শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফের ঋণখেলাপি নীতি শিথিল ব্যাংক খাতে বিপর্যয়ের শঙ্কা

আরও তিন মাস ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপি হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন গ্রহীতারা এ বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
আহমেদ তোফায়েল
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

ঋণখেলাপি নীতিমালা শিথিলতার সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ব্যাংক খাতে নতুন সংকট তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও তিন মাস পরিশোধ না করেও খেলাপি হওয়া থেকে মুক্তি পাবেন ঋণগ্রহীতারা। ফলে টানা এক বছর ঋণ পরিশোধ না করার সুযোগ পাবেন খেলাপিরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

তবে ব্যাংকারদের মতে, যখন অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তখন এ ধরনের সিদ্ধান্তে ব্যাংক খাতের জন্য আত্মঘাতী হবে। এ খাতে নেমে আসতে পারে নতুন বিপর্যয়। তাদের মতে, এ সময়ে অনেক ব্যবসায়ীরই ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে। আবার অনেকের নেই। অনেকের টাকা দেওয়ার মতো সক্ষমতা থাকলেও সরকারের নতুন নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। সে কারণে সবাইকে ঢালাওভাবে এ সুযোগ না দিয়ে বেছে বেছে ঋণখেলাপি নীতিমালা শিথিলতার সময়সীমার পরামর্শ তাদের।

দেশের একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন, শক্তিশালী কিছু ব্যবসায়ী আছেন তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রেসার দিয়ে এসব ছাড়ের নীতিমালা করিয়ে নিচ্ছেন। তারা বলেন, এ মুহূর্তে ৫০ শতাংশের বেশি ঋণগ্রহীতা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে যাচ্ছেন। এ জন্য ঢালাওভাবে এ সুযোগ না দেওয়ার পক্ষে মত দেন ওই ব্যাংকাররা। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তাদের বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম যায়যায়দিনকে বলেন, বিষয়টি হচ্ছে ঋণের টাকা না দিলেও কাউকে খেলাপি করা যাবে না। তারা অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিচ্ছেন। দিনশেষে ঋণের টাকার সুদ থেকে রক্ষা পেতে যাদের সামর্থ্য আছে তারা পরিশোধ করছেন। তিনি বলেন, ওষুধ, পোশাক, টেক্সটাইল ও হাসপাতাল শিল্পে ব্যাংকগুলোর বড় বিনিয়োগ রয়েছে। পরিস্থিতি অনেকটা ভালো হওয়ার কারণে তারা শিথিলতা নীতিমালার মধ্যে না তাকিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করে যাচ্ছেন। যেসব খাত বেশি সমস্যায় আছে কেবল তারাই দিতে পারছেন না। বিশেষ করে হোটেল শিল্পখাত-সেবাখাত বেশি বিপাকে আছে। তবে তার মত,

অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, করোনা সংকটের মধ্যেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন বেশ ভালো। পাশাপাশি দেশের রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্সপ্রবাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সবই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। এসব বিষয় বিশ্লেষণে বলা যায়, দেশের অর্থনীতি এখন ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

ইপিবি সূত্র বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। করোনাকালে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি কিছুটা কম হয়েছে। গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসে কাজকর্মের শ্লথগতির কারণে রপ্তানি আয় বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে গত জুলাই ও আগস্টে রপ্তানি আয় বেড়েছে। জুলাই মাসে ৩০০ কোটি ডলার এবং আগস্টে আয় হয়েছে ৩৩৬ দশমিক ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। এটি ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে বেশি।

অন্যদিকে গত জুলাই পর্যন্ত সময়ে মূল্যস্ফীতি (ইনফ্লুয়েশন) ছিল মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তার আগের বছরের (২০১৯) একই সময়ে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ ছিল। ফলে গত জুলাই মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে। তবে গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, করোনা সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।

তবে নতুন করে ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছে না বলে একাধিক ব্যাংকার যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন। তারা বলেন, একদিকে ব্যাংকের আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে, সে সঙ্গে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়ারও সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে সময় বাড়ানো হবে ব্যাংকিং খাতের জন্য আত্মঘাতী।

তাদের মতে, ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর আগে অবশ্যই ব্যাংকারদের মতামত নেওয়া উচিত। কারণ ব্যাংকাররা জানেন প্রকৃতপক্ষে কারা ক্ষতিগ্রস্ত আর ঋণ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা আছে কাদের। তারা মনে করেন, দেশের ব্যাংকিং খাত ও অর্থনীতির স্বার্থে ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না।

উলেস্নখ্য, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে শিথিলতা আরোপ করা হয়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়, ঋণ পরিশোধ না করলেও গ্রহীতাদের খেলাপি করা যাবে না। এ সুযোগ দেওয়া হয় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ ডিসেম্বরে যে পরিমাণ খেলাপি ছিল তা আর বাড়ানো যাবে না। পরে ব্যবসায়ীদের পরামর্শে এ সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়। সেটি আরও বাড়ানো হলে তা ডিসেম্বরে গিয়ে ঠেকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<113609 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1