নদী দখল নিয়ে আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

নদী দখল ফৌজদারি অপরাধ, নদী দখলকারী ব্যক্তিকে নির্বাচন এবং ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় সংশোধন করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এই তিনটি বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাকে আদালতের অভিমত হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে। তবে কোনো নদী, জলাশয়ের জায়গা বিক্রি করা যাবে না বা লিজ দেয়া যাবে না বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। নদী নিয়ে ঘোষিত রায়ে আদালত বলেছে, আইন প্রণয়ন করার সম্পূর্ণ এখতিয়ার জাতীয় সংসদের। আদালত সংসদকে আইন করতে নির্দেশ দিতে পারে না। তবে কোনো আইন সংবিধান পরিপন্থি হলে তা বাতিল করতে পারে। কোনো আইন সংশোধনের জন্য আদালত মতামত দিতে পারে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ থেকে তুরাগ তীরের অবৈধ দখল ও নদী ভরাট বন্ধে সম্প্রতি প্রকাশিত রায়ে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রকাশিত রায়ে আরও বলা হয়, কোনো জরিপের সময় প্রথমেই সিএস ম্যাপে জরিপ (সার্ভে) করতে হবে। পরে আরএস ম্যাপে জরিপ করতে হবে। গাজীপুরের তুরাগ নদীর তীরের অবৈধ দখল ও নদী ভরাট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রিট আবেদন করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। এ রিট আবেদনে একই বছরের ৯ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করে। পরবর্তীতে তুরাগ দখল করা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়। এই তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় একই বছরের ১ জুলাই। রায়ে নদী দখলকারীকে দেশের ইউনিয়ন, জেলা ও উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। রায়ে দেশের কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাবারও অযোগ্য ঘোষণাসহ ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে ছয় মাসের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে দেশের সব নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে তুরাগ তীর থেকে নিশাত জুট মিলসসহ দখলকারীদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে নিশাত জুট মিলস কর্তৃপক্ষ। তাদের আপিল নিষ্পত্তি করে গত ১৭ ফেব্রম্নয়ারি রায় দেয় আপিল বিভাগ। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।