মাস্ক পরাতে এবার মোবাইল কোর্ট

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাস মহামারি সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সব জায়গায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার গত ২১ জুলাই বিশেষ নির্দেশনা জারি করলেও বেশিরভাগ মানুষ তা মেনে চলছে না। বরং সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে মাস্ক ব্যবহার আরও কমেছে। অথচ দেশে করোনার সংক্রমণ এখনো ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকার এবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ কথা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভায় অংশ নেন। সচিবালয় প্রান্ত থেকে ছয়জন মন্ত্রী ওই বৈঠকে সংযুক্ত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এর মধ্যে দেখা গেছে অনেক মানুষের মধ্যে সচেতনতা কিছুটা কমে গেছে। সেটা আরও বাড়াতে হবে। ওয়ান অব দ্য প্রিভেন্টিং আসপেক্ট অব করোনা হ্যান্ডেলিং হলো এর একটি প্রিভেন্টিভ অ্যাকশনে থাকা। তিনি বলেন, 'এগুলো ক্যাম্পেইনে নিয়ে আসা ও যথাসম্ভব যদি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট করা যায়। এগুলো নিয়ে কালও সচিব কমিটিতে আলাপ-আলোচনা করে ডিরেক্টিভ দিয়ে দিয়েছি এবং মাঠ প্রশাসনকেও বলে দিয়েছি, ইনফোর্সমেন্টেও যেতে হবে।' মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও এ-সংক্রান্ত খবর প্রচার করে তথ্য মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। 'বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয়কে আরও ম্যাসিভ প্রচারের জন্য বলা হয়েছে। ফিজিক্যালি মাঠে গিয়ে মাইক দিয়ে, বিলবোর্ড দিয়ে- যাতে মানুষ আর একটু সতর্ক হয়। কারণ, মানুষ যদি প্রটেকশনে না যায়, তাহলে... এর মেইন অ্যাসপেক্ট হলো কমিউনিটি...। সে ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। রেডিও, টেলিভিশন সব জায়গায় প্রচার, তথ্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। সচিব কমিটির মিটিংয়ে খুব স্ট্রংলি রিকমেন্ড করেছি।' ভ্রাম্যমাণ আদালত কেন পরিচালনা করা হবে, সচেতন করার জন্য না মানুষ যে মানছে না, সেটার জন্য- প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুটিই হবে। একেবারে ম্যাসিভ কোনো ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট করার ক্ষেত্রে যদি পানিশমেন্ট দেওয়া হয়, এই জিনিসটা প্রচার করার জন্য, যে আজ মাস্ক না পরার জন্য বা সেফটি মেজর না নেওয়ার জন্য এতগুলো লোককে বাসে বা বাজারে বা লঞ্চে পানিশমেন্ট দেওয়া হয়েছে। মাস্ক পকেটে থাকে, কিন্তু মানুষ পরে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা নিয়ে আজ আলোচনা হয়নি। করোনা সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ গত ২১ জুলাই রাস্তার হকার থেকে শুরু করে গণপরিবহণ ও অফিস-আদালতে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করে। পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অফিসে আগত সেবাগ্রহীতারা বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ সব স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে আগত সেবাগ্রহীতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। শপিংমল, বিপণিবিতান ও দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতারা আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মার্কেট ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। হাটবাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। মাস্ক পরিধান ব্যতীত ক্রেতা-বিক্রেতারা কোনো পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবে না। স্থানীয় প্রশাসন ও হাটবাজার কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। গণপরিবহণের (সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথ) চালক, চালকের সহকারী ও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহণে ওঠার আগে যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মালিক সমিতি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিসহ সব শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মালিকরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। অন্যদিকে হকার, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ সব পথচারীর মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করবেন। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য, সরকারি এই নির্দেশনা জারির পর উলেস্নখিত সবখানেই মাস্ক ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে কমেছে। অথচ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা কেউই এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করেনি। ফলে গোটা বিষয়টি সাধারণ মানুষের মর্জির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অথচ মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধের কার্যকর উপায় হিসেবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বরাবর কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক পরিধান করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন।