শুক্রে ফসফিন, তবে কি প্রাণের অস্তিত্ব আছে গ্রহটিতে?

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শুক্র গ্রহ -ইন্টারনেট
সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ ভেনাস বা শুক্রের মেঘের মধ্যে ভাসমান অবস্থায় প্রাণের অস্তিত্ব আছে- সেটা অস্বাভাবিক একটি সম্ভাবনা। তবে শুক্রগ্রহের মেঘমালার মধ্যে একটি গ্যাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করার পর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেই সম্ভাবনার কথাই ভাবতে শুরু করেছেন। এই গ্যাসের নাম ফসফিন- একটি ফসফরাস পরমাণু আর তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গ্যাসটির প্রতিটি অণু তৈরি হয়ে থাকে। পৃথিবীতে ফসফিন হচ্ছে জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি গ্যাস। কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিকভাবে ফসফরাসের সঙ্গে হাইড্রোজেনের মিলন ঘটিয়ে এই গ্যাস তৈরি করে। যেমন পেঙ্গুইনের মতো প্রাণীর অন্ত্রে থাকা জীবাণুর আশপাশে থাকে। অথবা অক্সিজেন কম রয়েছে, এমন জলাভূমিতেও পাওয়া যায়। শিল্পকারখানায় এটি তৈরি করা যায়। কিন্তু শুক্রগ্রহে তো কোনো কারখানা নেই। সেখানে কোনো পেঙ্গুইনও নেই। তাহলে কীভাবে শুক্রগ্রহ পৃষ্ঠের ৫০ কিলোমিটার উপরে মেঘের মধ্যে এই ফসফিন গ্যাস এলো? যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেন গ্রাভস এবং তার সহকর্মীরা এখন সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। নেচার অ্যাস্ট্রোনমি সাময়িকীতে শুক্রের ফসফিন সম্পর্কে তারা একটি পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছেন। সেখানে তারা দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে, এই গ্যাসটি হয়তো জীবন বা প্রাণ তৈরির একটি প্রাকৃতিক, অজৈব উৎস হতে পারে। পৃথিবীর মানুষের কাছে শুকতারা নামেও পরিচিত এই গ্রহটি। শুক্রগ্রহের পরিবেশ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা যায়, তাতে সেখানে এখন পর্যন্ত ফসফিন থাকার কোনো জৈবিক ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। কিন্তু সেখানে যে পরিমাণ গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে, তাতে জীবন্ত কোনো উৎস থাকার কথা বিবেচনায় রাখতেই হচ্ছে। অধ্যাপক গ্রেভেস বলেছেন, 'আমার পুরো জীবন ধরে মহাবিশ্বের অন্যত্র প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, সেটা নিয়ে আগ্রহী থেকেছি। সুতরাং এই সম্ভাবনা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি।' তিনি বিজ্ঞানীদের আহ্বান জানিয়েছেন যে, তাদের কোনো ভুল থাকলে তাও যেন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই গবেষক দল কী পেয়েছে? ওয়াই দ্বীপে স্থাপিত জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপ দিয়ে শুক্রগ্রহের মেঘপুঞ্জে ফসফিন প্রথম শনাক্ত করে অধ্যাপক গ্রেভেসের দল। এরপর চিলির আতাকামা লার্জ মিলিমিটার রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে তা নিশ্চিত হন। সৌরজগতের ভেতর যেসব গ্রহে জীবন খুঁজে পাওয়ার কথা চিন্তা করা হয়, সেই তালিকার শীর্ষে শুক্রগ্রহকে কখনো রাখা হয় না। পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে গ্রহটির ৯৬ শতাংশই হচ্ছে বসবাসের অযোগ্য, যেখানকার পরিবেশ কার্বন ডাই-অক্সাইডের তৈরি। গ্রহ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনেকটা পিৎজার চুলার মতো, যেখানে ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ রয়েছে। এই গ্রহে এখন পর্যন্ত যতগুলো মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে, সেগুলো অবতরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং শুক্রগ্রহে যদি জীবনের অস্তিত্ব খুঁজতে হয়, তাহলে সেটা হয়তো পৃষ্ঠদেশ থেকে ৫০ কিলোমিটার ওপরের স্থানেই খুঁজতে হবে। এখনো কোথায় সংশয় রয়েছে? গ্রহটির ওপরে থাকা মেঘরাশি অনেক পুরু এবং সেখানে ৭৫-৯৫ শতাংশ সালফিউরিক এসিড রয়েছে। এটি পৃথিবীর প্রাণ সৃষ্টিকারী কোষ গঠনের জন্য ক্ষতিকর। তবে ওই গবেষণা দলের একজন সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির বায়োকেমিস্ট এই গ্যাস তৈরিতে আগ্নেয়গিরির অগ্নু্যৎপাত, বজ্রপাত, এমনকি উল্কাপাতের ভূমিকা আছে কিনা, অথবা অন্য কোনো রাসায়নিকের ভূমিকা আছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখেছেন। তিনি বলেছেন, গ্রহটিতে যে পরিমাণে ফসফিন রয়েছে, তা উৎপাদনে এসব উপাদানের ভূমিকার সম্ভাবনা ১০ হাজার ভাগ ক্ষীণ। তিনি বলেন, সালফিউরিক এসিডের ভেতর নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য শুক্রগ্রহের জীবাণু হয়তো ভিন্ন ধরনের কোনো জৈব রসায়ন ব্যবহার করছে। তবে এই গবেষক দল কিন্তু দাবি করেনি যে শুক্রগ্রহে জীবনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তারা যে ধারণা দিয়েছেন, বিজ্ঞানীদের দায়িত্ব হবে সেটা নিয়ে আরও গবেষণা করা। খুঁজে বের করা যে, ফসফিন তৈরির পেছনে আর কোনো কারণ আছে কিনা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কলিন উইলসন, যিনি ইউরোপিয়ান স্পেন এজেন্সির শুক্রগ্রহের মহাকাশযান পাঠানোর প্রকল্পে কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন, অধ্যাপক গ্রেভেসের পাওয়া এসব তথ্য গ্রহটি নিয়ে গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখন শুক্রগ্রহে আরেকটি মহাকাশযান পাঠিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। ২০৩০ সালের ভেতর শুক্রগ্রহে আরেকটি মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা করছে নাসা। বিবিসি বাংলা