বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর আর নেই

প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মুর্তজা বশীর
করোনায় সংক্রমিত হয়ে বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর মারা গেছেন (ইন্না লিলস্নাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী মুর্তজা বশীরের মৃতু্যতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিল্পীর মেয়ে মুনিরা বশীর জানিয়েছেন, মুর্তজা বশীর অনেক দিন ধরেই হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল শুক্রবার তার করোনা পরীক্ষা করা হলে ফলাফল পজিটিভ আসে। শুক্রবার থেকে তার পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, মুর্তজা বশীরের মৃতু্য দেশের শিল্প ও সংস্কৃতি জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার সৃষ্টি ও কর্ম তরুণ প্রজন্মের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রপতি মুর্তজা বশীরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেন, দেশের চিত্রকলার বিকাশে মুর্তজা বশীর যে অনন্য অবদান রেখেছেন তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রখ্যাত ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুলস্নাহর ছেলে মুর্তজা বশীরের জন্ম ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট। বাংলাদেশের শিল্পকলার পরিসরে মুর্তজা বশীর ছিলেন অপরিহার্য ও অন্যতম উলেস্নখযোগ্য এক নাম। দৃশ্য শিল্পের বিভিন্ন শাখায় যেমন বিচরণ করেছেন তিনি, তেমনি সৃজনকলার অন্য দুটি মাধ্যম সাহিত্য ও চলচ্চিত্রেও রেখেছেন সৃজনশীল-প্রতিভার স্বাক্ষর। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর সদ্য বিকাশমান এই অঞ্চলের দ্বিধাগ্রস্ত শিল্পকলাকে যারা পর্যাপ্ত আস্থা ও উপাদান জুগিয়েছেন, তিনি অবশ্যই তাদের মধ্যে অন্যতম। শুধু তা-ই নয়, মুর্তজা বশীর একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাষাসংগ্রামী, গবেষক ও ঔপন্যাসিক। তার গল্প, উপন্যাস, এমনকি তার কবিতাও মূলত আত্মজৈবনিক। মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের পর রক্তাক্ত আবুল বরকতকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, মুর্তজা বশীরও তাদের মধ্যে ছিলেন। চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক পান মুর্তজা বশীর। একই কাজে স্বাধীনতা পুরস্কার পান ২০১৯ সালে। কর্মজীবনে তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশে বিমূর্ত ধারার চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ মুর্তজা বশীরের 'দেয়াল', 'শহীদ শিরোনাম', 'পাখা', 'রক্তাক্ত ২১ শে' শিরোনামের চিত্রকর্মগুলো বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। পেইন্টিং ছাড়াও মু্যরাল, ছাপচিত্রসহ চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া লিখেছেন বই এবং গবেষণা করেছেন মুদ্রা ও শিলালিপি নিয়েও। বেশ কিছু উলেস্নখযোগ্য দেয়ালচিত্র করেছেন মুর্তজা বশীর।