ঢাকা- ৫ ও ১৮ আসনে উপনির্বাচন

বিএনপির সাত নেতার তৎপরতা শুরু

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনা পরিস্থিতি ও বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগ্রহ কমেছে বিএনপির হাইকমান্ডের। তবে স্থানীয়দের নেতাদের চাপে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দলটি। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ প্রবেশমুখের দুটি আসন ৫ ও ১৮ নির্বাচনে অংশ নিতে এরই মধ্যে ৭ নেতা তৎপরতা শুরু করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিকুল নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ কম বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের। এজন্য উপনির্বাচনে অংশ না নেওয়ারও একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত ছিল। তবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, ঢাকার দুটি আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে স্থানীয় আধিপত্য ধরে রাখার লড়াইয়ে থাকা নেতারা হাইকমান্ডকে নির্বাচনে নিতে চাপ দিয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের আগ্রহ ও সাংগঠনিক ভিতের বিষয়টি বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনে অংশ নিতে দুটি আসনে ৭ জন নেতার আগ্রহ প্রকাশ্যে এসেছে। মনোনয়নের জন্য লড়াইয়ে থাকলেও একটি বিষয়ে প্রায় সবাই একমত। তা হচ্ছে, নিজেদের অনুসারীদের চাপ ও স্থানীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করেই নির্বাচনে যেতে আগ্রহ আছে তাদের। বর্তমান নির্বাচনী পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে আসনটি বিএনপির হবে এমন বিষয় চিন্তাও করেন না তারা। ঢাকা-৫ : যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও কদমতলী থানার আংশিক নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার আলোচনায় আছেন ৩ নেতা। তারা হলেন সাবেক সাংসদ সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার এবং এ আসন থেকে সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নবীউলস্নাহ নবী। বিগত সময়ে ঢাকা-৫ আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনে নির্বাচনে লড়েন সালাহউদ্দিন আহমেদ। সে নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনী মাঠে অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়ার সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির। দলীয় এ সিদ্ধান্ত ঢাকায় অন্য কোনো প্রার্থী আমলে না নিলেও ব্যতিক্রম ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ। নির্বাচনী অনিয়মের বিরুদ্ধে শরীরের রক্ত ঝরানোর পাশাপাশি জ্ঞান থাকা পর্যন্ত প্রতিবাদ করে গেছেন। তার লড়াকু এই মনোভাব হাইকমান্ড থেকে শুরু দলের প্রতিটি নেতাকর্মী পছন্দ করেছে। দেশের সব বিএনপির প্রার্থী যদি তার মতো প্রতিবাদ করত তাহলে ফল অন্য রকম হতে পারত বলেও দলের অনেক নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। নির্বাচনী মাঠে তার মতো সাহসী নেতাকেই দরকার বলেও সম্প্রতি সময়ে দলের সর্বস্তরে আলোচনা হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অনেক নেতা আসন্ন উপনির্বাচনে ঢাকা-৫ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাই দলের প্রয়োজনে হাইকমান্ড চাইলে ৫ আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে আপত্তি করবেন না সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপরও কোনো কারণে সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রার্থী না হলে আলোচনায় থাকা অন্য দুই নেতার একজনকে দল মনোনয়ন দিতে পারে। অথবা হেভিওয়েট কোনো নেতা যদি আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে আসতে পারে ব্যতিক্রম সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনের দিন পুরো জাতি দেখেছে, কারচুপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা আমাকে ও আমার ছেলে তানভীর আহমেদ রবিনকে গুরুতর আহত করার পরও জ্ঞান থাকা পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লড়াই করেছি। ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সফল এমপি হিসেবে স্থানীয় নেতাকর্মী, সমর্থক, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসন্ন উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে দলের হাইকমান্ড যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করতে প্রস্তুত। ঢাকা-১৮ : নগরীর একেবারে উত্তরে অবস্থিত ঢাকা-১৮ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মো. বাহাউদ্দিন সাদী এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। কিন্তু পরে দল সিদ্ধান্ত নেয় জোট শরিক ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম দল জেএসডিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার। সঙ্গত কারণে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জেএসডির নেতা শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু আসন্ন উপনির্বাচনে তার অংশ নেওয়ার তেমন আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে। ফলে বিএনপির ৪ নেতা এ আসনে ধানের শীষের টিকিট পেতে নিজেদের মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গত নির্বাচনে দলের চিঠি পাওয়া দুই নেতার বাইরে আলোচনায় থাকা অন্য দুজন হচ্ছেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ। আগ্রহীদের মধ্যে ৪ নেতার মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন বৃহত্তর উত্তরা থানা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। বর্তমান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি এ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এফ রহমান হলের ভিপি ছিলেন। দুইবার উত্তরের ১নং ওয়ার্ড থেকে বিএনপির সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সেগুন বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন করা বৃথা। এটি এরই মধ্যে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করার ইচ্ছা না থাকলেও নেতাকর্মীদের চাপে মাঠে নেমেছেন। মূলত অনুসারীদের চাপ, স্থানীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ও সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার উদ্দেশ্যে এ নির্বাচনে যেতে বিএনপি নেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এদিকে ঢাকা ১৮ আসনে ক্ষমতাসীন দল ব্যবসায়ী নেতাদের মনোনয়ন দেবে এমন আলোচনা সর্বত্র। আর বিএনপির এই আসনে রাজনৈতিক তেমন কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী না থাকায় দুই ব্যবসায়ী বিএনপি নেতার নামও সামনে এসেছে। তারা হচ্ছেন- এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ ও বাহাউদ্দিন সাদী। এই দুই ব্যবসায়ী নেতা স্থানীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি চাঙ্গা রাখায় এই দুজনের যেকোনো একজনই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেতে পারেন এমন আলোচনাই বেশি। ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে সফল এই দুই নেতার অনুসারীরা এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। এ বিষয়ে এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, 'উত্তরায় আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা। ৩২ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। শতাধিক মামলার আসামি হয়েছি। দলের জন্য আগামীদিনেও সমানভাবে কাজ করে যেতে চাই। ঢাকা-১৮ আসনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিজয় উপহার দিতে আমি সক্ষম হব।' নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন বলে জানান কফিল উদ্দিন। সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী বাহাউদ্দিন সাদী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ সংকটকালীন মুহূর্তে নির্বাচনে যাওয়ার থেকেও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। আমরা সেই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে আপাতত প্রচার বন্ধ রেখেছি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে অনন্য ভূমিকা এবং প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ায় সাদী ধানের শীষের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন এমনই মনে করেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বেশির ভাগ নেতাকর্মী। এই তিন নেতার বাইরে আলোচনায় থাকাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকার কারণে যুবদলের এ নেতা এ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন এমন আলোচনাই এতদিন ছিল সর্বত্র। তবে ২০১৭ সাল থেকে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে নিজ দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং গত সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার একাধিক লিখিত অভিযোগ এবার তার মনোনয়নের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ঢাকার দুটি আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ওপর চলমান স্থগিতাদেশ আরও একমাস বাড়ানো হয়েছে। এরপরও এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার ব্যাপারে দ্রম্নত সিদ্ধান্ত হবে।