কোরবানির পশু: শেষ হাসি বিক্রেতাদের

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীতে পশুর সংকট দেখা দিলে ঈদের আগের দিন সিরাজগঞ্জ থেকে গরু আনা হয় -ফাইল ছবি
ঈদুল আজহার আগে রাজধানীর পশুহাটগুলোতে শেষ মুহূর্তে দেখা দিয়েছিল কোরবানির পশু সংকট। দামও উঠেছিল চড়া। যে পশু আগের দিন ১ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেগুলো সোয়া লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে ঈদের আগের দিন। আকস্মিকভাবে হাটগুলোতে পশু সংকট দেখে কিছু ফড়িয়া দ্রম্নত হাটগুলোতে পশু জড়ো করার চেষ্টা করেন। ঈদের দিন ও পরেদিন সেগুলো বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফলে হাটের শুরু থেকেই এবার পশু বিক্রেতাদের মধ্যে যে হতাশা ভর করেছিল, শেষ দিকে তাদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে। হাটের ইজারাদার, পশু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার শুরু থেকেই পশুর দাম কম ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন হাটের সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেয়। যেখানে প্রতি বছর রাজধানীতে ৩০ থেকে ৪০টি পশুহাট বসে, এবার সেখানে মাত্র ১৬টি পশুহাট বসেছিল। এছাড়া ঈদের আগের দিনগুলোতে অবৈধ হাটের সংখ্যাও বেড়ে যায়। হাটগুলোতে জায়গা না পেয়ে অনেকে পশু নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরেও বিক্রি করেন। পশু ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন, এবার নগরবাসী অনেক কম পশু কোরবানি করবেন। যে কারণে তারা হাটগুলোতে পশু তুলেছিলেন বিগত বছরের তুলনায় অনেক কম। গাবতলী পশুহাটে যেখানে ৫-৭ লাখ পশু ওঠে, এবার সেই পরিমাণ পশু ওঠেনি। একই অবস্থা ছিল অন্যান্য হাটেও। ফলে রাজধানীর পশুহাটগুলোতে পশু উঠেছিল বিগত বছরগুলোর এক-চতুর্থাংশ। কিন্তু ঈদের দুদিন আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই পশুহাটগুলোতে ক্রেতার ঢল নামে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের আগেই প্রায় সকল পশু বিক্রি হয়ে যায়। অনেক জায়গায় দেখা যায় পশুশূন্য। শুক্রবার সকালে হাটগুলোতে পশু কিনতে গিয়ে অবাক হন অনেক ক্রেতা। যে দুয়েকটি পশু ছিল, সেগুলোর দাম হাঁকে অনেক বেশি। চড়াদাম দেখে অনেকেই পশু না কিনে ফিরে যান। এদিকে হাটে পশু সংকট আঁচ করে অনেক পশু ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানের খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাটে পশু আমদানির উদ্যোগ নেন। রাজধানী লাগোয়া জেলাগুলো থেকে বেশ কিছু পশু আমদানি করেন তারা। শুক্রবার বিকালেই হাটগুলোতে বেশ কিছু পশু জড়ো হয়ে যায়। ঈদের দিন ও ঈদের পর দিন ওইসব পশু বিক্রি হয়। গাবতলী হাটের ম্যানেজার সাখাওয়াত জানান, এমনিতেই এবার হাটে পশু কম উঠেছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরের পরই হাটে ক্রেতার ঢল নামে। মুহূর্তের মধ্যেই বিপুল সংখ্যক পশু বিক্রি হয়ে যায়। কিছু ব্যাপারী শুক্রবার সকালের মধ্যেই পশু এনে জড়ো করেন। এতে পশুর চাহিদা অনেকটাই পূরণ হয়। আফতাবনগর পশুহাটের ইজারাদার মো. রায়হান জানান, করোনার কারণে এবার পশু বিক্রি হয়েছে অনেক কম। অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে এবার করোনার কারণে অনেকেই পশু কোরবানি করবেন না। করোনার স্বাস্থ্যবিধির কারণে অনেকেই পশুহাটে যাবেন না। কিন্তু ঢাকা শহরের বিপুল সংখ্যক মানুষ পশু কোরবানি করেছেন। আগে যারা দু-তিনটি পশু কোরবানি করতেন, তারা হয়তো একটা কোরবানি দিয়েছেন। অনেকে গরুর পরিবর্তে খাসি কোরবানি করেছেন। অনেকে এককভাবে না দিয়ে কয়েকজন মিলে কোরবানি করেছেন। তিনি বলেন, এবার হাটের শুরু থেকেই এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল, যাতে খামারিদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। যে কারণে সাধারণ খামারিরা লোকসানের ভয়ে পশু হাটে তুলতে ভয় পেয়েছিল। এ জন্যই পশু সংকট দেখা দিয়েছিল। এতে করে খামারি ও ক্রেতা উভয়েরই ক্ষতি হয়েছে।