বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় ভোগান্তি

কর্তৃপক্ষের দাবি চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে রোগীরা
জাহিদ হাসান
  ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে যশোর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন আম্বিয়া খাতুন (৬৫)। সেখানে নমুনা দেওয়ার তিনদিন পর করোনায় আক্রান্ত জানতে পারেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। ওই মুহূর্তে করোনা ইউনিটে কোনো শয্যা ফাঁকা নেই বলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানানো হয়। গুরুতর অসুস্থ রোগীকে নিয়ে বিপাকে পড়া স্বজনেরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে আম্বিয়া খাতুনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের পরিচিত এক চিকিৎসকের সুবাদে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ শুধু আম্বিয়া খাতুনই নয়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে করোনাভাইরাসের সেবা নিতে এসে অনেকেই এমন

ভোগান্তিতে পড়ছেন।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা জানা যায়, হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স আয়া, ওয়ার্ডবয়দেরকে একই সঙ্গে (রোস্টার পদ্ধতিতে) কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। আর প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় কোভিড-১৯ রোগীর সেবায় অনেকের অনীহা রয়েছে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে হাসপতালের করোনা ইউনিটে ভর্তির জন্য এলে শয্যা সংকটের দোহাই দিয়ে অনেককে কোভিড-১৯ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বহির্বিভাগে আসা করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের টেস্টের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সিরিয়াল বিড়ম্বনা এড়াতে অন্যত্র যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় পৃথক হাসপাতাল থাকলেও সোহরাওয়ার্দীতে একই সঙ্গে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে চিকিৎসক-নার্সদের ও আয়া-ওয়ার্ডবয়দের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। তারপরও সবকিছু মেনে নিয়ে তারা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আম্বিয়া খাতুনের সঙ্গে থাকা মেয়ে হালিমা খাতুন যায়ায়দিনকে বলেন, মাকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তাকে দেখভাল করছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসায় তারও করোনা প?রীক্ষা জরুরি হয়ে পড়ছে।। এ জন্য ৫ দিন আগে হাসাপাতালের বহির্বিভাগের ট্রায়াজ রুমে করোনার পরীক্ষার স্যাম্পল দিলেও ১৪ দিন পর যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। অথচ চিকিৎসকরা রোগীকে (মা) দু'য়েক বেলার ম?ধ্যে রিলিজ দেওয়ার কথা বলছেন। এতে নিজের করোনা টেস্টের প্রয়োজন হলেও সিরিয়াল বিলম্বের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

করোনা ওয়ার্ডের ১৬ নং শয্যায় ভর্তি থাকা গোপালগঞ্জের আলেয়া বেগমের ছেলে ইলিয়াস যায়যায়দিনকে বলেন, অনেক চেষ্টা তদ্বিরের পর তার মাকে ভর্তি করাতে পেরেছেন। চিকিৎসকরাও ভালো সেবা দিয়েছেন। তবে সংক্রমণ আতঙ্কে নার্স-ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা রোগীর কাছে আসতে চান না। এখানে এসে বুঝতে পারছেন মূলত অবহেলার কারণে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীরা মারা যাচ্ছেন।

নারায়ণগ?ঞ্জ থেকে করোনা আক্রান্ত বোনের চিকিৎসা করাতে আসা হুসনা বেগম যায়যায়দিনকে বলেন, করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি তার বোনের চিকিৎসায় উচ্চমূল্যের মক্সাক্লেভ ১.২ ইনজেকশন ছাড়াও আন্যান্য ওষুধ কিনতে এখন পর্যন্ত ৩০ হজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। মহামারি রোগের সেবায় সব ওষুধ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিলে ভোগান্তি কম হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, রোগীর চিকিৎসায় প্রতি?দিন ৬টা ক?রে ২০০ টাকা মূল্যের ৫৪টা আকার?ভিয়া ট্যাব?লেট কিনতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে?ছে। সরকারি হাসপাতালে এসেও চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে কষ্ট হচ্ছে যা গরিব রোগীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া যায়যায়দিনকে বলেন, তিন মাস আগে কীট সংকট থাকলেও এখন নেই। বর্তমানে আরটি পিসিআর মেশিন ৮০টির মতো নমুনা পরীক্ষা ছাড়াও জিন এক্সপার্ট মেশিনে দিনে ৩৫ থেকে ৪০টা নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। হাসপাতালে একটি ওয়েব সাইটেও রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ডা. উত্তম বড়ুয়া আরও বলেন, বহির্বিভাগে করোনা সন্দেহভাজন রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় ইনডোর, আউটডোর রোগী ও স্টাফদের জন্য তিন ভাগে দিনে ১২০ থেকে ১৩০ জনের সিরিয়াল দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে ২২ শয্যাবিশিষ্ট কোভিড-১৯ সাসপেক্টেটেড ওয়ার্ডে সব রোগীর পরীক্ষা করা হচ্ছে। সার্জারি ও গাইনি বিভাগের রোগীদের করোনা টেস্ট হচ্ছে। এর বাইরে স্টাফদের আত্মীয়, পুলিশ, সাংবাদিক ও ভিআইপিসহ অনেকের অনুরোধ রাখতে হচ্ছে। ফলে বহির্বিভাগে আসা রোগীদের ওপর পড়ছে।

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে মেডিসিনের রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। বিএসএমএমইউতে রোগীদের সার্জারি হচ্ছে না। কুর্মিটোলা জেনারেল ও মুগদা হাসপাতালে নন-কোভিড রোগীদের চিকৎসা হচ্ছে না। এতে সোহরাওয়ার্দীতে চাপ বেড়ে গেছে।

দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো কোভিড ও নন-কোভিড ওয়ার্ডে সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্সরা এক সপ্তাহ কোভিড ইউনিট ডিউটি শেষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থেকে পরের সপ্তাহে নন-কোভিডে সেবা দিচ্ছেন। এর আগে হাসপাতাল করোনা ইউনিট চালুর পূর্বে কিছুসংখ্যক এনেসথেশিয়ার চিকিৎসক কোভিড হাসপাতালে নিলেও তাদের ফেরত পাঠানো হয়নি। এছাড়া আগস্টের পর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোভিডের চিকিৎসায় জড়িত চিকিৎসক-নার্সদের জন্য বরাদ্দ না রাখায় নিজ দায়িত্বে হোটেলে থাকছেন। যার কিছুটা প্রভাব রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় পড়ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116328 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1