সৌদির টিকিটের জন্য হাহাকার প্রবাসীদের

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
বৃহস্পতিবার পাসপোর্ট হাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে টিকিটের অপেক্ষায় সৌদি প্রবাসীরা -ফোকাস বাংলা
ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছেই না প্রবাসীদের। টানা তিন দিন বিক্ষোভের পর বুধবার ভিসার মেয়াদ ২৪ দিন বাড়লেও এখন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে এয়ারলাইন্স টিকিট পাওয়া নিয়ে। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুরে সৌদি এয়ারলাইন্স তাদের টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। সৌদি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা জানান, যারা রিটার্ন টিকিট কেটে দেশে ফিরেছেন, এখন শুধু তাদের টিকিট দেওয়া হবে। নতুন করে কোনো টিকিট ইসু্য করা হবে না। সৌদি এয়ারলাইন্সের এমন ঘোষণার পর রিটার্ন টিকিট না থাকা প্রবাসীদের সৌদি যাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ১ থেকে ৫০০ পর্যন্ত টোকেনধারীদের টিকিট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সৌদি এয়ারলাইন্সের জিএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, রিটার্ন টিকিট কেটে যারা দেশে এসেছিলেন পর্যায়ক্রমে তারা সবাই টিকিট পাবেন। আজ থেকে (২৫ সেপ্টেম্বর) ৫০১ থেকে ৮৫০, ২৬ সেপ্টেম্বর ৮৫১ থেকে ১২০০ এবং ২৭ সেপ্টেম্বর ১২০১ থেকে ১৫০০ নম্বর টোকেনধারীদের টিকিট দেওয়া হবে। এর আগে বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী দুজনেই জানিয়েছিলেন, আকামার মেয়াদ ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আরও ২৪ দিন বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানকে রিয়াদ এবং জেদ্দায় সপ্তাহে মোট চারটি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সৌদি এয়ারলাইন্স ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বাড়ানোর ঘোষণার পরও স্বস্তিতে নেই টিকিটপ্রত্যাশী প্রবাসীরা। কারণ এসব প্রবাসীর অনেকেরই রিটার্ন টিকিটের তারিখ ও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। প্রায় ৩৫ হাজার প্রবাসীর অধিকাংশেরই এই সমস্যা থাকায় ২৪ দিনের মধ্যে তা সমাধান হওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। প্রবাসীদের অভিযোগ, বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকায় সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ টিকিট বিক্রি করে দিচ্ছে। তারা বলেন, সৌদি \হএয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত দুই হাজার প্রবাসী শ্রমিককে এয়ারলাইন্সের টিকিট ইসু্য করার জন্য বিশেষ টোকেন দিয়েছেন। কিন্তু তারা সেই টোকেনের সিরিয়াল অনুযায়ী টিকিট দিচ্ছেন না। প্রবাসী শ্রমিকদের অভিযোগ, বিভিন্ন এজেন্সি সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি করছে। তারা বলছেন, টিকিটের ব্যাপারে সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও সিরিয়ালের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক। এছাড়া যাদের ভিসা এবং রিটার্ন টিকিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা কীভাবে সৌদি ফিরে যাবেন, সে ব্যাপারে সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন প্রবাসীরা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আটকে পড়া সৌদি প্রবাসীদের জন্য দুইটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে, যা ১৬ ও ১৭ মার্চের জেদ্দা ও রিয়াদের বিমানের রিটার্ন টিকিটধারী যাত্রীদের জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা-জেদ্দা ও ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা-রিয়াদে যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করবে। শুধু ১৬ ও ১৭ মার্চের ফিরতি টিকিটধারী যাত্রীদের এই ফ্লাইটে বুকিংয়ের জন্য বিমান সেলস অফিসে টিকিট, পাসপোর্ট, সৌদি আরবের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় কাগজসহ যোগাযোগ করতে হবে। অন্য যাত্রীদের অযথা কাউন্টারে ভিড় না করতে অনুরোধ করেছে বিমান। তবে নির্ধারিত তারিখের টিকিটধারী ছাড়াও অন্য তারিখের যাত্রীরা ভিড় করেছেন মতিঝিলে বিমানের বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে। সেখানে ফরিদ নামের এক প্রবাসী বলেন, ২৭ ফেব্রম্নয়ারি রিয়াদ থেকে ঢাকা রিটার্ন টিকিটসহ এসেছি। কিন্তু রিটার্ন ফ্লাইট ছিল ২৪ এপ্রিল। সে ক্ষেত্রে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী হবে তা জানতে বিমান অফিসে ভিড় করেছেন। প্রবাসী মনির বলেন, ১৫ মার্চ তার চট্টগ্রাম টু জেদ্দা রিটার্ন টিকিট ছিল। ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার কারণে যেতে পারিনি। এখন ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বিমান অফিসে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি। ভিসার মেয়াদ ও ফ্লাইট সংকট থাকায় এখনো জটিলতা কাটেনি প্রবাসীদের। করোনা মহামারির কারণে এখন টিকিট পেলেও প্রবাসীদের কোভিড টেস্টসহ বেশ কিছু ধাপ পার করে সৌদি ফিরতে হবে।