শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সিনহা হত্যা মামলা

জোর করে মামলা করানোর অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

তানভীর হাসান, ঢাকা ও আরাফাত সানী, কক্সবাজার
  ১৩ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামির পরিবারের সদস্যকে দিয়ে জোর করিয়ে অপহরণ মামলা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে টেকনাফ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার যে তিন আসামিকে (আয়াছ, নুরুল এবং নাজিমুদ্দিন)র্ যাব গ্রেপ্তার করে তাদের স্বজনরা এ অভিযোগ করেন। এরা সবাই আবার পুলিশের মামলার সাক্ষীও। ওই মামলারও তদন্ত করছের্ যাব। মঙ্গলবার ভোরে দায়ের করা মামলায় বাদী করা হয়েছে নুরুল আমিনের মা খালেদা বেগমকে। আসামির তালিকায় রয়েছে অজ্ঞাতরা।

এদিকে, আজ ৩ আসামিকের্ যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা হলেন- পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী এবং সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো মো. আয়াছ, নুরুল আমিন এবং নাজিমুদ্দিন। বুধবার এদের প্রত্যেকেরই সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে কক্সবাজারের আদালত। এছাড়া মামলার অপর আসামি সাফানুর, কামাল, মামুন এবং লিটন মিয়াকে এর আগে দুই দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গতকাল তাদেরও ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তবে এখনই টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ লিয়াকত আলী এবং এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ ৭ পুলিশ সদস্যকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

র্

যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিলস্নাহ যায়যায়দিনকে জানান, মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় মঙ্গলবার গ্রেপ্তার ৩ জনকে আজ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া রিমান্ডে থাকা অপর আসামিদেরও পরিকল্পনা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিপ্রা দেবনাথ ও সিফাতের জবানবন্দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে,র্ যাবের হাতে গ্রেপ্তার আয়াছ, নুরুল এবং নাজিমুদ্দিনের বাড়িতে সোমবার গভীর রাতে যায় পুলিশ। পরিবারের সদস্যরা এ সময় দরজা খুলতে না চাইলে তাদের বাধ্য করা হয়। এদের মধ্যে একজনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার মতো গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাজিমুদ্দিনের স্ত্রী শাহেদা বেগম বলেন, "সোমবার রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ দরজা ভেঙে আমার ঘরে ঢুকে। আমাকে পুলিশ জানায়, 'আপনার স্বামীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আপনাকে আমাদের সঙ্গে থানায় গিয়ে স্যারদের কাছে ঘটনাটি বলতে হবে।' তখন পুলিশকে বলে দিই যে, আমি থানায় যাব না। এরপর আমার কাছ থেকে সাদা কাগজে একটি সই নেওয়া হয়।"

আয়াছের ভাই মোবারক বলেন, "রাত ৩টার পর পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে দরজায় সজোরে ধাক্কা দিতে থাকে। দরজা খোলার পর পুলিশ আমার ভাবিকে বলেন, 'তোমার স্বামী আয়াছকে অপহরণ করা হয়েছে। চলো, তোমাকে থানায় যেতে হবে। স্বামীকে ফেরত পেতে চাইলে থানায় মামলা করতে হবে।' তখন ভাবি বলেন, 'আমি এখন থানায় যাব না। সকালে যাব।' এরপর ভাবির কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়ে পুলিশ চলে যায়।"

পরে ভোররাতে নূরুল আমিনের মা খালেদা বেগমকে টেকনাফ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। খালেদা বলেন, "থানায় নিয়ে পুলিশ আমাকে বলে, 'তোর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। তুই যদি তোর ছেলেকে ফেরত চাস তাহলে সাদা কাগজে সই দে। না হলে তোর ছেলের মরা মুখ দেখবি।' আমি সই দিতে পারি না জানালে পুলিশ জানায়, 'টিপসই দিয়ে যা।' পরে দুটি টিপসই নিয়ে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিশ।" এদিকে ওই টিপসইয়ে একটি অপহরণ মামলা নেয় পুলিশ।

পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন এর আগে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, হত্যকান্ডটি তিনি নিজের চোখে দেখেননি। ঘটনাটি তিনি শোনেনওনি। পুলিশ তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই সাক্ষী বানিয়েছে। অথচ এর আগে পুলিশের সঙ্গে তার কোনো আলাপই হয়নি। মো. আয়াছও তখন বলেছিলেন, 'আমি স্বেচ্ছায় সাক্ষী হইনি। আমি সেদিন চেকপোস্টেই যাইনি।'

জানা গেছে, সোমবার বিকালে এই দুই সাক্ষীসহ অপর সাক্ষী নাজিমুদ্দিনের বাসায় যায়র্ যাব।র্ যাব এই তিনজনকে তাদের হেফাজতে নেওয়ার পর মঙ্গলবার সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে উপস্থাপন করে। এর আগে সোমবার মধ্যরাতে ওই তিনজনের বাড়িতে গিয়ে তান্ডব চালায় টেকনাফ থানা পুলিশ। আয়াছ, নুরুল এবং নাজিমুদ্দিনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার দেখায়র্ যাব।

অপরদিকে, টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ লিয়াকত আলী এবং এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতের ৭ দিনের রিমান্ড আরও অগেই মঞ্জুর করেছে আদালত। তবে তিনজনকে এখনই রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে না। আজ যাদের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে তাদের রিমান্ড শেষ হলে এই তিনজনকের্ যাব হেফাজতে নিয়ে রিমান্ড কার্যকর করা হবে।

চার পুলিশ ও তিন সাক্ষীর ৭ দিনের রিমান্ড

এদিকে, কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় চার পুলিশ সদস্যসহ সাতজনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ এ আদেশ দেন।

এই সাতজন হলেন- উপপরিদর্শক (এসআই) লিটন, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুলস্নাহ আল মামুন এবং সিনহা হত্যা মামলায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়ার নুরুল আমিন, নাজিমুদ্দিন ও আয়াছ।

এর আগে চার পুলিশ সদস্যকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছিল আদালত। সেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল দ্বিতীয় দফায় তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করের্ যাব। আদালত এই চার পুলিশ সদস্যকে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেয়। গত ৩ জুলাই সিনহার সঙ্গে শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাসকিন কক্সবাজার যান ভ্রমণবিষয়ক ভিডিওচিত্র ধারণ করতে। গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তলস্নাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দুজনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত।

উলেস্নখ্য, ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন ও নিরাপত্তা বিভাগ। একইভাবে তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলিসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনার পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন মেজর সিনহার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলাটির শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে তা 'ট্রিট ফর এফায়ার' হিসেবে আমলে নিতে টেকনাফ থানাকে আদেশ দেয় আদালতের বিচারক। আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় মামলাটি রুজু হয়। দন্ডবিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা নং সিআর: ৯৪/২০২০ইং/টেকনাফ। এই মামলায় ৭ জন আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তিন দফা শুনানি শেষে তাদের সবাইকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আসামিরা হচ্ছেন- টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, গুলি নিক্ষেপকারী ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুলস্নাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া। মামলার অপর দুই আসামি এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোস্তফা নামে জেলায় কোনো পুলিশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<108656 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1