টেস্টে অনীহা ওয়ারীবাসীর

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকির কারণে রাজধানীর ওয়ারীতে চলছে ২১ দিনের লকডাউন। তবে বিভিন্ন অজুহাতে মানুষ প্রবেশ ও বের হওয়ার চেষ্টা করছে। ছবিটি মঙ্গলবার তোলা -ফোকাস বাংলা
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের পর পরীক্ষামূলক লকডাউন করা হয়েছে ওয়ারীর কিছু এলাকা। লকডাউনের ১০ দিনে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে নমুনা দিয়েছেন ১৪৭ জন। যার মধ্যে পজিটিভ এসেছে ৬৬ জনের। তবে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে বেশ অনীহা রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। ব্যাপক হারে টেস্ট করানো গেলে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। লকডাউনের পর থেকে ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে মারা গেছেন ২ জন বয়স্ক মহিলা। রোববার ৬৪ বছর বয়সি রওশন আরা বেগম সেলিনা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মঙ্গলবার ৭৮ বছর বয়সি হালিমা খাতুন বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে তার নমুনা পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় স্থানীয় কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে লকডাউন বাস্তবায়ন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত ৪ জুলাই থেকে ডিএসসিসির ৪১ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। যা শেষ হবে আগামী ২৫ জুলাই। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কোরবানির গরু কেনাসহ আনুষঙ্গিক প্রয়োজন বিবেচনা করে লকডাউনের মেয়াদকাল কমানো হতে পারে। মঙ্গলবার ওয়ারীর বিভিন্ন রোডে কথা হয় স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে। তারা জানান, এলাকা লকডাউন করা হলেও অনেকেই নমুনা দিতে চাচ্ছেন না। তারা মনে করছেন, করোনা পজিটিভ এলে সামাজিকভাবে সম্মানের হানি হবে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলোর তত্ত্বাবধানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টেস্ট করাতে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এরই অংশ হিসাবে আজ বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা হবে বলে জানান তারা। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলো বলছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনা সংগ্রহের একদিনের মধ্যে রিপোর্ট গোপনীয়তার সঙ্গে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। নাগরিকদের সুস্থ থাকার জন্য প্রতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে টেস্ট করতে বলা হচ্ছে। তবে অনেকের উপসর্গ না থাকায় টেস্ট করতে আসছেন না। উপসর্গ থাকলেও কেউ কেউ গোপন করছেন। মঙ্গলবার সরেজমিনে ডিএসসিসির ৪১ ওয়ার্ডের লকডাউন এলকা ঘুরে দেখা গেছে, লারমিনি স্ট্রিটের টিপু সুলতান রোড, ওয়্যার স্ট্রিটের জাহাঙ্গীর রোড এবং হেয়ার স্ট্রিট,র্ যাংকিন স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিটের জয়কালী মন্দির থেকে বলদা গার্ডেন পর্যন্ত প্রত্যেকটি গলির মাথায় বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেরেবাংলা স্কুলের উল্টো পাশের গলিসহ দুটো গলিতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। জরুরি প্রয়োজনে নাগরিকরা এই দুটি পথ ব্যবহার করছেন। দুই জায়গাতেই ২৪ ঘণ্টায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ওয়্যার স্ট্রিটের জাহাঙ্গীর রোডে স্বেচ্ছাসেবক ছাড়া কোনো মানুষ দেখা যায়নি। বাসাবাড়িগুলোতেও সুনসান নীরবতা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ওষুধের দোকান আর সুপারশপ ছাড়া প্রায় সব দোকানপাটই বন্ধ। ওয়ারী এলাকার তিনটি সুপারশপ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা করা হচ্ছে। কেউ অর্ডার করলে বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে সুপারশপগুলো। তাছাড়া স্থানীয় কাউন্সিলর অফিস থেকে দুটি হটলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। সেখানে কল করেও নিজেদের প্রয়োজনের কথা বলছেন বাসিন্দারা। তবে প্রয়োজনের চেয়ে বাইরে যাওয়ার জন্যই হটলাইন নম্বরে বেশি কল আসে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বেচ্ছাসেবক মাহফুজুল হক পিন্টু জানান, হটলাইন নম্বরে প্রতিদিন শতাধিক কল আসে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কলগুলো খাতায় লিখে রেকর্ড করা হয়। সোমবার হটলাইনে কল করা ১৫ জন নাগরিকের বিভিন্ন প্রয়োজন পূরণ করা হয়েছে। মঙ্গবার দুপুর পর্যন্ত ৯ জনের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। তাছাড়া কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত ফোনেও নানা সমস্যার কথা জানাচ্ছেন অনেকেই। এর বাইরে নিম্নবিত্তদের চাহিদা অনুযায়ী চাল, ডাল, তেল, সবজিসহ বিনামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা গেছে, লকডাউনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার দুটি গেটসহ বিভিন্ন গলিতে প্রতিদিন দেড় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ১১ সদস্য, স্থানীয় ২০ গ্রাম পুলিশ ও ৫০ জন পুলিশ সদস্য নিয়মিত কাজ করছেন। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলো যায়যায়দিনকে বলেন, ওয়ারী একটি সুশৃঙ্খল এলাকা। এই এলাকা লকডাউন করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। মেয়র ফজলে নূর তাপস, স্থানীয় নাগরিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন। আশা করা যায়, দেশের অন্যান্য স্থানেও করোনার বিস্তার ঠেকাতে ওয়ারীর লকডাউনকে মডেল ধরে কাজ করতে পারবে সরকার।