বঞ্চিতদের অভিযোগে আটকে যাচ্ছে আ'লীগের তৃণমূলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বাদপড়া ত্যাগী নেতাদের অভিযোগের পালস্না দিন দিন ভারী হচ্ছে। তদের অভিযোগ, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌঁছেছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সংগঠন। এ নিয়ে গত বুধবার সভাপতিমন্ডলীর বৈঠকেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তাই যাচাই-বাছাই না করে কোনো কমিটি অনুমোদন করবে না দলটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩১টি সাংগঠনিক জেলা সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে তৃণমূল নেতাদের দ্বন্দ্বে ১৭ জেলা পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো জমা দিতে পারেনি। যে ১৪টি কমিটি জমা দিয়েছে সেগুলো নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। একই জায়গায় দুটি কমিটি জমা দেওয়ারও নজির রয়েছে। সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোর মধ্যে কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ঠাকুরগাঁও, চট্টগ্রাম জেলা উত্তর, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, কুমিলস্না জেলা উত্তর, সিলেট জেলা ও সিলেট মহানগরসহ ১৪টি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত সেমবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া জমা দেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। এতে নগরের ক্ষুব্ধ হন সিনিয়র নেতারা। তাদের অভিযোগ, কারও সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তাই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার বুধবার রাতে দলের দপ্তরে বিকল্প পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও দলের দপ্তরে তৃণমূলের কমিটি নিয়ে অংসখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগে ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ড। এর প্রেক্ষিতে জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জমা দেওয়া খসড়া কমিটি যাচাই-বাছাই করে কমিটি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী, অর্থের বিনিময় কেউ ঢুকে পড়ল কিনা এবং দলের ত্যাগী নেতাদের কেউ বাদ পড়ল কিনা- এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসনিা। দলীয় একটি সূত্র জানায়, গত বুধবার গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমন্ডলীর সভায় তৃণমূলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন তাদেরও কমিটিতে মূল্যায়ন করতে হবে। যারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাদ দেবেন, প্রয়োজনে ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করে দেব। প্রতিদ্বন্দ্বিদের বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শুধু নিজেদের পছন্দমতো লোক রাখলে সেই কমিটি অনুমোদন করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা। গতকাল দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যেব কমিটি জমা হয়েছে, সেগুলো এখনই ঘোষণা করা হবে না। স্বজনপ্রীতি করে নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। এর আগে তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটিতে বিতর্কিতরা জায়গা করে নেয়। দীর্ঘদিনে দলের ভেতর নিজস্ব বলয় তৈরি করে নিয়েছেন তারা। তাই তাদের বের করে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নেতারা। তাদের কারণে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে শুরু করে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ ও ব্যবসায়-বাণিজ্য বেশিরভাগই তাদের নিয়ন্ত্রণে। এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যাতে এমন কেউ না আসতে পারেন, তাই আগে থেকেই জেলা সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের সতর্ক করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু নিজেদের বলয় ভারী করতে ত্যাগী ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাদ দিয়ে কমিটি করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। এদিকে, তিন দফায় সময় বৃদ্ধি করা হলেও স্থানীয় কোন্দলের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়াই করতে পারছে না অনেক জেলার নেতারা। সর্বশেষ আগামী বুধবারের মধ্যে পূর্ণঙ্গ কমিটির খসড়া জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর বৈঠক থেকে এই সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতারা সবাই চান, নিজেদের বলয়ের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসতে। এ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে না পাড়ায় এসব কমিটির খসড়া এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বলে জানা গেছে।