসেন।র্ যাবের কর্মকর্তাদের দাবি, সাহেদের প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। আগে তাকে মামলার আসামি করা না হলেও তদন্ত শেষে তাকে আসামিও করা হতে পারে। সূত্রমতে, স্ত্রী ছাড়াও সাহেদ প্রতারণার টাকা রাখত তার দুই ডিএমডি বাড্ডা থানা যুবদলের সাবেক নেতা নাসির, গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির এক নেতার শ্যালক ইন্ডিয়ান বাবর কাছে। সাহেদের নামে মামলা হওয়ার পর থেকে তারাও লাপাত্তা। ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী ও দুই বন্ধুর মাধ্যমে সে টাকা পাচার করেছে। এসব বিষয় রেখেই তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। করোনা টেস্টের জাল সনদ সরবরাহ এবং টেস্ট ও চিকিৎসায় অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়র্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পরদিন ৭ জুলাই হাসপাতালটির উত্তরা শাখা এবং ৮ জুলাই মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়র্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের নানা অপকর্মের ভয়াবহ সব তথ্য। মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া সাহেদকে ভয়ঙ্কর প্রতারক উলেস্নখ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালে তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে পাওনাদারদের নিয়মিত নির্যাতনের অভিযোগও অঢেল। কেউ পাওনা টাকা চাইলে তাকে নানাভাবে হয়রানি ও অপদস্থ করতেন সাহেদ। এ পর্যন্ত তার নামে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৫৬টি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে।