শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার আড়ালে বিশ্বে বাড়ছে যক্ষ্ণা

বিশ্বের সবচেয়ে ছোঁয়াচে এবং হন্তারক এ রোগ প্রতি বছরই প্রায় ১৫ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত বিশ্বে থাবা বসাচ্ছে আরেক ভয়ংকর সংক্রামক রোগ যক্ষ্ণা। যে রোগ ছড়িয়ে আছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোঁয়াচে এবং হন্তারক এ রোগ প্রতিবছরই প্রায় ১৫ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্বকে যেভাবে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হচ্ছে, তাতে যক্ষ্ণা (টিবি) নির্ণয়, চিকিৎসা এবং এ রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা কম গুরুত্ব পাচ্ছে। যক্ষ্ণার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ঠিক করোনাভাইরাস ঠেকানোর মতোই প্রয়োজন কন্টাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন এবং অসুস্থদের জন্য কয়েক সপ্তাহ কিংবা মাসব্যাপী চিকিৎসা।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেওয়া লকডাউনে মানুষের চলাফেরা, ভ্রমণসহ ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার ফলেও যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে বেড়েই চলেছে টিবি সংক্রমণ। আগামী কয়েক বছরে যক্ষ্ণা রোগীর সংখ্যা উলেস্নখযোগ্য হারে বাড়বে বলে গবেষকরা আশঙ্কাও করছেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর টিবির সঙ্গে সঙ্গে এইচআইভি/এইডস, এমনকী ম্যালেরিয়ারও বিস্তার ঘটে চলেছে।

'কোভিড-১৯ আমাদের সব প্রচেষ্টা বিফল করে দেওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে; আমরা ২০ বছর আগে যেখানে ছিলাম সেখানেই আবার আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,' বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক ম্যালেরিয়া কর্মসূচির পরিচালক ড. পেদ্রো।

করোনাভাইরাস আতঙ্ক এবং ক্লিনিকগুলোতে রোগীর বাড়তি চাপের কারণে টিবি, এইচআইভি, ম্যালেরিয়ার বহু রোগীই চিকিৎসা পাচ্ছে না। তার ওপর বিমান এবং সমদ্রপথে পরিবহণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় উপদ্রম্নত এলাকাগুলোতে ওষুধ সরবরাহও অনেকটাই কমে এসেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এবার বিশ্বব্যাপী যক্ষ্ণা, এইচআইভি এবং ম্যালেরিয়া কর্মসূচির প্রায় ৮০ শতাংশ সেবাই বিঘ্নিত হয়েছে।

বিশ্বে যত যক্ষ্ণা রোগী আছে তার প্রায় ২৭ শতাংশই ভারতের। দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত যক্ষ্ণা রোগ শনাক্তকরণ কমেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। দেশটির বেশির ভাগ ক্লিনিকই এখন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে কেবল করোনাভাইরাস শনাক্তে।

এভাবে টিবির চেয়ে করোনাভাইরাসকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া 'জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় খুবই বোকামি হচ্ছে' বলে মনে করেন জাতিসংঘ পরিচালিত সংস্থা 'স্টপ টিবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. দিতিউ। তার মতে, দুটোকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে- ইন্দোনেশিয়ায় টিবি ডায়াগনোসিস কমেছে ৭০ শতাংশ, মোজাম্বিক এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫০ শতাংশ এবং চীনে ২০ শতাংশ। মেক্সিকোতে মে'র শেষ সপ্তাহে সরকারি হিসাবে যক্ষ্ণা রোগের ডায়াগনোসিস হয়েছে ২৬৩টি, গত বছর একই সপ্তাহে এ সংখ্যা ছিল ১০৯৭।

এভাবে যক্ষ্ণা রোগ শনাক্তকরণ কমতে থাকলে এর পরিণতি হতে পারে মারাত্মক। কারণ, করোনাভাইরাসের মতো যক্ষ্ণা রোগও সংক্রামক। এই রোগের জীবাণুও মানুষের সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়।

যক্ষ্ণায় আক্রান্ত ব্যক্তি একবছরেই আরও ১৫ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। এভাবে রোগীদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় যক্ষ্ণা রোগের সংক্রমণ একলাফে অনেক বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এমনিতেই যক্ষ্ণার প্রকোপ বেশি; করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির পর এখন সেসব এলাকায় রোগটি ছড়ানোর ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, মহামারির কারণে এখন যক্ষ্ণার রোগী ক্লিনিকেও কম যাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে বিশ্বের অন্তত ১২১টি দেশের ক্লিনিকে টিবি রোগী কমেছে।

এই ধারা চলতে থাকলে বিশ্বের মারাত্মক এই রোগটির বিরুদ্ধে এ যাবৎ কষ্টকর যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তা করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক বছর, এমনকী কয়েক দশক পিছিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তাদের এক মূল্যায়নে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে তিন মাসের লকডাউন এবং পরের ১০ মাসে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা হলে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৩ লাখ নতুন যক্ষ্ণারোগী যুক্ত হবে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃতু্যও হতে পারে ১৪ লাখ মানুষের, আশঙ্কা তাদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107863 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1