ভ্যাট ফাঁকি রোধে বসছে ইএফডি

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

আহমেদ তোফায়েল
ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন ও ফাঁকি রোধে চলতি আগস্টের ২৫ তারিখ থেকেই ইএফডি (ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস) মেশিন বসানো হবে। প্রাথমিকভাবে পাইলট হিসেবে এক লাখ মেশিন দিয়ে শুরু করা হবে। এরপর প্রকল্পটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে এটি সম্প্রসারণ করা হবে। ইএফডি হচ্ছে, একটি কম্পিউটারাইজড যন্ত্র। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পণ্য বেচাকেনায় দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এটি ব্যবহার করা হয়। রাজস্ব বিভাগ এটির মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন বা কেনাবেচায় সরাসরি নজর রাখতে পারে। ফলে ভ্যাট ফাঁকি অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গত ১৬ ফেব্রম্নয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই মেশিন বসানোর কথা ছিল। যন্ত্রটি ইতিমধ্যে দেশে চলেও এসেছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সফটওয়্যার সন্নিবেশিত করার জন্য চীনা প্রকৌশলীরা করোনাভাইরাসের কারণে আসতে না পারায় ভ্যাট মেশিন চালু করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০০টি দোকানে ইএফডি বসানো হবে। পাইলট প্রকল্পটির ফলাফলের মূল্যায়ন করার পরে সারাদেশে ডিভাইসটি বসানো হবে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে। এনবিআর জানিয়েছে, অর্থনীতিতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিরূপ প্রভাব এবং প্রাদুর্ভাবকালে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ও মন্দার কারণে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বিবেচনা করে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে ডিভাইস সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, কাগজের পেমেন্ট ঝুঁকিপূর্ণ বলে তারা ইএফডি তথা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির দিকে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে এটা সারাদেশে বাড়ানো হবে। ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে নতুন অর্থবছর থেকেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন চালু করার কথা জানিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর। ইএফডি ব্যবহার করলে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আসবে এবং ভ্যাট ফাঁকি অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, এতদিন ধরে যথাযথ ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) মেশিন ব্যবহার হতো। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত এই ইএফডি মূলত ইসিআরের উন্নত সংস্করণ। ২০০৮ সালে ১১টি খাতে ইসিআর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছিল সরকার। তবে যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে সেই কার্যক্রম তেমন সফলতা পায়নি ভোক্তাদের অনেকের অভিযোগ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের রিসিট দিতে চায় না। অভিযোগ রয়েছে যে, হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া আরও কেউই এই যন্ত্র ব্যবহার করেন না। আবার যারা ব্যবহার করেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। মিরপুরের বাসিন্দা আলী আকবরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার যেসব প্রতিষ্ঠানে ইসিআর বাধ্যতামূলক করেছে, তেমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কেনাকাটা করলেও তার কোনো বিল ইসিআরে কাটা হয়নি। দেশের অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্য ও সেবা খাত থেকে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট আদায়ের কথা থাকলেও ইসিআরের মাধ্যমে সে অনুযায়ী ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন এনবিআরের এক কর্মকর্তা। তবে ইএফডি মেশিনে, ভ্যাট ফাঁকি বা ব্যবসায়ীদের হয়রানির তেমন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। কেননা এই যন্ত্রটি এনবিআরের সার্ভারের সরাসরি যুক্ত থাকায় প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনকার বিক্রয়ের তথ্য সরাসরি এনবিআরের সার্ভারে চলে আসবে। এ কারণে একবার ইএফডিতে একবার ইনপুট দেওয়া হলে সেই তথ্য গোপন করার কোনো সুযোগ নেই। ইসিআর মেশিন অফলাইন হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীদের তথ্য আড়াল করার সুযোগ থাকে। আবার যেসব ব্যবসায়ী এনবিআরের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ইসিআর ব্যবহার করেন না। তাদের অনেক ফিচার অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে ভ্যাট আদায়ে ইসিআরের তুলনায় ইএফডি মেশিন বেশি কার্যকর বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া ভোক্তারাও চাইলে মোবাইল অ্যাপে কিউআর কোডের মাধ্যমে এই ভ্যাটের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। যেসব প্রতিষ্ঠানে ইএফডি ব্যবহার হবে : ভ্যাট আইনানুযায়ী, বাংলাদেশে যেসব ব্যবসায়ীর বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি; অর্থাৎ যারা ভ্যাটের আওতাধীন হবে, তাদের অবশ্যই এই ইএফডি ব্যবহার করতে হবে। যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইসিআর চালু রয়েছে সেগুলোর সবকটি ইএফডি এর আওতায় আসবে। এদিকে, নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে এ যন্ত্রটি ব্যবহারের বিষয়ে ব্যবসায়ীরাও তাদের সম্মতির কথা জানিয়েছেন। যেসব প্রতিষ্ঠানে এ মেশিন ব্যবহার করা হবে তাহলো- রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড, মিষ্টান্নভান্ডার, আবাসিক হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত শপিং সেন্টারের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, পোশাক বিক্রির কেন্দ্র ও বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্র, আসবাবপত্রের বিক্রয় কেন্দ্র, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও জেনারেল স্টোর, সুপার শপ, বড় ও মাঝারি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং স্বর্ণ ও রূপার প্রতিষ্ঠান। যেসব ব্যবসা কেন্দ্রে ইসিআর ও পিওএস মেশিন ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো তুলে দিয়ে চলতি মাসেই ইএফডি মেশিন প্রতিস্থাপন করা হবে। নতুন এই যন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে এনবিআর।