শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষির ক্ষতি কার্তিকের শেষে আসবে শীত

আলতাব হোসেন
  ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টিতে জবুথবু হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা -ফোকাস বাংলা

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আকাশ ছিল গুমোট। নির্মল আকাশে থোকা থোকা মেঘের ভেলা। মেঘের আড়ালে থাকা সূর্য তার তেজ দেখাতে পারেনি। উজ্জ্বল ঝলমলে অপূর্ব রোদের দেখা যায়নি, ছিল না খরতাপ। দুপুর গড়াতেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে অঝোর ধারায়। বাংলার ঋতুবৈচিত্রে কার্তিক মাসে হালকা বৃষ্টির পর শীতের দেখা মিলে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃষ্টির মাত্রা আরও কয়েকদিন বাড়তে পারে। এরপর কার্তিকের শেষে নামতে পারে শীত।

আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ ফরমান আলী যায়যায়দিনকে বলেন, আবহাওয়া ক্রমেই বৈরী আচরণ করছে। সময়ে বৃষ্টির দেখা মিলে না, অসময়ে বৃষ্টির বাড়াবাড়ি চলছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ২৭৯ মিলিমিটার। ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৮৭ মিলিমিটার। সঙ্গে ছিল মৃদু শীতল হওয়া। আষাঢ়-শ্রাবণেও দেখা মিলেনি এমন বৃষ্টিপাতের। এমন বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

মাথায় হাত পড়েছে সবজি চাষিদের। মাঠে আগাম আমন ধান প্রায় পাক ধরেছে। এদিকে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে অনেক এলাকায় ধান গাছ নুয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত যায়যায়দিনকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মৌসুমি বায়ুর দিক পরিবর্তনে বৃষ্টি হচ্ছে। হেমন্তের এই বৃষ্টি অস্বাভাবিক। এই বৃষ্টি কৃষির ব্যাপক ক্ষতি করছে। অতিবৃষ্টির ফলে বিশেষ করে উঠতি আলু, পেঁয়াজ, সবজি ও আগাম আমন ধানের ক্ষতি হবে। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতিবৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ বিপদে পড়ছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সমুদ্রবন্দরসমূহকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের কারণে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। অধিদপ্তর থেকে কৃষি-বিষয়ক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো. আসাদুলস্নাহ যায়যায়দিনকে বলেন, অসময়ে প্রায় প্রতিদিনই দেশের ২০০ উপজেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। সারাদেশে এক লাখ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়। দীর্ঘ বন্যার পর এবার অতিবৃষ্টিতে অনেক এলাকায় সবজি নষ্ট হচ্ছে। তিন হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু লাগানো হয়েছে। বৃষ্টির জন্য আলু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবহাওয়া কৃষির জন্য বৈরী হয়ে ওঠছে। আগাম জাতের আমন ধানের ক্ষতি হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে মাঠপর্যায় থেকে। আশা করছি, বৃষ্টি দীর্ঘায়িত না হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে না।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, এখন বাংলা মাস কার্তিক। অগ্রহায়ণের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি। শিশিরের মতো নীরবে আবির্ভাব। ষড়ঋতুর দেশে নবান্নের সুবার্তা নিয়ে আসে কার্তিক। ফসলের খেতে সোনারঙ্গা হাসির আভা ছড়িয়ে দেয়। এই মাসেই শীতের আবাহন জাগে। সকালে সবুজ ঘাসের ডগায় দেখা মেলে বিন্দু বিন্দু শিশির কণা। আবহাওয়া অফিস বলছে, শিগগিরই আসছে শীতের আমেজ। গ্রামের দিকে বিকালে আর শেষ রাতে অনুভূত হচ্ছে শীতল আমেজ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে কার্তিকের পর অগ্রহায়ণ পেরিয়ে পৌষ-মাঘ শীতকাল ধরা হলেও এবার কার্তিকের প্রথম সপ্তাহে শীত শীত অনুভূত হচ্ছে। দিনে গরম, রাতে শীতল হাওয়া বলে দিচ্ছে- শীত আর দূরে নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, কমতে শুরু করেছে দেশের তাপমাত্রা। সপ্তাহ-তিনেক পর মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কমে গিয়ে বাতাস বইতে পারে উত্তর দিক থেকে। এই বাতাসই হিমালয় পাড়ি দিয়ে শীত নিয়ে আসবে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে।

বাতাসে এখন হিমের ছোঁয়া। ষড়ঋতুর এই দেশে শীতের আগের ঋতুটি হেমন্ত। এই সময় প্রকৃতিতে চলে বর্ষার বিদায় আর শীতের আগমনের প্রস্তুতি। প্রকৃতিতে শীত আসে একটু একটু করে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে লাল টকটকে হয়ে ওঠে চিলেকোঠার টবের লাল গোলাপ। শীতের শুষ্ক প্রকৃতির অপবাদ ঘোচাতে এই সময় গাঁদা, মলিস্নকা, গোলাপ, ডালিয়া, কসমস ফিরে পায় পূর্ণ জৌলুস ও গাঢ় হয় কলাপাতার রঙ। রহস্যময় কুয়াশায় প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে ছাতিম আর শিউলি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। চিরচেনা সেই গন্ধই জানিয়ে দিচ্ছে শীতের বারতা। শিউলির প্রলোভনেই হেমন্তের হাত ধরে আসে শীত।

আকাশে এখন সাদা মেঘের ওড়াউড়ি। কার্তিকের জোছনা দেখলে যে কারোরই মনে হতে পারে, কেউ একজন দুধের পেয়ালা উপুড় করে ঢেলে দিয়েছে যেন। রাত নেমে এলে গভীরে, জোছনা পাগল করে নদীরে। কাব্য রসিকরা বলেন, ধবল জোছনার হাতছানিতে কার্তিকের শান্ত নদীও নর্তকী হয়। খেতের ধান পাকে এই কার্তিকেই। নবান্নের আয়োজন সম্পন্ন করার সময় এখন। খেসারি আর কলাই ফুল বাড়ির পাশের মাঠকে পূর্ণ যৌবনবতী ললনার মতো পরিপূর্ণ করে।

গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সকাল ও সন্ধ্যায় দূরের পথে কুয়াশার মতো অন্ধকার দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ কুয়াশার আগমন সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বাতাসে ধূলিকণা জমে যাওয়ার কারণে কুয়াশার মতো অনুভূত হচ্ছে। এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ আবুল হামিদ যায়যায়দিনকে জানান, আবহাওয়া ক্রমেই বৈরী আচরণ করছে। সময়ে বৃষ্টির দেখা মিলে না, অসময়ে বৃষ্টির বাড়াবাড়ি চলে। এশিয়ার দেশগুলোতে বছরে একাধিকবার ফসল উৎপাদনের কারণেই আকাশে ধুলোর আস্তরণ জমে। কয়েক দিন ধরে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালেও এমন ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। ভারতের দিলিস্ন থেকে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য হয়ে ঘন কুয়াশার আবরণটি বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এই আবরণটি ভয়াবহ বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশেও এমন কুয়াশা পড়েছে। ধুলো মেঘের কারণে সূর্যের আলো নিচে নামতে পারছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116240 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1