আট জেলায় সড়কে ঝরল ২১ প্রাণ

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে শনিবার ভোরে নৈশকোচের ধাক্কায় বিধ্বস্ত আলমসাধু (শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যান) -যাযাদি
সড়কে মৃতু্যর মিছিলে যুক্ত হয়েছে আরও ২১ জনের নাম। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের ৮ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় এসব মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বাস সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৭ জন, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে নৈশকোচের ধাক্কায় ৬ জন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে শিশুসহ দুজন এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ধামরাই, খুলনা ডুমুরিয়ায়, রংপুর কাউনিয়ায়, বগুড়া শেরপুরে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় একজন করে নিহত হয়েছেন। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর : মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়নসিংহের মুক্তাগাছায় শনিবার বিকাল ৩টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনসহ ৭ জন নিহত হয়েছেন। ময়মনসিংহ-জামালপুর মহাসড়কে মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন ইউনিয়নে (মানকোন বোর্ড ঘর) এলাকায় জামালুপুরগামী রাজিব পরিবহণ (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৮৩০৪) এবং বিপরীতমুখী সিএনজির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে এ মৃতু্যর ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মধুপুর উপজেলার সোলাকুড়ি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আ. মজিদের ছেলে নূর ইসলাম (৩০), তার স্ত্রী তাছলিমা (২৬) এবং ১০ বছরের শিশুকন্যা লিজা, মুক্তাগাছার ইসাখালির নজরুল ইসলাম (৩৫), মুক্তাগাছা শ্রীরামবাড়ীর সিএনজি ড্রাইভার আলাদুল। বাকি ২ জনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। জানা যায়, শনিবার আনুমানিক বিকাল ৩টার দিকে জামালপুরগামী রাজিব পরিবহণের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা সিএনজি মুখোমুখি হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপস্নব কুমার বিশ্বাস বলেন লাশ শনাক্তকরণের চেষ্টা চলছে। স্টাফ রিপোর্টার, চুয়াডাঙ্গা জানান, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে নৈশকোচের ধাক্কায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। শনিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার ভোরে রয়েল এক্সপ্রেসের একটি নৈশকোচ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যথাক্রমে একটি পাখিভ্যান, আলমসাধু (শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যান) ও একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই ৩ জন মারা যান। আহত হন আরও ৯ জন। পরে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিলে সেখানে মারা যান আরও ৩ জন। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার তিতুদহের তাহাজ্জত হোসেনের ছেলে সোহাগ আলী (২৫), একই গ্রামের রহিম মলিস্নকের ছেলে শরিফ উদ্দিন (৩০), পিত্তর আলীর ছেলে রাজু আহমেদ (৪৫), হায়দার আলীর ছেলে কালু (৪০) খাড়াগোদার মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে মিলনে হোসেন (৪০), শ্রী নিতায়ের ছেলে শ্রী ষষ্ঠী (৪২)। আহত হন, সরোগঞ্জ বাজারের বজলুর ছেলে বাবলু (৪৫), তিতুদহ গ্রামের মরহুম তৈয়ব আলীর ছেলে আলমগীর (২৭) ও একই গ্রামের জুড়ন মন্ডলের ছেলে বেল্টু (৩০) ও মোহাম্মদ জুম্মা গ্রামের খোদা বক্সের ছেলে আকাশ (২৫)। এর মধ্যে গুরুতর আহত বাবলুকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কান্তি দাস বলেন, রয়েল এক্সপ্রেসের ঢাকা মেট্রো ব ১৫-২১৬১ যাত্রীবাহী পরিবহণের চালক যে দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাতে ৬ জন মারা গেছে। রয়েল পরিবহণের চালক ও গাড়িটি আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। আটক চালক আশাদুল আলম (৫৮) চুয়াডাঙ্গা ফার্ম পাড়ার মৃত আব্দুল ওহাবের ছেলে। জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার নিহতদের পরিবার প্রতি ২০ হাজার ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে পিকআপভ্যান ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ সড়কের বাস্তা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মিতরা ইউনিয়নের আইরমাড়া গ্রামের আছালত খানের ছেলে আশরাফ খান (৫০) ও মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরতলা গ্রামের আব্দুল জলিলের শিশুপুত্র আব্দুলস্নাহ (৮)। পারিবারিক ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল জলিল তার স্ত্রী ও ছেলে আব্দুলস্নাহকে নিয়ে মাগুরা থেকে পিকআপযোগে সাভারের ব্যাংক টাউনের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। আর আশরাফ খান সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেলে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মিতরা ইউনিয়নের আইরমাড়া গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। বাস্তা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পিকআপভ্যান ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় পিকআপভ্যানটি সড়ক থেকে ছিটকে পাশের খাদে পড়ে শিশু আব্দুলস্নাহ নিখোঁজ হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনার দেড় ঘণ্টা পর শিশু আব্দুলস্নাহকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত আশরাফ খানকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। থানার ওসি আবুল কালাম জানান, দুর্ঘটনায় নিহত দুজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ধামরাই সংবাদদাতা জানান, ঢাকার ধামরাইয়ে অজ্ঞাতনামা পরিবহণের ধাক্কায় আলাউদ্দিন (৩২) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে ধামরাইয়ের কসমস এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে মোটরসাইকেল আরোহীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়। ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, সড়কে লাশটি পড়ে ছিল, সেটির কাছাকাছি দূরত্বে পড়ে ছিল মোটরসাইকেলটি। তবে দুর্ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় কেউ জানাতে পারেনি কী ধরনের যানবাহন ধাক্কা দিয়েছে। ধামরাই থানার পুলিশ জানায়, আলাউদ্দিন মোটরসাইকেলে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিলেন। শনিবার সকাল ১০টার দিকে ধামরাইয়ের কসমস এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে দ্রম্নতগামী একটি যানবাহন তাকে ধাক্কা দেয়। যানবাহনের ধাক্কায় রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এদিকে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার শনির আখড়ায় পারভেজ (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দিনগত রাত ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কে এম আজিজুল হক জানান, রাতে শনির আখড়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান পারভেজ। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার সকালে হাসপাতালে এসে নিহত যুবকের পরিচয় শনাক্ত করেন ছোট ভাই সাব্বির আহমেদ। এক ছেলে ও স্ত্রীসহ পরিবার নিয়ে কাজলা ব্রিজ স্কুল গলির আমিরের বাড়িতে থাকতেন পারভেজ। এটিই তাদের স্থায়ী ঠিকানা। তার বাবার নাম হাসান। আজিজুল হক আরও জানান, পারভেজ পিকআপভ্যান চালতেন। কিছুদিন হলো তিনি মোটরসাইকেলে করে যাত্রী আনা-নেওয়া করছিলেন। শুক্রবার রাতে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে শনির আখড়ার বাসায় ফিরছিলেন। ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, খুলনার ডুমুরিয়ায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে ঈমান আলী (৭০) নামে এক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে টিপনা মাদ্রাসা নামকস্থানে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ডুমুরিয়া দমকল বাহিনীর সদস্যরা নিহতের লাশ উদ্ধার করেন এবং ঘাতক ট্রাকটি হাইওয়ে পুলিশ জব্ধ করে। জানা যায়, সাতক্ষীরা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী একটি মালবাহী ট্রাক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীতগামী একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে চালক অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ঈমান আলী ঘটনাস্থলে নিহত হন। তিনি উপজেলার শোলগাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা। কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, রংপুরের কাউনিয়ায় মিনি ট্রাকের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে বেলাল হোসেন (১১) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। শনিবার দুপুরে দিকে উপজেলার কুরশা ইউনিয়নে নব্দীগঞ্জ টেপামধুপুর সড়কের উত্তর বাহাগিলী কেওরা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুটি উত্তর বাহাগিলী কেওরা গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে ও স্থানীয় হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। কাউনিয়া থানার এসআই সেলিম রেজা জানান, দুপুর ২টার দিকে শিশুটি বাড়ি থেকে বাইসাইকেলে স্থানীয় বাজারে যাচ্ছিল। এ সময় টেপামধুপুরগামী গরুবোঝাই একটি মিনি ট্রাক তাকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। ফলে শিশুটি ট্রাকের চাকার নিচে পিষ্ঠ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে ঘাতক গাড়িটি আটক করে। স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া জানান, শুক্রবার রাতে বগুড়া-শেরপুর মহাসড়কে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বাসের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে দিলীপ চন্দ্র রায় (৩৫) নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক এনজিও কর্মী নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর পরেই বাসটি দ্রম্নত পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, দিলীপ সিরাজগঞ্জে একটি একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) কাজ করতেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে। ছুটি কাটিয়ে তিনি মোটরসাইকেলে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে শেরপুর মহিলা কলেজের সামনে ঢাকাগামী একটি বাস তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃতু্য হয়। পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সাজু মিয়া (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রুটি গ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাজু মিয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের মরহুম তারা মিয়ার ছেলে। তিনি তার পরিবার-পরিজন নিয়ে রুটি গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতেন। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় সাজু মিয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটি মোটরাসাইকেল ধাক্কা দিলে তিনি আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রসুল আহমেদ নিজামী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।