পাবনায় সর্বত্র মাস্কবিহীন মানুষের আনাগোনা বেড়ে চলেছে। অফিস- আদালত, দোকানপাট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, খোলা জায়গা, কাঁচাবাজার, হাসপাতাল, ক্লিনিক সব জায়গায় মাস্কবিহীন মানুষের চলাফেরা লক্ষণীয়। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য প্রশাসনের নেওয়া নানা উদ্যোগ কোনো কাজে আসছে না। মাস্ক না পরার কারণে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে সচেতন মহল।
বৃহস্পতিবার মধ্যদুপুরে পাবনা পৌরসভা চত্ব্বরে দেখা গেল নাগরিক সুবিধা নিতে নানা বয়সি অনেক
নারী-পুরুষের জটলা। স্বাস্থ্য পরিদর্শক, হিসাব শাখা, পানি সরবরাহ শাখা, ডিজিটাল সেন্টার, কাউন্সিলরদের কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি অফিস ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। কারো কারো মাস্ক থুতনির নিচে ঝুলতে দেখা গেছে।
পৌরসভার সেনিটারি ইন্সপেক্টরের কার্যালয়ে তিনিসহ মাস্কহীন লোকজনের আনাগোণা দেখা যায়। এই সেকশনের অধিকাংশের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। প্রবেশের দরজায় মাস্ক পরার জন্য নোটিশ থাকলেও নোটিশদাতারাই মাস্ক ছাড়া বসে আছেন। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে কর্মরতরা বলেন, সমস্যা নেই। মাস্ক না পরলে কিছুই হবে না।
একইদিন পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মূল বিল্ডিংয়ের প্রবেশ দরজায় দেখা যায়, থার্মালমিটার নিয়ে বসে আছেন এক কর্মচারী। আরেকজন মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। ভবনটির নীচতলায় বিআরটিএ অফিস। অফিসের তথ্যকেন্দ্র, ফিঙার ও আইরিশ রুমসহ বিআরটিএ কর্মকর্তার দপ্তরের সামনে শতাধিক মানুষের ভিড়। যাদের অধিকাংশদের মুখে মাস্ক নেই। ডিসি অফিসের বিভিন্ন রুমে যারা বসে অফিস করছেন, তাদের কয়েকজনের মুখেই মাস্ক ছাড়া সেবা দিতে দেখা যায়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অ্যাডভোকেট বার সমিতির পুরাতন কার্যালয়। সেখানেও উকিল, মোক্তারসহ ভুক্তভোগীদের ব্যাপক আনাগোনা থাকলেও মাস্ক পরায় যেন আপত্তি অধিকাংশের। জজকোর্টের সামনে অ্যাডভোকেট বার সমিতির বহুতল ভবনের প্রত্যেক তলাতেই একই অবস্থা। পৌনে ১২টায় জুডিশিয়াল কমপেস্নক্স ও জজকোর্ট এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিচারপ্রার্থী যারা এসেছেন তাদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। শুধু আদালতকক্ষে ঢোকার সময় কোনোরকম ভাবে মাস্ক সাঁটিয়ে নিচ্ছেন মুখে।
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ গেট থেকে আলিয়া মাদ্রাসা, আব্দুল হামিদ রোড, শহর টু বাসটার্মিনাল, অনন্ত মোড়, বড় বাজার, সদর হাসপাতাল রোড, পৈলানপুর টু চাঁদমারিসহ বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ রিকশা, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিক ভ্যান, সবুজ সিএনজি, মোটরসাইকেল যাত্রী ও আরোহীদের মুখে মাস্ক নেই। অনেক পথচারী হাঁটছেন, অথচ তাদের মুখে কোনো মাস্ক নেই।
পাবনার কয়েকটি অত্যাধুনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিক ঘুরে দেখা যায়, কেউ মাস্ক পরেছেন, কেউ মাস্ক কানে বাঁধিয়ে থুতনি ঢেকে চলাফেরা করছেন। মাস্ক যেন তাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের বাইরে ও ভেতরের চিত্রটা প্রায় এক। যারা রুমের ভেতরে, তাদের মুখেও অনেকের মাস্ক নেই। আর যারা বারান্দায় রয়েছেন তাদের তো কোনো কথাই নেই। কর্তব্যরত কয়েকজন নার্সের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যখন রোগীর কাছে ভিজিটররা যান, তখন মাস্ক পরেন। সরে এলেই তারা মাস্ক খুলে ফেলেন।
এদিকে শহর ও আশপাশের বিভিন্ন ছোট-বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, চায়ের দোকানগুলোয় কোনো ধরনের মাস্ক ব্যবহার করছেন না দোকানে বসা লোকজন। তাদের অভিমত, করোনা চলে গেছে। আর করোনা আমাদের কিছু করতে পারবে না। মাস্ক না পরলেও তারা সচেতন এমন দাবী তাদের।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপকালে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মেহেদী ইকবাল বলেন, প্রত্যেক মানুষকে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নানাভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি অনুরোধ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া আর শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চললে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের মতো কাজ করবে। কিন্তু মানুষ তাদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছে। তার দাবি, অনেক প্রচার-প্রচারণায় মাস্ক পরার হার শতকরা একেবারেই নিম্নপর্যায়ে রয়েছে।