বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটে দিনে শত কোটি টাকার ক্ষতি

হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম
  ২২ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
সারাদেশে নৌ-ধর্মঘটের কারণে নৌবন্দরে আটকা পড়েছে পণ্যবাহী জাহাজ। বন্ধ রয়েছে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস। অলস সময় পার করছেন নৌযান শ্রমিকরা। ছবিটি বুধবার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে তোলা -যাযাদি

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অলস বসে আছে ৩৭টি মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজ)। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ১২ লাখ টনেরও বেশি পণ্য বোঝাই লাইটারেজ জাহাজ আটকা পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘাটে ঘাটে আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে অলস বসে আছে এসব জাহাজ। এতে দিনে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষতি গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের, যা দেশের আমদানি বাণিজ্যে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস ও মালিক কর্তৃক খাদ্য ভাতা প্রদান, বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, ২০১৬ সালের গেজেট অনুসারে বেতন দেওয়া, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা করাসহ ১১ দফা দাবিতে সোমবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে নৌযান শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে।

দাবি-দাওয়া সুরাহায় বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক হলেও বুধবার বিকাল পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। জানা যায়, গত দুদিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় ১২ লাখ মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে অলস বসে আছে ৩৭টিরও বেশি বিদেশি জাহাজ। নির্ধারিত সময়ের বেশি বন্দরে অবস্থান করায় এসব জাহাজকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা গুণতে হয়। ফলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিদেশি জাহাজ মালিকদের কাছে ইমেজ সংকটের মুখে পড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর।

বিদেশ থেকে মাদার ভ্যাসেলে করে গম, সার, তেল, পাথর, ক্লিংকার ইত্যাদি খোলা পণ্য (বাল্ক) আকারে নিয়ে বন্দরের বহির্নোঙরে আসে। কর্ণফুলী নদীর ড্রাফট কম থাকায় এসব বড় জাহাজ সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই বহির্নোঙরে (সাগরে) অপেক্ষমাণ রেখে ছোট ছোট জাহাজে (লাইটার, ট্যাংকার) খালাস করে নদীপথে বিভিন্ন নদীবন্দর ও শিল্প কারখানার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কর্মবিরতির কারণে এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে না। শুধু খালাসই নয়, সারাদেশে নদীপথে পণ্য পরিবহণ, লোড-আনলোডও বন্ধ রয়েছে। আড়াই হাজারের বেশি লাইটার জাহাজ, অয়েল ট্যাংকার, বাল্ক হেড অপেক্ষমাণ চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দরের আশপাশের নদীতে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরীর বলেন, একটি মাদার ভ্যাসেল একদিন অলস বসে থাকা মানে ১০-১৫ হাজার ডলার বাড়তি খরচ। বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় শুধু নয়, মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই যত দ্রম্নত সম্ভব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা উচিত।

ধর্মঘটে সারাদেশে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমদানিকারকদের হাজার কোটি টাকার পণ্য নিয়ে জাহাজ আটকা পড়েছে। ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল সূত্র জানায়, সারাদেশের ৩৮টি ঘাটে ৮৮৪টি লাইটারেজ জাহাজ ১২ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৮ টন পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছে। এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা কাজ না করায় প্রতিটি জাহাজেরই হ্যাজ বন্ধ রয়েছে। ঘাটে জাহাজ থাকলেও কোনো জাহাজ থেকেই কোনো পণ্য নামানো সম্ভব হয়নি। জাহাজগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গম, ভুট্টা, ডাল, সার, চিনি, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, কয়লা, ভোজ্যতেল ইত্যাদি পণ্য রয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে ৩৭৬টি লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে।

ডবিস্নউউটিসির নিয়ন্ত্রণাধীন ১৯টি মাদার ভ্যাসেলে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৬২৭ টন পণ্য রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বড় আমদানি কারক ও শিল্প গ্রম্নপের আমদানিকৃত ৯ লাখ ৫ হাজার ৩৪১ টন পণ্য নিয়ে ১৮টি মাদার ভ্যাসেল আটকা পড়ে আছে। ৩৭টি মাদার ভ্যাসেল আটকা পড়ায় প্রতিদিনই দেশের আমদানিকারকদের অন্তত সাড়ে ছয় কোটি টাকা ফিঙড অপারেটিং কস্ট বাবদ গচ্ছা দিতে হচ্ছে। লাইটারেজ জাহাজের কার্যক্রম শুরু না হলে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ এই ৩৭টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস সম্ভব হবে না। প্রতিদিনই অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) চিঠি দিয়েছেন।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, পণ্যবাহী নৌযান ধর্মঘটে আমদানিকারক, শিপিং এজেন্ট, শিল্পোদ্যোক্তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার প্রভাব শেষ পর্যন্ত ভোক্তা বা সাধারণ মানুষের ওপরই আসছে।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নবী আলম বলেন, 'যতক্ষণ ১১ দফা দাবি মানা হবে না ততক্ষণ ধর্মঘট চলবে। দুই বছর ধরে আমাদের এ আন্দোলন চলছে। ঢাকায় দীর্ঘ বৈঠকে মালিকপক্ষ রাজি হয়নি। আমাদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। শ্রমিকরা বিক্ষব্ধ। আমরা আর সময় দিতে পারব না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116080 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1