বদলে যাচ্ছে প্রাথমিক স্কুলের বিতর্কিত নাম

প্রকাশ | ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

নূর মোহাম্মদ
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের একটি স্কুলের নাম ছিল 'চোরের ভিটা' সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটির এমন নামে এলাকাবাসী বিব্রতবোধ করেন। কোথাও গেলে ছাত্রদের স্কুলের নাম জিজ্ঞেস করলে বলতে চান না, লজ্জাবোধ করেন। এরপর এলাকাবাসী উদ্যোগ নেয় স্কুলটির নাম পরিবর্তনের। স্থানীয় শিক্ষা অফিস ও প্রশাসনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নাম পরিবর্তনের আবেদন করছেন। গত মঙ্গলবার স্কুলটি 'আলোর ভুবন' নাম প্রস্তাব করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম। এ ব্যাপারে ডিসি বলেন, গ্রামের নামেই সাধারণত বেশিরভাগ সরকারি স্কুলগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে কারণেই হয়তো এটিও হয়ে গেছে। গ্রামের এমন নাম কেনইবা রাখা হলো এটি আসলে বোধগম্য নয়। এলাকাবাসীর উদ্যোগে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন স্কুলের নাম 'চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়'। এ স্কুলটি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। জুরাছড়ি রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। জুরাছড়ি, কুসুমছড়ি এবং লুলাংছড়ি নামের ৩টি মৌজা নিয়ে গঠিত। স্থানীয়দের ভাষ্য, যক্ষা মহাজনের প্রপিতামহ এলাকাবাসীর সহযোগিতার মাধ্যমে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন। এলাকাবাসী তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরস্পর সহযোগিতা বা পরস্পর ঐচ্ছিক দান ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে বিদ্যালয়টির নাম রাখা হয় চুমাচুমি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখন অনেকেই চুমাচুমি নাম নিয়ে হাসাহাসি করে। এতে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিব্রত হন। স্থানীয়রা কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও নাম পরিবর্তনে বেশিদূর এগুতে পারেনি। শুধু এ তিনটি নয়, সারাদেশে এ রকম শ্রম্নতিমধুরহীন প্রচুর নাম রয়েছে। যা পরিবর্তন করতে চাইলেও নানা জটিলতায় সম্ভব হয় না। এছাড়াও নাম পরিবর্তনের নীতিমালা অনুসরণ করতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, অধিদপ্তরের অনুমোদন মিলে না। এবার নাম পরিবর্তনে সেই সুযোগ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার অধিদপ্তর থেকে সারাদেশের জেলায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেসব স্কুলের নাম শ্রম্নতিমধুরহীন সেসব প্রাথমিক স্কুলের নাম পরিবর্তিত নাম কী হবে তা প্রস্তাব আকারে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ডিপিইতে পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) খালেদ আহমেদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম আছে যা সুশোভন নয় এবং ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব স্কুলের নাম পরিবর্তন করে দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শোভনীয় নামকরণের প্রস্তাব যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে অত্র অধিদপ্তরে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, নেত্রকোনা চোরের ভিটা স্কুলের নামটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার নজরে আসে। এরপর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে স্কুলটি নামকরণ কীভাবে হয়েছে তা জানতে চায়। তিনি বলেন, গ্রামের নামকরণ অনুসারে হয়েছে বলে জানান। ওই শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, এলাকাবাসীও স্কুলটির নাম পরিবর্তন করতে চান। সব শুনে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠাতে বলি। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে নীলফামারিতে মানুষমরা নামে একটি স্কুলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ধরনের প্রচুর নাম আছে যা বিব্রতকর। এগুলো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবে শুধু শ্রম্নতিমধুরহীন নাম রয়েছে এরকম নাম পরিবর্তন হবে। সেজন্য প্রাথমিক স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সুপারিশ, উপজেলা, জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। এ সুযোগে অনেকেই কোনো ব্যক্তি বা অন্য কারও নামে স্কুল পরিবর্তনের আবেদন করবেন, সেগুলো আমলে নেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনের জন্য বিদ্যমান যে নীতিমালা আছে সেগুলো অনুসরণ করতে হবে। বড় পরিসরে দেশের ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বিতর্কিত ও উদ্ভট নামধারী স্কুলগুলোর নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জানা গেছে, তারপরও প্রতি বছর বেশ কিছু স্কুলের নাম পরিবর্তন হয়। চলতি বছর হবিগঞ্জের সদর উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে যাদবপুর ওয়াদ উলস্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়। এর আগে ফেব্রম্নয়ারি মাসেও নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার একটি ও চাঁদপুরের একটি বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়।