কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক 'বড় ভাইদের' খোঁজে পুলিশ

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

সাখাওয়াত হোসেন
পুলিশের হাতে আটক কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য -ফাইল ছবি
র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক ভাঙ্গা সম্ভব হলেও ঢাকাসহ সারাদেশে বিপুলসংখ্যক কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে প্রায়ই খুন, জখম, ধর্ষণ ও অপহরণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এ গ্যাংয়ের একটি অংশ মাদক ব্যবসায়ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে। 'বড় ভাই' পরিচয়ে আত্মগোপনে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ও রাজনৈতিক গডফাদাররা এসব কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ফলে এসব খুদে অপরাধীর লাগাম টেনে ধরা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়দাতা 'বড় ভাইদের' চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ডিসি এবং দেশের প্রত্যেক জেলার এসপিকে পাঠানো হয়েছে। এতে বিভিন্ন পাড়ামহলস্নায় থাকা কিশোর গ্যাংয়ের কোনটি কোন 'বড় ভাই' নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কী তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। সে সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনরা আত্মগোপনে থেকে কীভাবে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত করছে এবং তাদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়দাতা 'বড় ভাইদের' তালিকা তৈরির পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত কঠোর অ্যাকশনে নামবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা পদ-পদবি বিবেচনা করা হবে না। এক্ষেত্রে পুলিশ বিভাগ সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর 'জিরো টলারেন্স নীতি'কে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলেছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ও মাদক ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন বড় অপরাধ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ধরা পড়লেও কেউ কেউ রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদের পাশাপাশি রাজনৈতিক গডফাদারদের সম্পৃক্ততা থাকে। রাজনৈতিক পরিচয়ধারী এ গডফাদাররা স্বশরীরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদবির করছে। এতে কাজ না হলে রাজনৈতিক চাপ দিচ্ছেন। ফলে অনেক সময় থানার ওসিরা নিজেদের গা বাঁচাতে এসব কিশোর অপরাধীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, যা কিশোর অপরাধীদের আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠার পথ প্রশস্ত করছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোন কিশোর গ্যাং কতটা সক্রিয় এবং এর নেপথ্য মদদদাতা হিসেবে কারা মুখ্য ভূমিকা পালন করছে সে সংক্রান্ত অধিকাংশ তথ্যই পুলিশের কাছে রয়েছে। তবে তা এতদিন ডাটাবেজ করা হয়নি। এছাড়া করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এবং বিপুলসংখ্যক কিশোর শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ায় এর একটি অংশ বিভিন্ন গ্যাংয়ে যুক্ত হয়েছে। কেউ কেউ আবার নতুন করে আলাদা গ্রম্নপও তৈরি করেছে। এসব গ্যাংয়ের নেতৃত্বে নতুন গডফাদারদের যুক্ত হয়েছে। যার বেশিরভাগ তথ্যই পুলিশের কাছে নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে প্রতিটি থানাকে নতুন করে কিশোর গ্যাং ও নেপথ্য মদদদাতা গডফাদারদের ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ গুটিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের এআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, দল-মত নির্বিশেষে কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বদানকারী 'বড় ভাইদের' বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া গেছে। ওই কর্মকর্তার দাবি, বেশিরভাগ কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদের হাতে থাকলেও কেউ কেউ ক্ষমতাসীন পক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে জেলা শহরে এ চিত্র তুলনামূলক বেশি। ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং দরিদ্র পরিবারের কর্মহীন কিশোররা প্রথমে পলিটিক্যাল লিডারদের পক্ষে মিছিল-মিটিং, সমাবেশে যোগ দেওয়া ও পোস্টারিংসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে ছোট ছোট দল গঠন করে। পরে তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান পর্যালোচনা করে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান গোয়েন্দারা। জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কিশোর অপরাধী চক্রের (কিশোর গ্যাং) ৪৮ জন পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদারের তালিকা করে। যার মধ্যে ১৭ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে, ৫ জন সরকারবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের পদধারী নেতার। ১৩ জনের