এবার মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই পরের ক্লাসে সবাই

শ্রেণির মূল্যায়ন অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে হ সনদ পাবে জেএসসি জেডিসির পরীক্ষার্থীরা হ পরীক্ষা হবে কারিগরি-অনার্সে

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা
করোনা মহামারির কারণে চলতি বছর (২০২০ সাল) মাধ্যমিক স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই সবাইকে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো মার্কিং বা গ্রেডিং দেওয়া হবে না। সবাই সমান পাস। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মূল্যায়নের বিষয়ে গতকাল দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণের জন্য ৩০ কর্মদিবসে শেষ করা যায় এমন একটি সিলেবাস প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ওই সিলেবাসের আলোকে শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে একটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। সেই অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের শিখন ফলের ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী ক্লাসে তা পূরণের চেষ্টা করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এনসিটিবি তৈরি করা সংক্ষিপ্ত অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের কী ঘাটতি আছে তা দেখা হবে। যাতে পরবর্তী ক্লাসে সেটা পূরণ করা যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, সংসদ টিভিতে এই পাঠ্যসূচি দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছেও তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বরে ৩০ কর্মদিবসে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। স্থানান্তরিত শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অনলাইনে ওয়েবসাইট বা নিকটবর্তী স্কুলের মাধ্যমেও জমা দিতে পারবে। এ মূল্যায়নটার মাধ্যমে যেন কোনো চাপ সৃষ্টি করা না হয়। এ মূল্যায়ন শুধু আমাদের বোঝার জন্য। নভেম্বরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না, সেই আভাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে যেখানে খুলেছিল অধিকাংশ জায়গায় বন্ধ করার পর্যায়ে আছে। আগামী বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে ডা. দীপু মনি বলেন, সামনের বছর এসএসসি ও এইচএসসি আছে, তারা অবশ্যই নিজেরা নিজেদের দায়িত্বে পড়বে। সবার কাছে বই আছে, যতদূর সম্ভব অনলাইনে প্র্যাকটিস করবেন। পরীক্ষা হবে, সময়মতো হলে তো হলোই, না হলে যদি কিছুদিন পরও হয় তাহলেও কিন্তু পরীক্ষা হবে। সেক্ষেত্রে আপনাদের প্রস্তুতিটি ভালোভাবে নিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। জেএসসি পরীক্ষার সনদের বিষয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, কারও কারও জন্য জেএসসির সনদটি খুব জরুরি হতে পারে। কাজেই তাকে সনদটি দেওয়া হবে। এবার যেমন সবাই পরবর্তী ক্লাসে চলে যাচ্ছি, সেভাবেই আমরা সনদে উলেস্নখ করব। সে যে কৃতকার্য হয়েছে বা সে যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শেষ করেছে সেটি উলেস্নখ থাকবে। অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য-এই তিন বিভাগে শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হতো। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অভিভাবক এবং শিক্ষকরা তাদের অ্যাসেসমেন্ট দেখবেন। তারা যে বিভাগে যেতে চাইবে সেভাবে দেওয়া হবে। তারপরও সমস্যা দেখা দিলে খুব বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হলেই ভালো। টিউশন ফির বিষয়ে ডা. দীপ মনি বলেন, যারা চাকরি হারিয়েছেন বা আয়-রোজগার হারিয়েছেন তাদের বলব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মানবিক আচরণ করবে এবং তাদের যতটা সম্ভব ছাড় দেওয়া, না হলে কিস্তিতে টিউশন ফি পরিশোধ করাসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা নিতে হতে পারে। কারিগরি ও অনার্স শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হলেও কারিগরির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হবে। এ শিক্ষা হাতে-কলমে শিখতে হয় বলে তাদের পরীক্ষা দিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে বলে জানান ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, সাধারণ বিষয়ে পরীক্ষা ছাড়া ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হলেও কারিগরি শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। কারিগরি শিক্ষার্থীদের লেখার চেয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেটি না শিখলে তাকে পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন দেওয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে ডিপেস্নামাসহ কারিগরি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন দেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, কারিগরি স্তরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। কারিগরি বোর্ড একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। আমরা পরবর্তী সময়ে তা জানিয়ে দেব। অনার্সের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়া ডিগ্রি দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ এই ডিগ্রি নিয়ে তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবেন। এক্ষেত্রে তাদের কর্মক্ষেত্রেও অন্যভাবে দেখা হতে পারে। ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে আরও যুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক প্রমুখ।