যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন

জরিপ ও ভোটারদের পছন্দে ট্রাম্পকে ছাপিয়ে বাইডেন

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেন
আগামী তিন নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর এ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ছাপিয়ে ততই জনপ্রিয়তা বাড়ছে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের। নির্বাচনের আগে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ইসু্যতেই ভোটারদের কাছে পছন্দনীয় হয়ে উঠেছেন 'লড়াকু' এই ডেমোক্রেটিক প্রার্থী; যিনি বার বার ব্যর্থতার পরও উঠে এসেছেন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স নির্বাচনের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এসেও 'দ্য নিউইয়র্ক টাইমস' এবং নিউইয়র্কের একটি লিবারেল আর্টস কলেজ পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। গুরুত্বপূর্ণ ইসু্যগুলোতে ট্রাম্পের চেয়ে বড় ব্যবধানে ভোটারদের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেশি সমর্থন পেয়েছেন বাইডেন। আবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে ভোটাররা ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনেই বেশি আস্থা রাখছেন। এ ক্ষেত্রে বাইডেন এগিয়ে আছেন ৬ পয়েন্টে। এছাড়া দেশকে একতাবদ্ধ রাখার প্রশ্নেও মার্কিনিরা বাইডেনকে বেশি যোগ্য মনে করছেন। এক্ষেত্রে প্রায় ২০ পয়েন্ট বেশি সমর্থন আছে বাইডেনের ঝুলিতে। সব মিলিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হয়ে উঠেছেন 'সবচেয়ে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।' অথচ ব্যক্তিগত জীবনে ট্রাজেডির কারণে ডেলাওয়ারের সাবেক এই সিনেটর একাধিকবার রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। হোয়াইট হাউসের দৌড়েও বাইডেন এবারই প্রথম নন। বরং আরও দুইবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছেড়ে না দেওয়ার মানসিকতা তাকে বার বার যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এবারের নির্বাচনে জয় পেলে ওবামা আমলে দীর্ঘ আট বছর ভাইস-প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা জো বাইডেনই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। এর আগে জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ভাইস প্রেসিডেন্টের তকমা দিয়েছিলেন বারাক ওবামা। ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে নেমেছিলেন বাইডেন। কিন্তু সেবার ওবামার কাছে হেরে যান তিনি। পরে তিনি ওবামার 'রানিংমেট' হন এবং আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ওই আট বছরে নানা নীতি নির্ধারণীতে দৃঢ়ভাবে প্রেসিডেন্ট ওবামার পাশে থেকে নানা পরামর্শ দিয়ে গেছেন বাইডেন। তার সেই ভূমিকার কথা বলতে গিয়েই ওবামা বলেছিলেন, 'তিনি (বাইডেন) এখন পর্যন্ত পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ভাইস প্রেসিডেন্ট।' ওবামা সবসময় 'ভাই' বলে সম্বোধন করতেন বাইডেনকে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থার কেন্দ্রে অবস্থান করায় বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ে বাইডেনের ধারণা খুব স্পষ্ট। তাই রাজনীতিতে ওবামার যেটুকু অনভিজ্ঞতা ছিল তা তিনি খুব সহজেই পূরণ করতে পেরেছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা জো বাইডেন 'মিডল ক্লাস জো' নামেও পরিচিত। তার এ পরিচয় যুক্তরাষ্ট্রের 'বস্নু-কলার' শেতাঙ্গ ভোটারদের দলে টেনেছিল, ওবামার জয়ে যাদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের 'বস্নু-কলার' বলা হয়। ডেলাওয়ার থেকে টানা ছয় মেয়াদে সিনেটর নির্বাচিত হওয়া জো বাইডেন ১৯৭২ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হন। অনেকদিন ধরেই ওই আসনে থাকা রিপাবলিকান সিনেটর জেমস কেইলব বোগসকে হারিয়ে ৩০ বছরের বাইডেন রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। অথচ সেবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের ভরাডুবি হয়েছিল। বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর। ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তিনি প্রথমবার প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালের ৯ জুন ওই ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলে তিনি তরতর করে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিন মাসের মাথায় বক্তৃতা চুরি করার কেলেঙ্কারি স্বীকার করে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচনে জয়ী হলে প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের কিছু নীতি পাল্টে সেখানে ওবামার আমলের নীতি ফেরত আনার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। যার অন্যতম 'ড্রিমার্স' সুরক্ষা নীতি। শিশু বয়সে বাবা-মার সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ব্যক্তিদের 'ড্রিমার্স' বলা হয়। তাদের সুরক্ষায় ওবামা যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন বাইডেন সেই নীতি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। এছাড়া ট্রাম্প আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন কমিয়ে ফেলার যে নীতি গ্রহণ করেছেন বাইডেন তা প্রত্যাহার করা এবং মুসলমান অধু্যষিত দেশগুলোতে আরোপ করা ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথাও বলেছেন। এছাড়া বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে বাইডেন সবার আগে জাতীয় নানা বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি ন্যাটো এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। ট্রাম্পের আমলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ বেড়েছে। চীনের বিষয়ে বাইডেনের নীতিতেও বেইজিংয়ের জন্য খুব একটা আশা জাগানিয়া কিছু নেই। বাইডেন চীনের বিষয়ে বলেছেন, চীনকে অবশ্যই পরিবেশ ও বাণ্যিজ্য নিয়ে তাদের অন্যায্য আচরণের জবাবদিহি করতে হবে।