দলীয় পদ-পদবি না থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা প্রভাবশালী। বাকি ১১ পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় টপটেরর। অপরাধ বিশ্লেষকদের পর্যালোচনা, শুধু চট্টগ্রামই নয়, দেশের প্রতিটি এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারদের চিহ্নিত করলে এই একই চিত্র পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের জন্য কাউন্সিলর পদে যে ২২০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন তাদের মধ্যে পুলিশের তালিকাভুক্ত ৭ জন কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার ছিল। তারা সবাই আওয়ামী লীগের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক। আলোচিত এ ৭ জনের মধ্যে দুজন সরকারি দল-সমর্থিত প্রার্থী বলে জানা গেছে। বাকি ৫ জন 'বিদ্রোহী প্রার্থী' ছিল। যদিও করোনার কারণে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন-পরবর্তী স্থগিত করা হয়। এদিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা মনে করেন, শুধু আশ্রয়দাতা গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে না। এ জন্য অভিভাবকদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী সন্তানরা সহপাঠীদের বাইরে কার সঙ্গে মিশছে, কখন-কোথায় কী ধরনের আড্ডা দিচ্ছে তা খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানরা যাতে কোনো ধরনের মাদকের নেশায় জড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে তীক্ষ্ন নজর থাকা দরকার। এছাড়া ছোটখাটো কোনো পেশায় জড়িত থাকলে সন্তান কর্মক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে কি না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাদের মতে, কিশোররা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণেই সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক গডফাদাররা তাদের ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে। আবার কখনো কখনো নিজেরাই অপরাধ করে গডফাদারদের শেল্টার নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ডিএমপির গুলশান জোনের ডিসি (ডিবি) মশিউর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যথেষ্ট স্থিতিশীল রয়েছে। যে কারণে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক নেতারা যে তাদের শেল্টার দিচ্ছেন, এমনটা নয়। বরং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নানা অপকর্ম করে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে। অনেক নেতা তাদের শেল্টার দিলেও নিষ্ঠাবান রাজনীতিকরা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। \হ \হর্ যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক ভাঙ্গা সম্ভব হলেও ঢাকাসহ সারাদেশে বিপুলসংখ্যক কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে প্রায়ই খুন, জখম, ধর্ষণ ও অপহরণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এ গ্যাংয়ের একটি অংশ মাদক ব্যবসায়ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে। 'বড় ভাই' পরিচয়ে আত্মগোপনে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন ও রাজনৈতিক গডফাদাররা এসব কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ফলে এসব খুদে অপরাধীর লাগাম টেনে ধরা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়দাতা 'বড় ভাইদের' চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ডিসি এবং দেশের প্রত্যেক জেলার এসপিকে পাঠানো হয়েছে। এতে বিভিন্ন পাড়ামহলস্নায় থাকা কিশোর গ্যাংয়ের কোনটি কোন 'বড় ভাই' নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কী তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। সে সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনরা আত্মগোপনে থেকে কীভাবে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত করছে এবং তাদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়দাতা 'বড় ভাইদের' তালিকা তৈরির পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত কঠোর অ্যাকশনে নামবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা পদ-পদবি বিবেচনা করা হবে না। এক্ষেত্রে পুলিশ বিভাগ সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর 'জিরো টলারেন্স নীতি'কে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলেছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ও মাদক ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন বড় অপরাধ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ধরা পড়লেও কেউ কেউ রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদের পাশাপাশি রাজনৈতিক গডফাদারদের সম্পৃক্ততা থাকে। রাজনৈতিক পরিচয়ধারী এ গডফাদাররা স্বশরীরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদবির করছে। এতে কাজ না হলে রাজনৈতিক চাপ দিচ্ছেন। ফলে অনেক সময় থানার ওসিরা নিজেদের গা বাঁচাতে এসব কিশোর অপরাধীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, যা