শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে বিমান

পাঁচ মাসে লোকসান সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা
আলতাব হোসেন
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় ফ্লাইট বন্ধ হয়ে বিমানের আকাশ ছোট হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ফ্লাইট বন্ধ রাখে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এতে লোকসান গুনতে হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। ভাড়ায় চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করে যা আয় হচ্ছে, ব্যয় তার দ্বিগুণ। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে এক হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে পুরানো ঋণের কিস্তি দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, গত সাড়ে পাঁচ মাস বিমান চলাচল বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে বিমানের স্থায়ী পরিচালনা ব্যয় হয়েছে ৬২৮ কোটি টাকা। উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণেই প্রতি মাসে ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে বিমানকে। এর বাইরে প্রতি মাসে লিজে আনা ছয়টি উড়োজাহাজের জন্য ৯৮ কোটি টাকা, বোয়িং থেকে কেনা উড়োজাহাজের কিস্তি বাবদ ৭০ কোটি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও দেশ-বিদেশের অফিস রক্ষণাবেক্ষণে আরও ২০৩ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সাড়ে ৫ মাসে বিমানের খরচ গুনতে হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

সূত্রে জানা যায়, জুলাই-আগস্টে ২১টি ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে ২৩৫ কোটি টাকা আয় করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ আয়ের বিপরীতে বিমান কর্তৃপক্ষের অপারেটিং লস গুনতে হয়েছে ২৫৭ কোটি টাকা। পুরানো ঋণের কিস্তি

পরিশোধ করতে সরকারি ব্যাংক থেকে এক হাজার কোটি টাকার ঋণ নিতে হয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এ প্রতিষ্ঠানকে। এ নিয়ে এক সোনালী ব্যাংকেই বিমানের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটির ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ পরিস্থিতিতে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

তবে করোনার ক্ষতি ও বিশাল দেনা মাথায় নিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ বিমান। ঢেলে সাজানো হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট। দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে আছে, এমন লাভজনক আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার কথাও ভাবা হচ্ছে। বর্তমানে বিমানের বহরে ১৮টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা ১২টি। বাকি ৬টি লিজে আনা। বহরে আছে ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ সিরিজের ৬টি বিমান। এর মধ্যে গত বছর যুক্ত হয় ড্রিমলাইনার আকাশবীণা ও হংসবলাকা। চলতি বছর যুক্ত হয়েছে গাঙচিল, রাজহংস, সোনার তরী ও অচিন পাখি।

বিমান সূত্র জানিয়েছে, আগামী নভেম্বরেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে নতুন তিনটি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ এনজি মডেলের উড়োজাহাজ যুক্ত হবে। বাকি দুটি যুক্ত হবে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। পুনর্নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বম্বোডিয়ার উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে বলে আশা করছে বিমান।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী যায়যায়দিনকে বলেন, বাংলাদেশ বিমানসহ আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর অবস্থা নাজুক। কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে; কিন্তু বাংলাদেশ বিমান কোনো ছাঁটাই করেনি। করোনায় বিমান ও পর্যটন খাতে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। লোকসান কাটিয়ে লাভে ফিরতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি এবং সিইও মোকাব্বির হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ১৭ রুটের পাশাপাশি আরও নতুন চার আন্তর্জাতিক রুটে ডানা মেলবে বিমান। নভেম্বরের মধ্যেই টরেন্টো, টোকিও, গুয়াংজু ও চেন্নাইসহ নতুন চারটি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট শুরু করবে বিমান। এসব রুটের সঙ্গে কানেকটিং ফ্লাইট করা হবে দিলিস্ন, ব্যাংকক, কাঠমান্ডু। তিনি বলেন, শিগগিরই শীতকালের জন্য নতুন সিডিউল ঘোষণা হবে। এর মধ্য দিয়ে নভেম্বরের মধ্যে বিমানের আকাশ আরও বড় হবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নভেম্বরের মধ্যেই এসব ফ্লাইট চালু হবে।

লোকসানের বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, করোনার কারণে সারাবিশ্বে বিমান চলাচল ৮০ শতাংশ কমে যায়। বিশ্বের সব বিমান পরিবহণ সংস্থাই মোটা অঙ্কের লোকসান গুনছে। আয় না থাকায় বিমান বাংলাদেশকে চলতে হচ্ছে ঋণ করে। ব্যাংক লোনের কিস্তি, ইনসুরেন্সসহ যাবতীয় খরচ করতে হচ্ছে বিমান কর্তৃপক্ষের। বিশ্বে পরিস্থিতি দ্রম্নত স্বাভাবিক না হলে এভিয়েশন খাতে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসবে। করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৪ মার্চ থেকে বিমানের সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এনামুল হক চৌধুরী বলেন, গুয়াংজু, টরেন্টো, টোকিও, চেন্নাই, কলম্বো, মালে, শারজাহ, বাহরাইন ও নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট চালু করলে লাভ করবে বিমান। এছাড়া নতুন রুট চালু ও পুরানো রুটে ফ্লাইট বাড়ানো গেলে লাভে ফিরতে পারবে বিমান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<113719 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1