করোনাভাইরাস

বিশ্বজুড়ে সবার চোখ টিকার দিকে

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাসের টিকা তৈরিতে এখনো পূর্ণ সফলতা পায়নি বিশ্ব। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে -সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা নিয়ে হইচইয়ের শেষ নেই। চলমান মহামারি থেকে মুক্তি পেতে সবাই তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে আছে ভ্যাকসিনের দিকে। সবার ধারণা, একটি টিকাই তাদের মুক্তি দিতে পারে দুঃসহ করোনাভাইরাসের যন্ত্রণা থেকে। যদিও পরীক্ষাধীন কোনো টিকা এখন পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি। তবুও এর আগাম ফরমাশ ৫৭০ কোটি ডোজ পার হয়ে গেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর পরীক্ষাগারে থাকা কোভিড-১৯-এর টিকার প্রথম চালানের সব কটি ডোজই নিজেদের ঘরে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী, তিনটি পশ্চিমা ও দুটি চীনা টিকা নিয়ে ইতিমধ্যে কার্যকারিতা পরীক্ষা তৃতীয় ধাপে হাজারো মানুষের ওপর পরীক্ষা চলছে। এরই মধ্যে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন মঙ্গলবার তার দেশের হয়ে করোনাভাইরাসের টিকার অনুমোদন দেওয়ার কথা জানালেন। এর নামকরণ করা হয়েছে সোভিয়েত কৃত্রিম উপগ্রহের নামে। রাশিয়ায় অনুমোদন পাওয়া করোনার টিকাটির নাম 'স্পুটনিক-৫'। রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, টিকাটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি মানবদেহে প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে পেরেছে। টিকাটি উদ্ভাবন করেছে রুশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সহযোগিতা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে টিকা তৈরির জোর প্রচেষ্টা চলছে। কে সবার আগে টিকা বাজারে আনতে পারবে, তার প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে গেছে। টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ সাহায্য করছে বিভিন্ন দেশের সরকার। সবার লক্ষ্য, আগামী বছরের শুরুতে বা এ বছর শেষ হওয়ার আগেই টিকা হাতে থাকতে হবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সুইডিশ-ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রম্নপ অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে মিলে একটি টিকা তৈরিতে কাজ করছে। তারা আগামী সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ টিকার ফলাফল জানার আশা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান মডার্না ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের (এনআইএইচ) সঙ্গে যৌথভাবে যে টিকা তৈরি করছে, তা এ বছরের মধ্যেই বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। তাদের টিকা আনার সম্ভাব্য সময় আগামী নভেম্বর মাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রম্নত টিকা আনার জন্য 'অপারেশনর্ যাপ স্পিড' নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এর আওতায় সব মার্কিন নাগরিকের জন্য কোভিড-১৯-এর টিকা উৎপাদন ও বিতরণ কাজ আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্রম্নত টিকা পেতে কয়েকশ' \হকোটি মার্কিন ডলার টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে খরচ করছে দেশটি। এর মধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসন আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার পাচ্ছে। অন্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। তারা আশা করছে, শিগগিরই হয়তো করোনাভাইরাসের টিকা আনা সম্ভব হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই করোনার টিকা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকতে পারে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ৩ নভেম্বরের আগেই টিকা হাতে থাকা সম্ভব। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, করোনার টিকা আসার সময় নিয়ে হোয়াইট হাউসের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে পূর্বাভাস দিয়েছেন, ট্রাম্প এর চেয়েও বেশি আশার কথা শুনিয়েছেন। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৯৪০ কোটি মার্কিন ডলার সাতটি টিকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৭০ কোটি ডোজ টিকা পেতে চুক্তিও করা হয়ে গেছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসন, মডার্না, অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা, নোভাভ্যক্স, ফাইজার ও বায়োএনটেক, সানোফি ও জিএসকে, মের্ক শার্প ও ডোম। যুক্তরাষ্ট্রের মতো টিকা পেতে মরিয়া ইউরোপ। তারাও বিনিয়োগে পিছিয়ে নেই। টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সানোফি-জিএসকের সঙ্গে চুক্তি সই করার পাশাপাশি আগাম আলোচনা করে রেখেছে ইউরোপিয়ান কমিশন। তারাও ৭০ কোটি ডোজ টিকা আগে পেতে চায়। ব্রেক্সিটের কারণে আলাদা থাকা ব্রিটেন আলাদা করে ২৫ কোটি ডোজের জন্য চারটি টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে আগাম ফরমাশ দিয়ে রেখেছে। জাপানের পক্ষ থেকে ৪৯ কোটি ডোজ টিকা পেতে তিনটি টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্সের কাছে ২৫ কোটি ডোজ টিকার ফরমাশ দিয়েছে দেশটি। জাপানের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি তেকদা জাপানের জন্য টিকা তৈরিকে নোভাভ্যাক্সের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে টিকা তৈরি করবে। ব্রাজিলেও জাপানের মতো মডেল গ্রহণ করা হয়েছে। তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা নিচ্ছে। এছাড়া চীনের সিনোভ্যাকের কাছ থেকে ১২ কোটি ডোজ টিকা তৈরির সহযোগী হচ্ছে। সিনোভ্যাকের টিকাটি ব্রাজিলে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। চীনা টিকা প্রস্তুতকারক সিনোভ্যাক ও সিনোফার্মের দুটি টিকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চলছে। তবে তারা মাত্র কয়েকটি আন্তর্জাতিক অংশীদারের নাম ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে একটি ব্রাজিল ও অন্যটি ইন্দোনেশিয়া। রাশিয়া ঘোষণা করেছে, ২০টি দেশ তাদের তৈরি 'স্পুটনিক-৫' টিকাটি পেতে ১০০ কোটি ডোজের আগাম ফরমাশ দিয়েছে। বিদেশি সহযোগীদের নিয়ে এক বছরে তারা পাঁচটি দেশে ৫০ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করতে সক্ষম হবে। ২০১৭ সালে নরওয়ে গৃহীত কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই), ভারত, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ও ওয়েলকাম ট্রাস্ট মিলে ভবিষ্যৎ টিকার সমবণ্টন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যৌথভাবে তারা বিশ্বের কয়েক ডজন উন্নয়নশীল দেশের জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছে ৩০ কোটি ডোজ টিকার আগাম ফরমাশ দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও অন্যান্য দেশের জন্য কয়েকশ' কোটি ডোজ টিকা তৈরি করবে। নোভাভ্যাক্স ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে পৃথকভাবে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর জন্য টিকা ছাড়তে শর্তসাপেক্ষে পৃথক চুক্তি করেছে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় টিকাগুলো কার্যকর প্রমাণিত হলেই তবে তা বাজারে ছাড়া হবে।