বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
চট্টগ্রাম

সবকিছুই স্বাভাবিক করোনা যেন নেই

হেলাল উদ্দিন চৌধুরী
  ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

বিপণি কেন্দ্র, কাঁচাবাজার, রাস্তাঘাট, গণপরিবহণ কিংবা অফিস-আদালত সর্বত্রই মানুষের মধ্যে করোনার ভয় থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো গরজ নেই। মাস্ক ব্যবহারও কমে গেছে অনেকটা। এ পরিস্থিতিতে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখিতার কথা।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার ৩৭৫টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত রোগী মারা গেছে ৩০১ জন। মাঝে বেশ

কিছুদিন সংক্রমণের হার কম থাকলেও অক্টোবরের শুরু থেকে তা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে করোনা শনাক্তের হার ছিল গড়ে ১০ শতাংশ। এর আগে মাসের প্রথমদিন ১ অক্টোবর শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। ৩ অক্টোবর তা বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ৬ অক্টোবর ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও শীত মৌসুম সামনে হওয়ায় আগামী দিনগুলোতে করোনা পরিস্থিতি আবারও বিপজ্জনক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, গত মাসের তুলনায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। চলতি মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গড়ে সাড়ে ৮ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশের মধ্যে। গত মাসের তুলনায় তা বেশি।

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছে সড়ক ও বাজারেও। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও। অনেকেই পরছেন না মাস্ক। মার্কেট ও বিপণিবিতানে একসময় স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাদি দিয়ে জীবাণুনাশক দেওয়া হলেও এখন সবই অকেজো। যেন কোথাও স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের শুরুতে কাজিরদেউড়ি বাজারে প্রবেশ গেটে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবস্থা করা হয়। এর কিছুদিন পর থেকে অকেজো অবস্থায় পড়ে ছিল ওই স্প্রের যন্ত্র। বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে এখন নেই কোনো নিয়মনীতি। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও।

একইভাবে রেয়াজুদ্দিন বাজারের কাঁচাবাজার একসময় সরিয়ে পুরানো রেলস্টেশন চত্বরে নেওয়া হলেও অনেক আগেই তা ফিরেছে আগের ঘিঞ্জি জায়গায়। ফলে বাজারে ক্রেতারা ভিড় করেই কেনাকাটা করছেন।

টেরি বাজারের বিক্রয়কর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'পেটের দায়ে মার্কেটে কাজ করতে এসেছি। এখন পরিস্থিতি যেমন যাচ্ছে তা মেনে নিতে হচ্ছে। পূজার কেনাকাটায় অনেক ভিড়। মার্কেট খোলার পর প্রথমদিকে অনেকে সতর্ক থাকলেও এখন বেশিরভাগই পরোয়া করছে না।'

চট্টগ্রামে ওষুধ সামগ্রী বিক্রির বৃহত্তম পাইকারি বাজার হাজারিগলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা শুরুর পর জুন-জুলাই পর্যন্ত সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা ছিল বেশি। মাস্ক, গস্নাভস, স্যানিটাইজার- এসবের বিক্রি এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। এ কারণে দামও কমেছে। হাজারি গলির চৌধুরী ফার্মেসিতে গিয়ে দেখা যায়, ওষুধ কিনতে মানুষের ভিড়। ৮ বিক্রয়কর্মীসহ দোকানের ভেতরে-বাইরে ৩০ এর অধিক মানুষ। এর মধ্যে মাত্র ৪ জুনের মুখে মাস্ক। দোকানদার ও বিক্রয়কর্মীদের একই জবাব, মাস্ক পরতে বললে মানুষ উল্টো কথা বলে। যেন দেশ থেকে করোনা চলে গেছে।

নগরীর অনেক বিপণিকেন্দ্রের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হলেও ক্রেতাদের সেদিকে কোনো আগ্রহ নেই। মার্কেটের ভেতরেও একই অবস্থা। আগ্রাবাদ সরকারি কার্য ভবনে অনেক সরকারি অফিস। কেউ কেউ মাস্ক পরা থাকলেও স্যানিটাইজ ব্যবস্থা এখানেও পুরোপুরি অকার্যকর।

তবে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো কিছুটা ব্যতিক্রম। মাঝখানে কিছুটা শৈথিল্য থাকলেও গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্যানিটাইজ ব্যবস্থা কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষের মতে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না। চলতি মাসের শুরু থেকে রোগী বাড়ছে। পরিস্থিতির অ্যাপিডেমিওলজিক্যাল বিষয়টি চিন্তা করলে, এটা উন্নতির লক্ষণ নয়। মনে হচ্ছে, আবারও সংক্রমণ বাড়ছে। তবে মৃতু্যর হার কমেছে।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116231 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1