নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহার

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
এগারো দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনরত পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের মূল দাবি 'খোরাকিভাতা' মেনে নেওয়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নৌযান শ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ধর্মঘট প্রত্যাহার ঘোষণা দেন। নৌযান শ্রমিক নেতারা জানান, বৈঠকে শ্রমিকদের খাদ্যভাতা (খোরপোশ) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছোট নৌযানের জন্য ১০০০ টাকা, ১০০০-১৫০০ টনের নৌযানের জন্য ১২০০ টাকা এবং ১৫০০ টনের বেশি ওজনের নৌযানের জন্য ১৫০০ হাজার টাকা খাদ্যভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ অবস্থায় তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে সোমবার খোরাকিভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে শ্রমিক ধর্মঘটে সারা দেশের নৌপথে পণ্য পরিবহণে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এতে সমুদ্রবন্দরগুলোতে খালাস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ঘাটে ঘাটে পণ্য নিয়ে অলস বসেছিল লাইটার জাহাজ। পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের বিষয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, 'নৌ শ্রমিকরা যে দাবি করেছেন, তাদের মূল দাবি হচ্ছে খোরাকিভাতা। এটা অবশ্যই তাদের ন্যায্য দাবি, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গত এক বছরে তারা দুবার এই ধরনের ধর্মঘটে গেছেন। আমরা আলোচনা করে এটার একটা সমাধান করেছি। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা অসহায়। তারা শ্রম দিয়ে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে। মালিক-শ্রমিকদের সম্পর্ক থাকবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও হৃদ্যতাপূর্ণ।' বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে নৌযান শ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের আগে দু'পক্ষই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসেন। নৌযান মালিকরা জানান, আগে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলে তারা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। এ সময় নৌযান শ্রমিকরাও তাদের এগারো দফা দাবির মধ্যে অন্তত খোরাকিভাতা দেওয়ার দাবি মেনে নিলে ধর্মঘট তুলে নেওয়ার আভাস দেন। পরবর্তীতে বৈঠকে দু'পক্ষের মধ্যে সমঝোতায় শুধুমাত্র খোরাকিভাতা দেওয়ার দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে শ্রমিক নেতারা জানান, আপাতত তারা একদফা দাবি মেনে নেওয়ায় ধর্মঘট তুলে নিলেও পরবর্তীতে তারা বাকি ১০ দফা দাবি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিজয়নগরের আকরাম টাওয়ার বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল অ্যাসোসিয়েশনের সভা কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাবেক সহ-সভাপতি মো. খুরশিদ আলম বলেন, 'শ্রমিক নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকা কিছু কর্মচারীবৃন্দ দেশের চলমান অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার জন্য নেতিবাচক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।' শ্রমিকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, '২০১৬ সালে সরকারি কর্মচারীদের বেতন স্কেলের বেতন, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, ইনক্রিমেন্ট, ধোলাই ভাতা ও উৎসব বোনাস, গ্রাচুইটি, ছুটির বেতন, রান্না করার জ্বালানি, মালিক কর্তৃক বাবুর্চি নিয়োগ, তেল-সাবানসহ সকল সুবিধা দেওয়া হয়। সে গেজেট ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আর মাত্র কয়েকটা মাস, তারপর তো আলোচনা করতে পারেন শ্রমিকরা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্যপরিষদের খাদ্যভাতাসহ অন্যান্য দাবি এই প্রেক্ষাপটে অসৌজন্যতার শামিল।' প্রসঙ্গত, সোমবার মধ্যরাত থেকে পণ্য ও তেলবাহী নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার এ ধর্মঘট শুরু করে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবিগুলো ছিল- বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা; ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান; ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান; সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ; এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্র্র্নির্ধারণ; কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ; প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান; নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন; মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা; নৌপরিবহণ অধিদপ্তরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।