কমেছে জিডিপি, বেড়েছে মাথাপিছু আয়

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাথাপিছু গড় আয় হয়েছে দুই হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরলে বার্ষিক আয় এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৪০ টাকা। এক্ষেত্রে গড়ে প্রত্যেকের মাসিক আয় ১৪ হাজার ৬২০ টাকা

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (ডিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমলেও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ডিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বিপরীতে মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৪০ টাকা। মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও মাথাপিছু আয়ের নয় মাসের সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে। বিদায়ী অর্থবছরের মার্চ মাসের হিসাবে এমনই চিত্র উঠে এসেছে। করোনাভাইরাস মহামারিকালের এই কঠিন সময়ে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে খুবই আনন্দের এবং আশাব্যঞ্জক বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। মহামারির সময়ে উচ্চাভিলাষী এই প্রবৃদ্ধি ধরার জন্য বাজেট ঘোষণার পর পরই অর্থনীতিবিদরা সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। করোনার কারণে তা কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে মহামারির মধ্যেও কৃষিতে উৎপাদন ভালো হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স খুবই ভালো ছিল। মহামারির মধ্যে রেকর্ডের পর রেকর্ড হওয়ায় এই সফলতা এসেছে। নয় তো আরও খারাপ হতো বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাথাপিছু গড় আয় হয়েছে দুই হাজার ৬৪ ডলার। অর্থাৎ প্রতি ডলার সমান ৮৫ টাকা ধরলে বার্ষিক আয় এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৪০ টাকা। এক্ষেত্রে গড়ে প্রত্যেকের মাসিক আয় ১৪ হাজার ৬২০ টাকা। আগের অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৯০৯ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১৫৫ ডলার আয় বেড়েছে। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ। মোট জনসংখ্যার ৮ কোটি ২৪ লাখ পুরুষ এবং নারী ৮ কোটি ২২ লাখ। এরা সবাই এখন ১৪ হাজার ৬২০ টাকা করে মাসিক আয় করেন। এর আগের বছরে প্রত্যেকের মাসিক আয় ছিল ১৩ হাজার ৫২২ টাকা। অর্থাৎ করোনাকালেও এক বছরের ব্যবধানে মাসিক আয় বেড়েছে এক হাজার ৯৭ টাকা ৯৭ পয়সা। বিবিএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্থিরমূল্যে জিডিপির আকার ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। সেবাখাত থেকে এসেছে ৫৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। শিল্পখাত থেকে এসেছে ৩১ দশমিক ১৩ শতাংশ। টাকার অংকে এর পরিমাণ ৮ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। কৃষিখাত থেকে এসেছে ১৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। বিবিএস বলছে, করোনা ভাইরাস সংকটে প্রবৃদ্ধি কমলেও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৯০৯ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৭৫১ ডলার। এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল এবং মাথাপিছু আয় হয়েছিল এক হাজার ৬১০ ডলার। করোনা সংকটের কারণে হঠাৎ করেই জিডিপিতে ধাক্কা লেগেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, গত অর্থবছরের এক-তৃতীয়াংশ সময় আমরা কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ছিলাম। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে চলতে হয়েছে আমাদের। মার্চ থেকে জুন এই চার মাস প্রায় সব কিছুই বন্ধ ছিল। তারপরও ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো বলে তিনি মনে করেন। তিনি এজন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই দেশের মানুষ আবারও প্রমাণ করল, যত ঝড়-ঝাপটাই আসুক না কেন, তারা তাদের অন্তর্নিহিত শক্তি দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখবেই। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বলেছিল, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। কিন্তু সেটা ভুল প্রমাণ করে একটা সম্মানজনক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তার ধারণা, পৃথিবীর অনেক বড় বড় দেশ এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। মহামারির ধাক্কায় বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হওয়ার কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অনেক কম হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ। দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগও (সিপিডি) বলেছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না। সরকারও লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করেছিল। গত ৮ জুন প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের গেস্নাবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আরও কমে ১ শতাংশে আসতে পারে। গত ৩ জুন প্রকাশিত আইএমএফের কান্ট্রি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব হবে মারাত্মক। আর এর প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিল।