চট্টগ্রাম

বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা আলুর দাম স্থির

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

হেলাল উদ্দিন চৌধুরী
চট্টগ্রামের আড়তে সাজিয়ে রাখা চাল -যাযাদি
'বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান'- এমন স্স্নোগান এখন শুধুই স্মৃতি। বর্তমানে আলু আর চালের দামে এতটাই পাগলা ঘোড়া কোনটা রেখে কোনটা খায় সে চিন্তায় অস্থির মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামে আলুর দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৫০ ছাড়িয়েছে। সরকারের নানা পদক্ষেপের পরও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। আর চালের দাম ৫০ কেজি বস্তায় বেড়েছে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা পর্যন্ত। করোনার এ \হসময়ে আয় কমে যাওয়া মানুষের স্বাভাবিকভাবেই নাভিশ্বাস উঠেছে। চট্টগ্রামবাসীর কাছে আলু সব ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য একটি সবজি হিসেবে বিবেচিত। মাছ-মাংসের সঙ্গে আলু দিয়ে খেতে সবাই কমবেশি পছন্দ করেন। আবার আলু ভর্তা, আলু ভাজি বা সবজি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া হয়। গরিব ও কম আয়ের মানুষ যারা দুর্দিনে মোটা চাল আর আলুতে ভরসা দেখতেন তাদের অবস্থাও খারাপ। গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটামুটি মানের কোনো চালও কেজিপ্রতি ৫০ টাকার নিচে মিলছে না। আর আলু তো ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে বহু আগেই। বাজারে কাঁচা পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। গত সপ্তাহ থেকে চাল ও সবজির দামে ঊর্ধ্বগতি। চলতি সপ্তাহে এসে কেজিতে আরও বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় গত সপ্তাহেই সবজির দাম মানভেদে বেড়েছিল কেজিতে ১০ টাকা। অন্যদিকে চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। শীতকালীন সবজির দাম রীতিমতো আকাশছোঁয়া। চট্টগ্রামে চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী থেকে মহানগরের পাশাপাশি ১৪টি উপজেলায় চাল সরবরাহ করা হয়। আবার এখান থেকে সিলেটেও যায় আতপ চাল। এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, আটাশ চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আর পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দাম পড়ছে ২৭৫০ থেকে ২৮০০ টাকা। অন্যদিকে আটাশ ২৪০০ টাকা ও নাজিরশাইল প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। চাক্তাই চালপট্টিতে গরিবের মোটা সিদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) প্রায় ৩০০ টাকা, দিনাজপুরী পাইজাম ২০০ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ চাল ১৫০ টাকা, নাজিরশাইল ২০০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ১০০ টাকা, চিনিগুড়া ৩০০ টাকা ও বেতি আতপের দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে চট্টগ্রামের সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজারে গতকাল প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল ৪৮ টাকায়, এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ৩৬ টাকা। এর আগের সপ্তাহে ছিল ৩২ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে এসে আলু ৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, আলুর মজুত কমে আসায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা দাম বাড়িয়ে সরবরাহ করছেন। হিমাগার থেকে চাহিদা অনুযায়ী আলুর সরবরাহ হলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশি দামে পণ্যটি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, আগে নিয়মিত ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক আলু প্রবেশ করত রিয়াজউদ্দিন বাজারে। এছাড়া পাহাড়তলি, কর্নেলহাট, ইপিজেড, কাজিরহাট, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে গড়ে ৫০-৬০ ট্রাক আলু প্রবেশ করত। চট্টগ্রামে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকেই আলু আসে সবচেয়ে বেশি। সরবরাহ কমায় শুধু মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট থেকে আলু আসছে। তবে ভরা মৌসুমে রংপুর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, মুন্সীগঞ্জ, কুমিলস্না, রাজশাহী থেকেও আলু সরবরাহ ছিল। যানবাহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর উৎপাদন ভালো হলেও ব্যাপারী পর্যায়ে দূরের জেলা থেকে চট্টগ্রামে আলু সরবরাহে ব্যাপারী ও কৃষকদের অনীহা ছিল। ফলে মজুত মৌসুমে চট্টগ্রামের বাজারে আলু না পাঠিয়ে কোল্ডস্টোরেজের দিকেই ঝুঁকছেন ওই সব অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন আলু উৎপাদন ও মজুতকারী জেলাগুলো থেকে সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বন্যার কারণে রবি শস্যের ক্ষতির কারণে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এতে আলুর বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। রেয়াজুদ্দিন বাজারের উত্তরা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী জাহেদুল হক বলেন, দুই সপ্তাহ আগেই নতুন মৌসুমের আলু আসার কথা। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আলু আসছে দেরিতে। এ কারণে কোল্ডস্টোরেজ থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে। নগরীর কর্ণফুলী মার্কেটে ছোট বেগুন ৯০ টাকা, শিম ৯০ টাকা, বড় বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি। অন্যদিকে করলা ৭০ টাকা, শসা ৭০ টাকা ও তিত করলা ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব কাঁচা সবজি গত এক সপ্তাহ ধরেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টমেটো ৯০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি ওল কচু, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, পটল, মুলা, নেম আলু, চাল কুমড়া, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। তবে কাঁচা মরিচ আগে ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন কেজিপ্রতি মূল্য ঠেকেছে ১৭০ টাকা। নগরীর বহদ্দারহাটের আরেফিন হোটেলের ম্যানেজার আবু তালেব বলেন, 'সবজির দাম আর মুরগির দাম প্রায় সমান হয়ে যাচ্ছে। অথচ অন্যান্য বছর এ সময়ে নতুন সবজি পাওয়া যেত। দামও থাকত হাতের নাগালে।'