সিফাতের মুক্তির দাবিতে করা মানববন্ধনে পুলিশের লাঠিপেটা

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

বামনা (বরগুনা) সংবাদদাতা
কক্সবাজারে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সহপাঠীরা বরগুনার বামনা উপজেলায় তার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ ব্যানার-মাইক ছিনিয়ে লাঠিপেটা করে তা পন্ড করে দেয় -যাযাদি
স্ট্যামফার্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাহেদুল ইসলাম সিফাতের নিজ বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলায় তার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শুরু করে তার সহপাঠীরা। এ সময় পুলিশ এসে মানববন্ধনের ব্যানার ও মাইক ছিনিয়ে নেয় এবং লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ৪ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- শিক্ষার্থী মো. রুবেল, ইমরান, রায়হান ও মিথুন। শনিবার (৮ আগস্ট) দুপুর ১২টায় উপজেলার কলেজ রোডে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী পুলিশের লাঠিচার্জে আহত মো. রুবেল বলেন, 'আমরা আমাদের বন্ধুর মুক্তির জন্য মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে ছিলাম। এর আগে আমরা মানববন্ধনের জন্য পুলিশকে জানালে তারা আমাদের মানববন্ধন করতে দেয়নি। সারা বামনাতে টহল বসিয়ে আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আজ যখন শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শুরু করেছি তখন প্রথমে পুলিশ এসে আমাদের ব্যানার নিয়ে যায়। পরে ওসি ইলিয়াস এসে আমাদের উপর লাঠিচার্জ করেন।' শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পুলিশ এভাবে অহেতুক লাঠিচার্জ করতে পারে আমরা জীবনে প্রথম দেখি। ওসি মানববন্ধনে থাকা শিক্ষার্থী ও সিফাতের নানা এনায়েত কবির হাওলাদারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে যেটা মোটেও কাম্য নয়। সিফাতের নানা এনায়েত কবির হাওলাদার বলেন, পুলিশের আজকের ভূমিকা খুবই দুঃখজনক। আমি এখন আমার নাতিকে নিয়ে সংশয়ে আছি। এ ব্যাপারে বামনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াস আলী তালুকদার বলেন, আমাদের অনুমতি না নিয়ে কতিপয় দুষ্কৃতকারী সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি মানববন্ধনটি বন্ধ করে দেই। গত ৩১ জুলাই রাত ৯টায় টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। পরে পুলিশ সিনহার সফরসঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে মাদক ও পুলিশের দিকে অস্ত্র তাক করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। পরে টেকনাফের নীলিমা কটেজ থেকে সিনহার আরও দুই সফরসঙ্গী শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নূরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদের মধ্যে নূরকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। সিফাত-শিপ্রার জীবননাশের শঙ্কা এদিকে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গে থেকে গ্রেপ্তার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থী ও চলচ্চিত্রকর্মী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথের জীবননাশের আশঙ্কা করছেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তারা দুই শিক্ষার্থীকে দ্রম্নত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই দুই শিক্ষার্থীর মুক্তিসহ চার দফা দাবিতে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়টির রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে একদল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফিল্ম ও মিডিয়া স্টাডিজ এবং স্ট্যামফোর্ড ফিল্ম স্টুডেন্ট সিনে ফোরামের উদ্যাগে এই কর্মসূচি পালিত হয়। চার দফা দাবি তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র সানাউল কবীর সিদ্দিকী। ওই দুই শিক্ষার্থীর মুক্তি ছাড়াও অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, ওই দুই শিক্ষার্থীকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি, দুই শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে সামাজিকভাবে নিরাপত্তা প্রদান। তারা মুক্তি পেয়ে বাসায় না ফেরা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় মানববন্ধন থেকে। মানববন্ধনে উপস্থিত একজন ছাত্র বললেন, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যার ঘটনায় সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী হলেন সিফাত। এ জন্য জীবননাশের আশঙ্কা বেশি করছেন তারা। গত ৩১ জুলাই রাতে মেজর (অব.) সিনহা ও সাহেদুল টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর তলস্নাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাহেদুলকে। তিনি ও শিপ্রা দেবনাথ দুটি আলাদা মামলায় এখন কারাগারে।