কিশোর অপরাধীদের আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠার পথ প্রশস্ত করছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোন কিশোর গ্যাং কতটা সক্রিয় এবং এর নেপথ্য মদদদাতা হিসেবে কারা মুখ্য ভূমিকা পালন করছে সে সংক্রান্ত অধিকাংশ তথ্যই পুলিশের কাছে রয়েছে। তবে তা এতদিন ডাটাবেজ করা হয়নি। এছাড়া করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এবং বিপুলসংখ্যক কিশোর শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ায় এর একটি অংশ বিভিন্ন গ্যাংয়ে যুক্ত হয়েছে। কেউ কেউ আবার নতুন করে আলাদা গ্রম্নপও তৈরি করেছে। এসব গ্যাংয়ের নেতৃত্বে নতুন গডফাদারদের যুক্ত হয়েছে। যার বেশিরভাগ তথ্যই পুলিশের কাছে নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে প্রতিটি থানাকে নতুন করে কিশোর গ্যাং ও নেপথ্য মদদদাতা গডফাদারদের ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ গুটিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশের এআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, দল-মত নির্বিশেষে কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বদানকারী 'বড় ভাইদের' বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া গেছে। ওই কর্মকর্তার দাবি, বেশিরভাগ কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনদের হাতে থাকলেও কেউ কেউ ক্ষমতাসীন পক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে জেলা শহরে এ চিত্র তুলনামূলক বেশি। ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং দরিদ্র পরিবারের কর্মহীন কিশোররা প্রথমে পলিটিক্যাল লিডারদের পক্ষে মিছিল-মিটিং, সমাবেশে যোগ দেওয়া ও পোস্টারিংসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে ছোট ছোট দল গঠন করে। পরে তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান পর্যালোচনা করে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান গোয়েন্দারা। জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কিশোর অপরাধী চক্রের (কিশোর গ্যাং) ৪৮ জন পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদারের তালিকা করে। যার মধ্যে ১৭ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে, ৫ জন সরকারবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের পদধারী নেতার। ১৩ জনের দলীয় পদ-পদবি না থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা প্রভাবশালী। বাকি ১১ পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় টপটেরর। অপরাধ বিশ্লেষকদের পর্যালোচনা, শুধু চট্টগ্রামই নয়, দেশের প্রতিটি এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারদের চিহ্নিত করলে এই একই চিত্র পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের জন্য কাউন্সিলর পদে যে ২২০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন তাদের মধ্যে পুলিশের তালিকাভুক্ত ৭ জন কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার ছিল। তারা সবাই আওয়ামী লীগের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক। আলোচিত এ ৭ জনের মধ্যে দুজন সরকারি দল-সমর্থিত প্রার্থী বলে জানা গেছে। বাকি ৫ জন 'বিদ্রোহী প্রার্থী' ছিল। যদিও করোনার কারণে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন-পরবর্তী স্থগিত করা হয়। এদিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা মনে করেন, শুধু আশ্রয়দাতা গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে না। এ জন্য অভিভাবকদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী সন্তানরা সহপাঠীদের বাইরে কার সঙ্গে মিশছে, কখন-কোথায় কী ধরনের আড্ডা দিচ্ছে তা খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানরা যাতে কোনো ধরনের মাদকের নেশায় জড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে তীক্ষ্ন নজর থাকা দরকার। এছাড়া ছোটখাটো কোনো পেশায় জড়িত থাকলে সন্তান কর্মক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে কি না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাদের মতে, কিশোররা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণেই সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক গডফাদাররা তাদের ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে। আবার কখনো কখনো নিজেরাই অপরাধ করে গডফাদারদের শেল্টার নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ডিএমপির গুলশান জোনের ডিসি (ডিবি) মশিউর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যথেষ্ট স্থিতিশীল রয়েছে। যে কারণে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক নেতারা যে তাদের শেল্টার দিচ্ছেন, এমনটা নয়। বরং কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নানা অপকর্ম করে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে। অনেক নেতা তাদের শেল্টার দিলেও নিষ্ঠাবান রাজনীতিকরা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। \হ \হ