ভারতের এক ঘোষণাতেই দেশের বাজার অস্থির

পেঁয়াজ একলাফে ১০০ টাকা

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

আহমেদ তোফায়েল
ভারতের রপ্তানি বন্ধ করার এক ঘোষণাতেই রাতারাতি অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের পেঁয়াজের বাজার। মাত্র একদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে একলাফে প্রায় ৩৫ টাকা দাম বেড়ে কেজি ১০০ টাকায় ঠেকেছে। গত সোমবার পেঁয়াজ রপ্তানি আনুষ্ঠানিকভাবেই বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। গত সোমবার দিনভর দেশের তিনটি প্রধান স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আসেনি। ভারত থেকে মূলত সাতক্ষীরার ভোমরা, দিনাজপুরের হিলি ও যশোরের বেনাপোল দিয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়। বাংলাদেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয় তার ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। ভারতে দুই সপ্তাহ আগে দাম বাড়তে থাকে। সঙ্গে বাংলাদেশেও দাম বেড়ে যায়। এদিকে ভারতের বিষয়টি আগ থেকে আঁচ করতে পেরে ব্যবসায়ীরা আগ থেকেই পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। যদিও কিছুদিন আগে পেঁয়াজের ওপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার তা নাকচ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে বাজারে তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। খুচরা বাজারে গতকাল মঙ্গলবার দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। অথচ সোমবারও দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ভারতের ঘোষণার পর পাইকারি বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। সোমবার পাইকারি বাজারে যে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ছিল তা মঙ্গলবার ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় ঠেকেছে। এদিকে দেশে গত নভেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। মূল্যবৃদ্ধির শুরুটা হয়েছিল ভারত থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নূ্যনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রপ্তানিই নিষিদ্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠে। তখন আকাশপথেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ভারত গত মার্চে পেঁয়াজ রপ্তানির সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। হিলি স্থলবন্দরের কাস্টম হাউসের সূত্রে জানা গেছে, রোববার পর্যন্ত ভারত থেকে ১২৯টি পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে, যা পরিমাণে প্রায় ৮০০ টন। সোমবার সারাদিন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। তবে দুপুরের পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা তাদের সংকটের কথা জানিয়েছেন। তারা নিজ দেশেও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) সদস্য আবু রায়হান আলবেরুনী যায়যায়দিনকে বলেন, দেশে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় এখন পেঁয়াজের চাহিদা কম। যা মজুত আছে তা দিয়ে ভালোভাবেই চলবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের বড় বাজারের ব্যবসায়ী হুমায়ন কবির বলেন, সোমবার দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি বিক্রি করেছেন ৬০-৬৫ টাকায়। মঙ্গলবার পাইকারিতেই দাম বেড়ে ওঠে ৮০ টাকা। যে কারণে তিনি খুচরায় কেজিপ্রতি ২০ টাকা মুনাফায় ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি যা তাতে মনে হচ্ছে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে। কারণ ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর রাতেই পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাজারে পেঁয়াজের এক ধরনের কৃত্রিম সংকট দেখা দিতে পারে। এতে আবারও গত বছরের মতো অবস্থা তৈরি হবে কি না বলা মুশকিল। এদিকে এরই মধ্যে ক্রেতাদের মাঝে পেঁয়াজ কিনে মজুত করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। গোলাপবাগে ভ্যানে করে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে তার দুই মণ পেঁয়াজের সব বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি জানান, তার পেঁয়াজ সোমবারের কেনা। তাই কিছুটা লাভে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। এমন হুড়াহুড়ি করে পেঁয়াজ তিনি আগে কখনো বিক্রি করেননি। তবে কম দামে সব পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেললেন কি না তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন তিনি। এদিকে পেঁয়াজ নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে বলে অনুমান করা যাচ্ছে। যেমন রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজার থেকে ১০০ টাকায় কেজিতে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন তিনি। বাজার থেকে পেঁয়াজ হাতে বের হতেই অন্তত ১০ জন দাম জানতে চেয়েছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে, পেঁয়াজ নিয়ে সবার মধ্যেই এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে। তবে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো বলছে, গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা তৎপর রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার আগে থেকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে ভারত রপ্তানি বন্ধের আগেই বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ পর্যন্ত ১২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন তারা। বিশ্বের পাঁচটি দেশ থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানি হবে। গত বছর ভারত রপ্তানি বন্ধের সপ্তাহ দুয়েক পর ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। এবার অবশ্য রপ্তানি বন্ধের ১১ দিন আগ থেকেই আমদানির উদ্যোগ নেন তারা। রপ্তানি বন্ধের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আগেভাগেই ব্যবসায়ীরা আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। তবে ভারত থেকে আমদানিতে সমস্যা হলে অন্য দেশ থেকেও আমদানি করা হয়। সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়; কিন্তু পেঁয়াজ ঘরে তোলার সময় প্রায় পাঁচ লাখ টন নষ্ট হয়ে যায়, অর্থাৎ ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে থাকে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানি হয় ১১ লাখ টন; কিন্তু প্রতি বছর ৩০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রয়োজন হয়। আড়তদার হাকিম আলী বলেন, গত বছরের মতো দাম লাগাম ছাড়িয়ে যাবে না। কারণ নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলেই ভারতের বাজারে দাম কমবে, তখন দেশি পেঁয়াজের দামও কমে যাবে। অক্টোবরেই ভারতের বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠার কথা রয়েছে। এদিকে দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গত সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমকে বাণিজ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান। পেঁয়াজ আমদানি করতে বিকল্প বাজার খোঁজা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ফুলবাড়ীতে একদিনের ব্যবধানে মূল্য দ্বিগুণ আমাদের ফুলবাড়ী প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধের জের ধরে একদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে পেঁয়াজের মূল্য দ্বিগুণ হয়েছে। পেঁয়াজের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের মূল্য দ্বিগুণ হওয়ায়, তারা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে। আর পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন মোকামে দাম বেশি ও সংকট থাকায় তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও, মঙ্গলবার সেই পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছে, এছাড়া দেশি জাতের পেঁয়াজ সোমবার ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও, মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে। পেঁয়াজ কিনতে আসা, খনি বিরোধী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ঘোষণার একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের মূল্য দ্বিগুণ হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সকালে ৫৫ দুপুরে ৭২ টাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খুচরা বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। চার ঘণ্টার ব্যবধানে শহরের নিউ মার্কেট ও পুরাতনবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৭ টাকা পর্যন্ত। ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানান, সকালে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ভারতেরটা ৪০ টাকা এবং দেশিটা ৫৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। দুপুর ১২টায় নিউ মার্কেট বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭২ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের অতিরিক্ত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। কলাপাড়ায় একদিনে দাম বেড়েছে কয়েক দফায় কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পেঁয়াজের বাজারে আবারো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার একদিনে কয়েক দফায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ভারত থেকে স্থলপথে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে স্থানীয় আড়তদাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এর দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ক্রেতারা। মঙ্গলবার সকাল থেকে খুচরা বাজারে ৭০ থেকে ৭৫, কখনো ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে এ পেঁয়াজ। তবে স্থানীয় আড়তদাররা দুষছে মোকামে বড় ব্যবসায়ীদের। তারা দাম বেশি ধরেছে বলে সব খরচ দিয়ে এর কমে বিক্রি করতে পারছেন না। তবে স্থানীয় আড়তদাররা ৬৮ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এদিকে, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার খবরে মঙ্গলবার কলাপাড়া পৌরশহরের সাপ্তাহিক হাটের দিনে শত শত মানুষকে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে। তাদের ভয় আগের মতো আবারও কেজি ৩শ' টাকা না হয়। এতে ক্রেতাদের কেউ ৩ কেজি, কেউ ৫ কেজি আবার কেউ কেউ ১০ কেজি করেও পেঁয়াজ কিনেছেন। খাতুনগঞ্জের আড়তে ভিড় খুচরা বিক্রেতাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বাড়ছে পণ্যটির দাম। সোমবার সকালে ৩৭ টাকা বিক্রি হলেও বিকেলে দাঁড়ায় ৪৫ টাকা। মঙ্গলবার মানভেদে ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকা। ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়বে এমন আশঙ্কায় খুচরা বিক্রেতা ও মুদির দোকানিরা ভিড় করছেন খাতুনগঞ্জের আড়তে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিয়ে, মেজবান, ওরসের দিন নির্ধারিত আছে এমন অনেক গ্রাহকও আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনে রাখছেন। খাতুনগঞ্জের মেসার্স মোহাম্মদিয়া বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মিন্টু সওদাগর জানান, আজ ৫-৬ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে বিভিন্ন আড়তে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। সরবরাহ না বাড়লে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একজন আমদানিকারক জানান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা আদা-রসুন আমদানি করলেও সচরাচর পেঁয়াজ আমদানি করেন না। তবে সংকটকালে মিসর, চীন, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন। পেঁয়াজের ব্যবসাটা ভারতের স্থলবন্দরকেন্দ্রিক আমদানিকারক ও বেপারিরা নিয়ন্ত্রণ করেন। এখন পরিস্থিতি বুঝে বিকল্প দেশ থেকে আমদানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে। সিলেটের বাজারে পেঁয়াজ এক লাফে ৭০ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধে ভারতের ঘোষণার পর প্রভাব পড়েছে সিলেটের বাজারেও। সোমবার বিকাল পর্যন্ত সিলেটের বাজারে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫/৪৬ টাকা। আর রাত পোহাতেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মঙ্গলবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়দিন আগে পেঁয়াজ ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। ফের দোকান ভেদে ৪/৫ টাকা কেজিতে দাম কমানো হয়। কিন্তু ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধের খবর শুনে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। সিলেটের রিকাবি বাজারের মুদি দোকানি রোকন আহমদ বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করায় ৬০ টাকা কেজি দরে তার দোকানের সব পেঁয়াজ ক্রেতারা কিনে নিয়েছেন। এ দিন দুপুর নাগাদ পেঁয়াজ কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বেড়েছে। অথচ কয়দিন আগে আড়ত থেকে ৪০ টাকা কেজি কিনে পচা বাদ দিয়ে ৪৫/৪৬ টাকা বিক্রি করতে হয়েছে। আমদানি বন্ধের খবর শুনে আড়তদাররাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। পাবনায় একরাতে মণপ্রতি বেড়েছে হাজার টাকা পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত পাবনার হাট-বাজারে এক রাতের ব্যবধানেই যেন পেঁয়াজের অভাব দেখা দিয়েছে। দেশের অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট বনগ্রামে মঙ্গলবার প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩২শ' থেকে ৩৩শ' টাকা দরে। অথচ একদিন আগেই এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২শ' টাকা দরে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না বলে ঘোষণা দেয়ার এক খবরেই এক রাতে দাম বেড়ে গেছে বলে ব্যাপারিরা জানিয়েছেন। সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম এলাকার প্রবীণ আড়তদার ও পেঁয়াজ চাষি ইব্রাহিম হোসেন জানান, পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়ার হাটে মৌসুমের শেষ সময় বলে এমনিতেই পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। এর উপর গত মৌসুমে পেঁয়াজ ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে শীলা বৃষ্টির কবলে পড়ায় কৃষকের অনেক পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেনি। এ কারণেই বাজারে একমাস আগে থেকে পেঁয়াজের দাম একটু একটু করে বৃদ্ধি পায়। সোমবার যে পেঁয়াজ বেচা হয়েছে ২২শ' টাকা মণ দরে সেই পেঁয়াজ একমাস আগে ছিল ১২শ' টাকা মণ। উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ পেঁয়াজের হাট সাঁথিয়ার বনগ্রামে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজ না পেয়ে অনেক ব্যাপারী ফিরে যাচ্ছেন। রাজধানীর আড়ত ও পাইকারি বাজারে অভিযান ভারতের রপ্তানি বন্ধ করার সংবাদে হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। একদিনে নিত্যপণ্যটির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। তাই পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর পাইকারি বাজার ও আড়তে বিশেষ অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মোবাইল টিম। মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, পুরান ঢাকার শ্যামবাজারসহ পেঁয়াজের আড়ত ও পাইকারি বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মন্ডল বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পরিকল্পনায় রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। অধিদপ্তরের চারটি টিমসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি মনিটরিং টিম এই অভিযান পরিচালনা করছে। বকশীগঞ্জে বাজার মনিটরিংয়ে ইউএনও বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি রুখতে বাজার মনিটরিং করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা বাজার মনিটরিং কমিটির সভাপতি আ.স.ম. জামশেদ খোন্দকার পৌর শহরের কাঁচা বাজার, পেঁয়াজের বাজারসহ নিত্যপণ্যের বাজার পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ইউএনও আ.স.ম. জামশেদ খোন্দকার ব্যবসায়ী, আড়ত মালিক ও দোকান মালিকদের সাথে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে কথা বলেন। তিনি এসময় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের নাম করে যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেন বা বিক্রি করেন তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।