চার আসনে উপনির্বাচন

ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে তৎপর আওয়ামী লীগ

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

ফয়সাল খান
উপনির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোটপ্রার্থনার পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করছেন তারা। এরই মধ্যে প্রার্থী ও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। গত শনিবার অনুষ্ঠিত পাবনা ৪ আসনের উপনির্বাচনে এর সুফল পেয়েছেন বলে দাবি করছেন নেতারা। বাকি চার আসনের উপনির্বাচনেও এর ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে চারটি সংসদীয় আসনের বিভিন্ন এলকার চা-স্টল থেকে শুরু করে বাজার, বাস, রিকশা, অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই নির্বাচনী আলোচনা চলছে দিনরাত। রাজনৈতিকদলগুলোও নিজেদের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ঘরোয়া বৈঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন চাচ্ছেন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রার্থীদের পক্ষে বেশ জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ভাবছেন অনেকেই। কেননা; বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাদের জন্য এত আয়োজন, সেই ভোটাররা কেন্দ্রে না আসলে সবকিছুই বৃথা। তাই ভোটের চিরচেনা রূপ ফিরিয়ে আনতে সব রাজনৈতিক দলকে আন্তরিক হতে হবে। জানা গেছে, গত ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ১০ আসনের উপনির্বাচন। এতে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হলেও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বিব্রত হতে হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। এই আসনে মোট ভোটারের ৫.২৮ ভাগ ভোট দিয়েছেন। এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম আট আসনের উপনির্বাচনেও ভোটার উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৯ শতাংশ এবং উত্তরে ২৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে আসেন। চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে ২২ ভাগ ভোট পড়েছিল। এ ছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেশ কয়েকটি আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেক কম ছিল। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে চার আসনের আসন্ন উপনির্বাচনকে জমজমাট করতে চায় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিএনপির প্রার্থীকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করায় অনেকটাই ফুরফুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বাকি চারটি আসনের উপনির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন তারা। এরই মধ্যে ভোটের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় ঢাকা-৫ আসনের দলীয় প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনু ও নওগাঁ-৬ আসনে মো. আনোয়ার হোসেন হেলালকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে আওয়ামী লীগ। তফসিল ঘোষণার পর ঢাকা ১৮ ও সিরাগঞ্জ এক আসনের উপনির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দলটি। এসব আসনের উপনির্বাচন পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় পাঁচ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা-৫ আসনে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সমন্বয়কারী হিসেবে সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। নওগাঁ-৬ আসনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তারা নির্বাচনের দলীয় সব বিষয় সমন্বয় করবেন। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও পথসভার আয়োজন করবেন। দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকতে কাজ করবেন এই দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় কাজ শুরু করে দিয়েছেন তারা। সম্প্রতি ঢাকা-৫ আসনে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় উপনির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এবং দলীয় প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম মনুসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় অন্যান্য আলোচনার পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতির বিষয়টিও চলে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেতাকর্মীদের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উৎসাহ দিতে বলেন মির্জা আজম। যে কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ভোটার উপস্থিত হবে, ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পুরষ্কার দেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। এদিকে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে ভোটার খড়ার কারণে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় পরপর তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে। তাই আসন্ন উপনির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনের চিরচেনা রূপ ফিরিয়ে আনতে চান দলের নেতারা। কেননা, এই পাঁচ আসনের উপনির্বাচন শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যাবে দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচন। এসব নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে আসন্ন উপনির্বাচনে সবাইকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেত উৎসাহিত করবে আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলছেন, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনমুখী হওয়া গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকলে ভোটারদের আগ্রহ বাড়ে। বিএনপির নেতারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা না করলে মানুষ স্বঃতস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে আসবে বলেও মনে করেন তারা। দলের পক্ষ থেকে উপনির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নির্বাচনকে নির্বাচনী প্রতিযোগী হিসেবে মনে করি। প্রতিযোগিতার জায়গা থেকেই গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করব। নেতাকর্মীরা প্রতিটি ভোটারের বাড়িতে যাবে। তাদের ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য অনুরোধ করবে, ফলে ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে। প্রতিপক্ষ যদি ভোটের আগে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা দেখায়, তাহলে অবশ্যই ভোটাররা কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন।