শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
নৌযান চলাচল বন্ধ

টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত জনজীবন

শুক্রবার দিনভর ঝড়োহওয়া বয়ে যাওয়ায় নৌপথে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাধারণ কাজকর্মও একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ নৌরুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ছবিটি শুক্রবার রাজধানীর সদরঘাট থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে। এতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে। বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ বেশকিছু এলাকার পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। দিনভর ঝড়ো হওয়া বয়ে যাওয়ায় নৌপথে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাধারণ কাজকর্মও একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল ৯টার আগ পর্যন্ত নগরীর পাড়া-মহলস্না থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় রাস্তাঘাট ছিল প্রায় ফাঁকা। অন্যান্য দিনে সাপ্তাহিক বাজারের জন্য অনেকেই কাকডাকা ভোরে বাজারে ছুটলেও বৃষ্টি এবং বাতাসের কারণে অনেকেই বেশ বেলা করেই ঘুম থেকে উঠেছেন। বাজারেও তুলনামূলকভাবে ক্রেতার ভিড় ও বেচাকেনা কম ছিল। রাস্তাঘাটে গণপরিবহণেও যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই অল্প। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হয়নি।

তবে সকাল ১০টার পর থেকে বৃষ্টি কমলে জীবন ও জীবিকার সন্ধানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছাতা কিংবা রেইনকোট নিয়ে গন্তব্যে ছুটতে শুরু করেন। বিশেষ করে বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটের মালিক ও কর্মচারীদের দোকান খুলতে ছুটতে দেখা যায়। তবে দুর্গাপূজাকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে বেচাকেনা ভালো হলেও শুক্রবার তাতে অনেকটাই মন্দাভাব দেখা গেছে। বিশেষ করে ফুটপাতে হকারদের বেচাকেনা অনেকটাই লাটে উঠেছে।

বরিশাল : বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলে টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। প্রবল বর্ষণে রাস্তাঘাট এমনকি বাড়িঘরে পানি ঢুকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে আছে। সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত এবং নদীবন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত বলবৎ থাকায় বরিশালের অভ্যন্তরীণ সব পথের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ। সাগরে নিম্নচাপের উপকূলীয় এলাকায় সকাল থেকে

\হদমকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে সেখানে রবিশস্যের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে আমন ধানের খেত তলিয়ে গেছে।

শুক্রবার সকালে বরিশালের অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিআইডবিস্নউটিএর বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।

বরিশাল আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানায়, বরিশালে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বরিশালের কীর্তনখোলাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বরগুনা : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় বরগুনা তিন দিন ধরে ভারী বর্ষণ চলছে। এত পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এতে সেখানকার জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির তীব্রতার কারণে সব কাজকর্ম থমকে গেছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বরগুনা জেলা প্রশাসক রাতে সভা করেছেন। সভায় জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিপিডিবি এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বরগুনায় ৫০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পায়রা-বলেশ্বর ও বিষখালী প্রধান তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিম্নচাপ ও ভারী বর্ষণে নদীর পানি তিন ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হচ্ছে।

পটুয়াখালী : এদিকে অবিরাম বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় পটুয়াখালীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শহরের রাস্তাঘাট দিনভর ছিল ফাঁকা। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারে নদ-নদীর পানি বাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা বিবেচনা করে পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পটুয়াখালী নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক খাজা সাদিকুর রহমান বলেন, নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কসংকেত রয়েছে। জেলার অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের নৌযান-পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃষ্টিপাতের কারণে নিচু এলাকার ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও আমন ফসলের তেমন একটা ক্ষতি হবে না, বরং ফসল ভালো হবে। তবে অতিরিক্ত পানিতে ফসল দীর্ঘদিন ডুবে থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেবে।

ভোলা : বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলার সকল রুটে লঞ্চও ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডবিস্নউটিএ। শুক্রবার সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। এতে করে ভোলা থেকে কোনো লঞ্চ, বরিশাল, পটুয়াখালী, লক্ষ্ণীপুর, আলেকজেন্ডার ও মনপুরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। একই সাথে ভোলা থেকে বরিশাল ও লক্ষ্ণীপুরের ফেরিও ছাড়েনি। ভোলার সাথে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘাটেই নোঙর করে রাখা হয়েছে নৌ-যানগুলো।

ভোলা বিআইডবিস্নউটিএর অতিরিক্ত পরিচালক মো. কামরুজ্জামান জানান, বৈরী আবহাওয়া ও নৌ বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত থাকায় ভোলা-লক্ষ্ণীপুর ও ভোলা-বরিশাল রুটে ফেরি চলা বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ভোলা-লক্ষ্ণীপুর, ভোলা-বরিশাল, লালমোহন কালাইয়া, দৌলতখান-আলেকজেন্ডার ও তজুমদ্দিন মনপুরা রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওইসব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।

বাগেরহাট : বিরামহীন বৃষ্টিতে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। মোংলা বন্দরে নোঙর করা জাহাজের মালামাল ওঠা-নামার কাজে সমস্যা হচ্ছে। দু-দিনের বৃষ্টিতে জেলার অনেক এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি আরও স্থায়ী হলে শীতকালীন সবজি এবং মাঠে থাকা আমন ফসলের ক্ষতি হবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করেন। এদিকে অবিরাম বৃষ্টিতে দিন মজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে তেমন বাইরে বের হচ্ছে না। সব থেকে বেশি বিপর্যয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। মোংলা বন্দরে হারবার মাস্টার মো. ফকর উদ্দিন বলেন, মোংলা বন্দরে বর্তমানে ইউরিয়া সার, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল এলপিজি গ্যাসসহ মোট ১১টি পণ্যবাহী জাহাজ অবস্থান করছে। বৈরী আবহাওয়ায় জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামার কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, এই বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি ও মাঠে থাকা আমন ধানের আপাতত ক্ষতি হবে না। তবে এই বৃষ্টি আরও স্থায়ী হতে থাকলে মাঠে থাকা ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বাগেরহাটে শীতকালীন সবজির মধ্যে টমেটোর আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। এখন পর্যন্ত ৭০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। অন্যদিকে সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বেশি পস্নাবিত হয়েছে। ধসে গেছে রায়েন্দা পাঁচ রাস্তা এলাকায় শরণখোলা মোরেলগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বড় একটা অংশ সড়ক। ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে যানবাহন চলাচল। উপজেলার সাউথখালী, ধানসাগর খোন্তাকাটা এবং রায়েন্দা ইউনিয়নের মাঠঘাট পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে অনেক মাছের পুকুর এবং সবজিক্ষেত। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, বৃষ্টিতে জেলার কিছু নিচু এলাকায় পানি জমেছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।

শিবচর : কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে বন্ধ রয়েছে সকল নৌযান চলাচল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে পদ্মা উত্তাল থাকায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া নাব্য সংকটের কারণে আগে থেকেই ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিআইডবিস্নউটিএ সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ফলে উত্তাল হয়ে উঠেছে পদ্মা। মাঝ পদ্মায় প্রচন্ড ঢেউ থাকায় ঝুঁকি এড়াতে শুক্রবার ভোর থেকেই লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

হাতিয়া : দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় হাতিয়ার সঙ্গে সব ধরনের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। সকাল থেকে হাতিয়ায় দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত থাকায় সিপিপি ১৭৭টি ইউনিটে ১টি করে সিগন্যাল পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116336 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1