'কানাডার সিটিজেন, ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই'- জাতীয় দৈনিকে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেয় সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস হলেও প্রতারক জান্নাতের কথাবার্তা ও স্মার্টনেস দেখে কানাডা প্রবাসী ভেবেই সবাই ভুল করত। তার ফাঁদে পড়ে কোটি টাকা খোয়া গেছে অনেকের। এদিকে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় সাদিয়াকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
গত ১১ বছর ধরে সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস পত্রিকায় এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে এসব টাকা হাতিয়ে নেয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে জান্নাতুল ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযানে তার কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের অনেক পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ৩টি মেমরি কার্ড, ৭টি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার।
তিনি বলেন, এ বছরের ৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়- প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, কানাডার সিটিজেন, ডিভোর্সি, সন্তানহীন, বয়স ৩৭, ৫.৩ ফুট লম্বা, নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই। যোগাযোগের জন্য ঠিকানা- বারিধারা। এরপর একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া।
এভাবেই প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। সে তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এই প্রতারণা শুরু করে। ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে সিআইডি।
তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞাপন দেখে মো. নাজির হোসেন প্রতারক জান্নাতুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে গত ১২ জুলাই গুলশান-১ থাই সিগনেচার রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবে এবং সেখানে তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করবেন, জান্নাতুলের এসব কথায় বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরে প্রতারক জান্নাতুল জানায়, কানাডায় প্রচন্ড শীত তাই সেখান থেকে তার দুইশত কোটি টাকা ফেরত নিয়ে আসবেন। পরে দেশেই ব্যবসা করবেন।
তিনি বলেন, ডিএইচএল-এর মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখে ট্যাক্স/ভ্যাট/ডিএইচএল বিল বাবদ সর্বমোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে দিত প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস।
তিনি বলেন, গত ১১ বছরে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সে। তার একটি হিসাব খাতা জব্দ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২৫/৩০ কোটি টাকার হিসাব আমরা পেয়েছি। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে, আমরা সেগুলোতে ১ কোটি টাকা পেয়েছি।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলে পরে সে মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দিত। আমরা এই চক্রের আরও সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।