শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু, আজ ষষ্ঠী

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

মন্টি বৈষ্ণব
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে আসছেন। সঙ্গে আসছেন চার সন্তান সরস্বতী, লক্ষ্ণী, গণেশ এবং কার্তিক। জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার পিতৃৃগৃহে আসবেন দোলায়, আর ফিরে যাবেন গজে। আজ ষষ্ঠী, দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। দেবী দুর্গার মূল প্রতিমায় পূজা শুরু। করোনা মহামারির কারণে এবার দুর্গাপূজার বাজনা তেমন না বাজলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে পূজা শুরু হচ্ছে। পাঁচ দিনব্যাপী এই পূজা আগামী ২৬ অক্টোবর, সোমবার বিজয়া দশমীর মাধ্যমে শেষ হবে। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে 'দুর্গাষষ্ঠী', 'মহাসপ্তমী', 'মহাষ্টমী', 'মহানবমী' ও 'বিজয়াদশমী' নামে পরিচিত। দুর্গা নামের মানে হলো 'দ' অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, 'গ' অক্ষরটি পাপ ও ভয় নাশ করে এবং অ-কার শত্রু নাশ করে। এর অর্থ দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ, ভয় ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। পুরাণে আছে, অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচু্যত হয়েছিলেন। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়ার পর দেবীপক্ষের সূচনা হলেও এ বছর আশ্বিন মাস 'মলমাস' হওয়ায় বরাবরের মতো দেবীপক্ষে দুর্গাপূজা শুরু হয়নি। এক মাসে দুটি অমাবস্যা থাকলে তাকে বাংলায় মলমাস বলা হয়। এই মাসে কোনো শুভ অনুষ্ঠান করা যায় না বা হয় না। তাই মহালয়ার ১ মাস ৫ দিন পর আজ থেকে হেমন্ত ঋতুর কার্তিকে ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বুধবার রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে দুর্গোৎসবের প্রতিটি কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাস এক অদৃশ্য শত্রম্ন। এর বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগ খুবই জরুরি। আমি আশা করি, দুর্গোৎসবের প্রতিটি কার্যক্রম আপনারা স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে পালন করবেন।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। একইভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সব নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। সন্ধ্যারতির পরই পূজামন্ডপ বন্ধ :উদযাপন পরিষদ সারাদেশের পূজামন্ডপগুলোতে 'সন্ধ্যারতি'র পর মন্দির ও মন্ডপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানানো হয়। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি 'শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২০' সভার আয়োজন করে। সভায় জানানো হয়, এ বছর দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ২২ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে। শেষ হবে ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে। এর মাঝে সপ্তমীর দিনে করোনা মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। এই সাত দিনে সন্ধ্যারতির পর সারাদেশের পূজা মন্ডপগুলো বন্ধ থাকবে। দেবী দুর্গার ভোগ প্রসাদ ব্যতীত এবার খিচুড়ি বা এই জাতীয় প্রসাদ বিতরণ এবং বিজয়ার শোভাযাত্রা হবে না। তবে প্রতি মন্ডপ থেকে নিজ নিজ বিসর্জন ঘাটে গিয়ে দেওয়া যাবে। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, সন্ধ্যারতি মানে হচ্ছে সন্ধ্যার পর পুরোহিত ধূপ, শঙ্খ, পাখা দিয়ে আরতি দেন। এটি সাধারণত সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেওয়া হয়। এটি দিতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগে। এই সন্ধ্যারতি শুরুর পর থেকেই মন্দির বা পূজামন্ডপে সর্বসাধারণকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। মন্ডপে তখন শুধু মন্দির বা মন্ডপের কর্মীরা থাকবেন। সভা থেকে জানানো হয়, সারাদেশে এবার ৩০ হাজার ২১৩টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর ঢাকা মহানগরে এবার পূজামন্ডপের সংখ্যা ২৩২টি, গত বছর যা ছিল ২৩৮। মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কিশোর রঞ্জন মন্ডল। তিনি বলেন, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ফেসবুক পেজ থেকে দেবী দুর্গার পুষ্পাঞ্জলি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে, যাতে বাড়িতে বসে ভক্তরা অঞ্জলি দিতে পারেন। বিভিন্ন পূজামন্ডপে প্রতিমা ও পূজা অনুষ্ঠান সরাসরি টিভি চ্যানেলগুলো দেখাবে, যাতে বাড়িতে বসে সপরিবারে প্রতিমা দর্শন করতে পারবেন ভক্তরা। সভা থেকে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি নয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- দুর্গাপূজায় তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা, দুর্গাপূজার পাঁচ দিনে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা, প্রধান সড়কগুলোতে জাতীয় পতাকা ও শারদীয় শুভেচ্ছা বাণী টানানো, পূজামন্ডপে ও মন্ডপগামী সব সড়কে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহ রাখা, মন্দির ও মন্ডপমুখী সড়কগুলো মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা, পুজার পাঁচ দিন সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পরিবর্তে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করা এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা।