শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাম্প-বাইডেন শেষ বিতর্ক

দুজনই ছিলেন সংযত উত্তাপ করোনা ও বর্ণবাদে

যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মুখোমুখি বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন -ইন্টারনেট

আগামী ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে মুখোমুখি শেষ বিতর্কে বেশ 'সংযত' আচরণ দেখিয়েছেন রিপাবলিকানপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্রেটপ্রার্থী জো বাইডেন। তবে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। চীন থেকে উত্তর কোরিয়া, করোনাভাইরাস থেকে বর্ণবাদ, বিতর্কে উঠে এসেছে সব প্রসঙ্গই। তবে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে করোনা ও বর্ণবাদ ইসু্যতেই। বৃহস্পতিবার টেনেসির ন্যাশভিলে অনুষ্ঠিত এ বিতর্কে দুই প্রার্থী নিজেদের কার্যক্রমের পক্ষে সাফাই গাওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও এনেছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা

জো বাইডেন ট্রাম্পকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, আর চার বছর তিনি ক্ষমতায় থাকলে যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। অন্যদিকে ট্রাম্পের বক্তব্য, জো বাইডেনের ছেলে হান্টার ইউক্রেন এবং চীনের সঙ্গে অবৈধভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে। বাইডেনও সেই অর্থের ভাগ পাচ্ছেন।

ডেমোক্রেটপ্রার্থী অবশ্য ট্রাম্পের অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তার পাল্টা অভিযোগ, মুখে বড় বড় কথা বললেও চীনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি ট্রাম্প। বাইডেনের অভিযোগ, বিশ্ব রাজনীতিতে চীন যেভাবে চলছে তা অনৈতিক। এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জোট তৈরি করে চীনের ওপর চাপ তৈরি করা দরকার ছিল। কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প তা করছেন না। কেবল মুখেই বড় বড় কথা বলছেন।

এখানেই শেষ নয়, তার বক্তব্য উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করেও ট্রাম্প দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির পরিচয় দিয়েছেন। কারণ উত্তর কোরিয়া গণতন্ত্র মানে না। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই তার সঙ্গে সদ্ভাব রাখতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে ট্রাম্পের জবাব, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি না করলে বিশ্ব পরমাণু যুদ্ধের মুখোমুখি হতো। উত্তর কোরিয়া লাগাতার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের প্রসঙ্গ তুলছিল। সেখান থেকে তাদের সম্পূর্ণ পরাস্ত করতে পেরেছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছেন, তাও প্রশংসাযোগ্য বলে মনে করেন ট্রাম্প।

ন্যাশভিলের শেষ বিতর্কেও ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণের ছড়াছড়ি। দুই প্রার্থী যে একে অপরকে ভয়াবহ অপছন্দ করেন, এদিনের আলোচনায় ফুটে উঠেছিল তাও। বিতর্কে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা নিয়ে দুই প্রার্থী বিপরীতধর্মী অবস্থান নেন।

বিজ্ঞানীরা যদি পরামর্শ দেন তাহলে আরও লকডাউন দেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, তিনি সে রকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। আর ট্রাম্প বলেন, ভাইরাস সংক্রমণে অধিকাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠায় এখন আরও লকডাউন দেওয়ার কথা বিবেচনা করাই ভুল হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'এটা বিশাল দেশ, বিশাল অর্থনীতি। মানুষ তাদের চাকরি হারাচ্ছে, তারা আত্মহত্যা করছে। তাদের হতাশা, অ্যালকোহল ও মাদক গ্রহণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এর আগে কেউই এমনটা দেখেনি।'

বাইডেন তার আলোচনায় মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃতু্যর দায় ট্রাম্পকে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃতু্যর জন্য যিনি দায়ী, তার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা উচিত নয়।'

এছাড়া বর্ণবাদ প্রসঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প বলেন, 'এই কক্ষে যারা আছেন আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বর্ণবাদী।' তিনি ১৯৯৪ সালের অপরাধ বিলের কথাও তোলেন, যার খসড়ায় বাইডেন সহায়তা করেছিলেন। ওই আইনের কারণে বিপুলসংখ্যক আফ্রো-আমেরিকানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে 'বস্ন্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে আসছেন।

বাইডেন তার আলোচনায় ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের 'অন্যতম বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট' অ্যাখ্যা দেন। 'তিনি প্রতিটি বর্ণবাদী আগুনেই হাওয়া দেন' বলে অভিযোগ করেন সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের তাদের সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করার নীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ওবামা প্রশাসনের আমলেও অভিবাসী শিশুদের আটক করা হয়েছিল।

চীনে ট্রাম্পের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে- নিউইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ডেমোক্রেটপ্রার্থী যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে প্রেসিডেন্টের দেওয়া কর নিয়ে তুলনা করেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, চীনে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫৬১ ডলার কর দেওয়া হয়েছিল। একই পত্রিকা আগের এক প্রতিবেদনে ট্রাম্প ২০১৬-১৭ সালে মাত্র ৭৫০ ডলার কর দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, 'আমার অনেক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, সারা বিশ্বেই আছে এবং সেগুলো সবই তালিকাভুক্ত। আমি একজন ব্যবসায়ীও।'

জাতীয় পর্যায়ের জনমত জরিপগুলোতে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনকেই ট্রাম্পের চেয়ে বেশখানিকটা এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তবে সুইং বা দোদুল্যমান হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোতে দুজনের মধ্যে ব্যবধান সামান্য। শেষ পর্যন্ত এ রাজ্যগুলো কোন দিকে হেলবে তার ওপরই নির্ভর করবে আগামী চার বছর কে হোয়াইট হাউসের দখল পাচ্ছেন।

দেশটিতে এবার রেকর্ড আগাম ভোটও পড়েছে। ডাকযোগে এবং কেন্দ্রে গিয়ে এরই মধ্যে চার কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোটার তাদের রায় জানিয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্ককে দুই প্রার্থীর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর হওয়া প্রথম বিতর্কের তুলনায় বেশ সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে। প্রথম বিতর্কে দুজন একে অপরকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ ও অপমান করেছিলেন।

এদিকে বাইডেনের সঙ্গে শেষ বিতর্কে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসার সাফাই গেয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, চীনের দিকে দেখুন, দেশটি খুবই নোংরা। ভারত ও রাশিয়ার দিকে দেখুন। সেখানকার বাতাসও দূষিত। আমি প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছি, কারণ এর নামে আমাদের হাজার হাজার কোটি ডলার নেওয়া হচ্ছিল; কিন্তু অন্যায় আচরণ করা হচ্ছিল।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116335 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1