পাবনা-৪ উপনির্বাচনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী নুরুজ্জামান বিশ্বাস বাতিলের দাবি বিএনপির

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি
পাবনা-৪ উপনির্বাচনে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৯২৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূরুজ্জামান বিশ্বাস। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৭৬ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউল করিম লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৪ ভোট। ব্যালট পেপার ভোট কেন্দ্রে সকালে পৌঁছার কারণে এক ঘণ্টা পিছিয়ে শনিবার সকাল ৯টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয় পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) সংসদীয় আসনের নির্বাচনে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোট গ্রহণের শুরুতে ভোটারদের উপস্থিতি ভালোই ছিল। বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকে। তবে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জামিরুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল ১০টার দিকেই এ কেন্দ্রে ২০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ কেন্দ্রে ৩৪০০ ভোটার ছিল। সাহাপুর শহিদ আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আলী বলেন, তার কেন্দ্রে ৩৪৮৮ জন ভোটার ছিলেন। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সন্তোষজনক ভোট পড়েছে। আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সড়াবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে বলে জানান দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসাররা। সরেজমিনে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসাররা বলেন, বিএনপি প্রার্থী কেন এজেন্ট দেননি সেটা জানি না। তবে তাদের উপস্থিতি আমরা পাইনি। কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া, জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল বা এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বা নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, কোনো ধরনের বাঁধা বা চাপ সৃষ্টির কোনো ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অনাস্থা এনে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ভোট বাতিল চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির ধানের শীর্ষ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। পাবনা প্রেসক্লাবের পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা। শনিবার বেলা সাড়ে ৯টায় পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ভোট কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস। এ সময় তিনি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, নির্বাচনে হার-জিত থাকবেই। যেকোনো ফল মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষের প্রার্থী নানা অসামঞ্জস্যপূর্ণ কথা রটিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, প্রধান নির্বাচন আমাকে কথা দিয়েছিলেন কোনো বিশৃঙ্খলা, অনিয়মকে ঊর্ধ্বে রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি। পাবনার পুলিশ সুপারও তার কথা রাখেননি। নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ও পরিকল্পিত কর্মকান্ডের কারণেই এ নির্বাচন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করেছে, বাড়িছাড়া করেছে। হাবিব বলেন, প্রহসনের এ নির্বাচনের কারণেই আমি নিজে ভোট কেন্দ্রে যাইনি। এদিকে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের পরপরই পাবনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি অডিটোরিয়ামে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি সেই দল, যে দলের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। জনগণের পাশাপাশি তাদের কর্মীরাও বিশ্বাস করে না। বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব নির্বাচন করতে এখানে আসেননি। তিনি নির্বাচনের নামে বাণিজ্য করতে এসেছেন। নির্বাচনে প্রার্থীর নামে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তার অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। আওয়ামী লীগের এই সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন স্কয়ার গ্রম্নপের পরিচালক, বিশিষ্ট শিল্পপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, পাবনা-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা। জেলা রিটার্নিং অফিসার ও সিনিয়র নির্বাচন অফিসার আবদুল লতিফ শেখ জানান, পাবনা জেলার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা-৪ আসন। এ আসনে দুটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮১ হাজার ১১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৯৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪১৫ জন। ১২৯টি কেন্দ্রে এসব ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এসব ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য দায়িত্ব পালন করেন ২ হাজার ৩০১ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার। পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, কোথায়ও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সবাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট দিয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, ১ হাজার ১শ পুলিশ সদস্য, ১ হাজার ৫৪৮ জন আনসার সদস্য ও আট পস্নাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।র্ যাব সার্বক্ষণিক টহলে ছিল। দায়িত্বে আছে ১৮ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ একাধিক টিম। প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক এমপি ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শামসুর রহমান শরীফ ডিলু না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরে তফশিল ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন।