ঢাকা- ৫ ও ১৮ আসনে উপনির্বাচন

কে পাচ্ছেন এবার নৌকার টিকিট

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
ঢাকা-৫ ও ১৮ আসনের সাংসদ হাবিবুর রহমান মোলস্না ও সাহারা খাতুনের মৃতু্যর পর শুরু হয়ে গেছে উপনির্বাচনের ডামাডোল। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ফরম বিক্রি। ফরম কেনার পাশাপাশি নৌকার টিকিট পেতে দলের হাইকমান্ডে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এই দুই আসনে মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন হাইকমান্ডের সঙ্গে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর। খুব শিগগিরই দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা আহ্বান করা হতে পারে। যেখানে এই দুই আসন ছাড়াও আরও তিনটি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যয়ের একটি সূত্র। নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি মাসের শেষ দিকে এই আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এর অনেক আগে থেকেই প্রার্থিতা জানান দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনুসারীরা। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম চলে আসায় হতাশ হয়ে পড়েন তৃণমূল নেতারা। ঢাকা-১৮ :রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার এই আসনটিতে উত্তরার মতো অভিজাত এলাকার পাশাপাশি তুরাগ, খিলক্ষেত, আশকোনা, উত্তরখান ও দক্ষিণখানের মতো অনুন্নত এলাকাও রয়েছে। এর আগের সংসদ নির্বাচনগুলোতে এ আসন থেকে স্থানীয় কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার নজির নেই। স্থানীয়দের মধ্য থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি নেতাকর্মীদের। এবারে উপনির্বাচন ঘিরে এ দাবি আরও জোরালো হয়েছে। দলের বাইরে থেকে নতুন কাউকে এনে মনোনয়ন দেওয়া হলে বেঁকে বসতে পারেন নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ। তবে এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে তৃণমূল নেতাদের ভেতরে কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বও শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও যদি দলের মনোনয়ন না পান তাহলে দলের জন্য এত কাজ করে কি লাভ!  নেতারা রাজনীতি করে আসছেন একটা স্বপ্ন নিয়ে, যে ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি হবেন। কিন্তু দল থেকে যদি ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দেওয়া হলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা আশাহত হবেন। এমন চলতে থাকলে দিন দিন সংগঠন দুর্বল হয়ে যাবে। তৃণমূল নেতাদের ভাষ্য, ঢাকা-১৮ গুলশান বা ধানমন্ডির মতো আভিজাত এলাকা না। এখানে উত্তরার মতো গোছানো এলাকার পাশাপশি বড় ভোটব্যাংক রয়েছে দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, খিলক্ষেতের মতো অনুন্নত এলাকায়। যেখানে এখনো গ্রামীণ আবহ আছে। স্থানীয় কাউকে মনোনয়ন দেওয়া না হলে এসব এলাকার ভোট পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। অন্যদিকে ব্যাবসায়ী প্রার্থীরা বলছেন, পেশায় ব্যাবসায়ী হলেও সব সময়ই দলের পাশে ছিলেন তারা। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন থেকে শুরু করে মানুষের জন্য সব সময়ই কাজ করেছেন। তাদের এসব কার্যক্রমের বেশি প্রচার-প্রচারণা না থকলেও দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত আছেন। তাই ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং ব্যবসায়ী নেতারা রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়। এ আসনে এখন পর্যন্ত স্থানীয় কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার স্থানীয় নেতাদের থেকে মনোনয়ন চান তৃণমূল নেতারা। মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সময়কার বিশেষ সহকারী ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মাহমুদ চৌধুরী কুমার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আসলাম উদ্দিন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান। ব্যবাসায়ীদের মধ্যে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী খসরু মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারীরা দুজনকে ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে তারা উভয়ই প্রার্থিতার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। এর বাইরে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারের পোস্টার, ফেস্টুনও দেখা যাচ্ছে। প্রার্থিতার বিষয়ে আলাপকালে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান জানান, এবার আমরা চাই এ আসনে রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হোক। যদি দলের কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলেও তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করবেন। কিন্তু দলের বাইরে থেকে কোনো ব্যবসায়ী মনোনয়ন দেওয়া হলে তা হবে দুঃখজনক। খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের জন্য কাজ করেছেন। দলের দুঃসময়েও অনেক সম্মুখে থেকে লড়াই করেছেন। এলাকার সমস্যাগুলো তার জানা আছে। সে আলোকে কাজ করতে পারবেন। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে নেতাকর্মীদের নিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেন। এদিকে, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমই) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মন্তব্য পাওয়া না গেলেও তার অনুসারীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাহারা খাতুনের মৃতু্যতে শোক প্রকাশ করে প্রত্যেক এলাকায় ফেস্টুন লাগিয়েছেন। মাঠে রয়েছেন আরেক ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী খসরু। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খসরু। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতিতে গরির দুস্থদের মাঝে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করছেন। এছাড়া কেসি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এ আসনে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। খসরু চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরের মধ্যে এ আসনটি অনেক অনুন্নত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারায় এ আসনকে একটি আধুনিক উন্নত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা নিয়ে দলের মনোনয়ন চাইব। আমরা আশা করি দল এ আসনে যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে। তিনি আরও বলেন, এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আমাকে সরকারি সহায়তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। আলস্নাহ নিজ উদ্যোগেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার সামর্থ্য দিয়েছেন। ঢাকা-১৮ আসনের প্রবীণ রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন প্রায় ১২ বছর এমপি ছিলেন। গত ৯ জুলাই থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ঢাকা-৫ :গত ৬ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেন ঢাকা-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আলহাজ হাবিবুর রহমান মোলস্না। তার মৃতু্যর পর পরই নানা কৌশলে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দেন স্থানীয় অনেক নেতা। যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু এরই মধ্যে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র বলছে, কাজী মনিরুল ইসলাম মনু দীর্ঘদিন ধরে যাত্রাবাড়ী আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো কারণে তাকে মনোনয়ন দেওয়া না হলে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মুন্না অথবা প্রয়াত সাংসদ হাবিবুর রহমান মোলস্নার বড় ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোলস্নাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তাছাড়া এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের (প্রস্তাবিত) সিনিয়র সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান ও আওয়মী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মেহেরুন মস্তোফা দিশি। এর বাইরে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাসদের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলামও এই আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী।