মহান শিক্ষা দিবস আজ

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মহান শিক্ষা দিবস আজ। ১৯৬২ সালের এদিনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ঘোষিত শিক্ষানীতির প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকজন ছাত্র মারা যান। এর পর থেকে দিনটি শিক্ষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। প্রতি বছর দিবসটিতে বিভিন্ন ছাত্র-শিক্ষক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করলেও করোনা মহামারির কারণে চলতি বছর সেই রকম কোনো কর্মসূচি নেই। তবে বেশ কয়েকটি ছাত্র ও বেসরকারি শিক্ষক সংগঠন হাইকোর্টের  সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বরে শিক্ষা আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, অনলাইনে আলোচনা সভার আয়োজন করবে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বেসরকারিভাবে এ দিবসটি পালিত হলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে পালন করা হয় না। বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠান ও সমাবেশে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা এসে সমর্থন দিলেও জাতীয় শিক্ষা দিবসকে তুলে ধরতে সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। সরকারিভাবে শিক্ষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষক নেতারা। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, এ দিনটি আমাকে ৫৬ বছর আগের ঘটনাবহুল দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন আমরা একটি গণমুখী শিক্ষানীতির দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। দুঃখ হয় দিনটি এখন পর্যন্ত জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি পায়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগোপযোগী পরিবর্তন আসেনি। জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আরও বলেন, এমডিজি'র পর এসডিজি এসেছে। দুটোরই প্রধান ভিত্তি শিক্ষা। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ নিতে কতটা প্রস্তুত আমরা! এবারের শিক্ষা দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন, বৈষম্য-বঞ্চনার অবসান। একই সঙ্গে করোনাকালীন শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। জানা গেছে, তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান তার ক্ষমতা দখলের দুই মাসের মাথায় ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এস এম শরীফের নেতৃত্বে গঠন করেন শরীফ কমিশনখ্যাত শিক্ষা কমিশন। পরের বছরে ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট কমিশনের পেশ করা প্রতিবেদনের প্রস্তাবনাগুলো ছিল শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবনাই শুধু ছিল না, ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনে উচ্চশিক্ষা ধনী শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেওয়া 'শরীফ কমিশন'-এর শিক্ষানীতি প্রতিহত করতে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন 'অল পার্টি স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি' দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা লেলিয়ে দেয় পুলিশ বাহিনী। তারই একপর্যায়ে ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মোড়ে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউলস্নাহ প্রমুখ শহীদ হন। সেই থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন প্রতি বছর এ দিনটিকে 'মহান শিক্ষা দিবস' হিসেবে পালন করে আসছে। প্রতি বছর দিবসটিতে ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। তবে এবার করোনার কারণে অনুষ্ঠান সীমিত আকারে পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানীর হাইকোর্টের সামনে শিক্ষা অধিকার চত্বরে শিক্ষা আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, অনলাইনে আলোচনা সভা। এছাড়া জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট ও ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট-এর আয়োজনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষক এবং অভিভাবক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে জুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বিপস্নবী ছাত্র সংহতি, ছাত্র ফেডারেশন ও জাসদ ছাত্রলীগ স্থাস্থ্যবিধি মেনে পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।