পেঁয়াজে নতুন সংকট!

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

আহমেদ তোফায়েল
প্রথমবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পাঁচ দিন পর শনিবার ভারতে আটকেপড়া পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করেন সে দেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গতকাল রোববার দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারো পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে গেছে। আমদানিকারকরা বলছেন, যেসব ট্রাক আটকা পড়েছে তা রপ্তানির অনুমোদন নেই। এছাড়া যে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) দেওয়া রয়েছে, তার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। এ বিষয়ে ভারত কি করবে তা নিয়ে শঙ্কিত দেশের আমদানিকারকরা। জানা গেছে, রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করেনি। হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রম্নপের সভাপতি হারুন উর রশীদ যায়যায়দিনকে বলেন নতুন করে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানির সম্ভাবনা নেই বলে তাকে জানিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ১১টি ট্রাকে ২৪৬ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। যে ১১টি ট্রাক পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে, তার অধিকাংশ পেঁয়াজই ইতোমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে পানি ঝরছে। এখনও দুইশ'র বেশি পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসব পেঁয়াজ অবশ্য ভারতের রপ্তানির অনুমোদন নেই। এ জন্য ট্রাকগুলো আটকে দিয়েছে ভারত। এছাড়া যে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমাদের এলসি দেওয়া রয়েছে, তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে যেসব পেঁয়াজের এলসি করা ছিল, মূলত সেসব পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল ভারত সরকার। এ কারণে শনিবার বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করা হয়েছে। বাকি যে ১০ হাজার টনের জন্য এলসি করা আছে, সেসব পেঁয়াজ রপ্তানির জন্য নতুন করে ভারত সরকারের অনুমতি লাগবে। খুচরা বাজারে প্রভাব নেই :ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে পাইকারি বাজারে কমছে পেঁয়াজের দাম। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, হুট করে ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ফলে পাইকারিতে বিক্রি শূন্যের কোটায় নামে। রোববার রাজধানীর শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা, যা আগে ছিল ৭০-৭২ টাকা। তার আগের দিন ছিল ৭৭ টাকা। ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় এ পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। অপরদিকে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৬০-৬৫ টাকা। তবে রোববার পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে নতুন করে কমেনি। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে আগের দিনের মতো দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা। আর আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। এর আগে গত সোমবার হুট করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। ফলে মঙ্গলবার ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারে বেড়ে ১১০ টাকা হয়ে যায়। আর পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে পেঁয়াজের কেজি হয় ৮৫ টাকা। কোনো কোনো পাইকার ৯০ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ বিক্রি করেন। এমন দাম বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে ক্রেতাদের। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে ক্রেতা সংকট দেখা দেয় পেঁয়াজের বাজারে। যার প্রভাবে পাইকারি বাজারে কমে পেঁয়াজের দাম। বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দফায় দাম কমে পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ৭৭ টাকায় নামে। এ পরিস্থিতিতে খবর আসে নিষেধাজ্ঞার আগে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশকে দেয়ার অনুমতি দিয়েছে ভারত। এতেই শনিবার দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম আরও কমে যায়। আর পেঁয়াজ বোঝায় ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করায় রোববার পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম আরেক ধাপ কমে। নড়েচড়ে বসেছে প্রতিযোগিতা কমিশন:এদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রাতারাতি অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত বছরও একই কায়দায় ফায়দা লুটেছে অসাধু চক্র। এবার বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রতিযোগিতা কমিশন। দেশের বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বা মনোপলি ঠেকাতে কাজ করা সরকারের এই প্রতিষ্ঠান চলতি সপ্তাহেই একটি সভার আয়োজন করেছে। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, কৃষি মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের ডাকা হবে। চলতি সপ্তাহে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। প্রতিযোগিতা কমিশন বলছে, তাদের কাজ হচ্ছে বাজারে একচেটিয়া প্রভাব ঠেকানো। পেঁয়াজে রাতারাতি দাম বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক। যদিও বাজারে কোনো সংকট নেই। কমিশনের মতে, একটি গ্রম্নপ কাজ করছে এই অস্থিতিশীলতার পেছনে। তারা এই বিষয়ে খোঁজখবর নেবে। সভায় আলাপ-আলোচনার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।