শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার মুক্তির সময়সীমা বাড়াতে ত্রিমুখী চেষ্টা

হাসান মোলস্না
  ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সময়সীমা বাড়াতে ত্রিমুখী চেষ্টা চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর সুযোগ চেয়ে আবেদন করা হবে। এছাড়া স্থায়ী জামিনের বিষয়ে দলের আইনজীবীরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। পাশাপাশি একই দাবিতে প্রয়োজনে দলীয়ভাবেও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি।

টানা ২৫ মাস কারাভোগের পর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান খালেদা জিয়া। সেই হিসেবে আগামী মাসে তার মুক্তির ৬ মাস পূরণ হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য পরিবারের আবেদনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল উন্নত চিকিৎসা। কিন্তু খালেদা জিয়া করোনার মধ্যে মুক্তি পাওয়ায় তার চিকিৎসার বিষয়ে এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। রাজধানীর গুলশানের বাসায় একান্ত পরিবেশেই চিকিৎসকের পরামর্শে দিন কাটছে তার। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার উদ্যোগ নিতে চায় তারা। কিন্তু মুক্তির সময়সীমা প্রায় শেষ হয়ে আসছে। তাই পরিবার ও নেতাকর্মীদের মধ্যে বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

৭৭ বছর বয়সি খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। মুক্তি পাওয়ার আগে তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু সেখানে তার কোনো সঠিক চিকিৎসা হয়নি বলে বিএনপির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা দ্রম্নত সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

মুক্তির সময়সীমা বাড়াতে পরিবারের ভাবনার বিষয়ে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, মুক্তির সময়সীমা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই আবেদন করা হবে। তবে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রোববার দলের স্থায়ী কমিটি ও আইনজীবী নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের বাসভবনে দেখা করেন। সেখানে মুক্তির সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে দলীয় ও আইনি তৎপরতা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে তার আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এম মাহাবুব উদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়ার বিশেষ শর্তে মুক্তির সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে। কারণ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ম্যাডামের যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই ওনার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দ্রম্নত সরকারের কাছে আবেদন করা হবে।

কবে নাগাদ আবেদন করা হতে পারে- জানতে চাইলে খোকন বলেন, আবেদন করার তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে আবেদন করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে খোকন বলেন, ওনার চিকিৎসা তো বাংলাদেশেই হবে। যদি বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তখন আশা করি সরকার বিবেচনা করবে। কারণ করোনা পরিস্থিতির কারণে বিএনপি প্রধান চিকিৎসা করতে পারছেন না, কোনো হাসপাতালেও যেতে পারছেন না। চিকিৎসকরা প্রতিদিন বাসায় এসে দেখছেন। কিন্তু ইমপ্রম্নভ করছে না। আরও জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এখন চিকিৎসা বা টেস্ট করার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে, কিন্তু হাসপাতাল ঝুঁকিপূর্ণ। ওনার যে বয়স সেজন্য আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

মুক্তির ৬ মাসের সময়সীমা প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে পরবর্তী কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। সময় এলে আলোচনা হবে। তবে খালেদা জিয়া এতই অসুস্থ যে, নিজের বাসার নিচে নামতে পারেন না, হাঁটতেও পারেন না। তার এখনো খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা, খেতেও সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন রকমভাবে। আসলে তার উন্নত চিকিৎসা যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে না। হাসপাতালেও যাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থাটা ভালো না।

একই বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতেই খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। তারাই তখন বিষয়টি মধ্যস্থতা করেছেন। এখন আবারও পরিবারের পক্ষ থেকেই সরকারের কাছে মুক্তির সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করা হবে। ওই নেতা জানান, বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়টি নিয়ে হইচই করার কিছু নেই। কারণ এর আগেও খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুর, লন্ডন এবং আমেরিকায় চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি না হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে নিয়েই চিকিৎসার কথা ভাবা হচ্ছে। আর যেহেতু তার বড় ছেলে তারেক রহমান লন্ডনে রয়েছেন, তাই খালেদা জিয়া যদি দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যেতে চান তবে সেখানে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

জানা গেছে, সরকারের কাছে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার প্রয়োজনীয় প্রামাণিক কাগজপত্রও চিকিৎসক টিমের কাছে চাওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই সেগুলো সংযুক্ত করে আবেদনপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। এছাড়া স্থায়ী জামিন চাওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। দলের এক আইনজীবী জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে এরই মধ্যে কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী দেখা করে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। খালেদা জিয়াকে তার বিরুদ্ধে থাকা ৩৭ মামলার সর্বশেষ অবস্থা অবহিত করা হয়েছে। খালেদা জিয়া এই ব্যাপারে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো না। হাতের আঙুলগুলোতে সমস্যা ছিল, হাতটা বাঁকা হয়ে গিয়েছিল। তারপর হাঁটুর রিপেস্নসমেন্ট বিদেশে হয়েছিল। হাসপাতালে থাকাকালে ব্যথা ছিল, এখন আরও বেড়ে গেছে। পায়ের হাঁটুর যে রিপেস্নসমেন্ট সেটা মেইনটেনেন্স করার কোনো ব্যবস্থা নেই, চেকআপও করার ব্যবস্থা নেই। হাতের আঙুলগুলো সার্বক্ষণিক ব্যথা করে। সবমিলে অসুস্থ খালেদা জিয়ার দ্রম্নত সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, টানা ২৫ মাস কারাভোগের পর গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। শর্ত ছিল, এই সময়ে তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, যেতে পারবেন না দেশের বাইরে। কিন্তু খালেদা জিয়া করোনার মধ্যে মুক্তি পাওয়ায় তার চিকিৎসার বিষয়ে এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগই নিতে পারেনি বিএনপি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107860 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1