মন্ত্রী-সচিবের সমন্বয়হীনতায় স্বাস্থ্য খাতে উদ্বেগ

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও তা মোকাবিলার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় বা ডিজি হেলথের মধ্যে সমন্বয়ের যে প্রয়োজনীয়তা ছিল, সেটা কোথাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

বিশেষ প্রতিনিধি
স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ ওই বিভাগের বিভিন্ন প্রফেশনাল তথা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সম্প্রতি 'করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় করণীয়' শীর্ষক সচেতনতামূলক বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় রাজধানীতে। করোনা মোকাবিলায় এই জাতীয় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল মাঠে নামলেও তা সম্পূর্ণ পন্ড হতে চলেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে। এরই মাঝে হাসপাতালগুলোর সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে মন্ত্রী ও সচিবের মধ্যে স্মরণকালের চরম সমন্বয়হীনতা, স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্টদের উদ্বিগ্ন এবং দেশের সাধারণ মানুষকেও স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে গত ৪০ বছর ধরে যেখানে চিকিৎসকরা নিয়োগ পেতেন, সেখানে বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব বিভিন্ন পদে ক্যাডার থেকে নিয়োগ দিচ্ছেন। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা। এ জাতীয় কর্মকান্ডের জন্য স্বাস্থ্য সচিবের অপেশাদারিত্ব আচরণকে দায়ী করেন সংশ্লিষ্টরা। আর এসব পদক্ষেপের কারণে শুধু চিকিৎসকদের মধ্যেই নয়, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের প্রফেশনালদের মধ্যেও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডে তৈরি হচ্ছে নানা সংকট। যেখানে প্রফেশনাল চিকিৎসক প্রয়োজন, সেখানে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকায় স্বাস্থ্য খাতের পুরো প্রক্রিয়াটি আজ হুমকির মুখে। প্রসঙ্গত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো বড় একটি মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৮ বছর কর্মরত একজন 'বিশেষজ্ঞ মন্ত্রীর' নির্দেশ উপেক্ষা করে বর্তমান সচিব এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও তা মোকাবিলার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় বা ডিজি হেলথের মাঝে সমন্বয়ের যে প্রয়োজনীয়তা ছিল, তাতেও ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে জনসচেতনতা তৈরিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও সচিব এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে স্বাধীনতা চিকিৎসক পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫ পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, 'স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিকিৎসক পেশাজীবীদের কেউ থাকবেন' এই যৌক্তিক দাবি শুধু চিকিৎসকদের নয়, এটা সবার দাবি। যারা এই দাবি মানছেন না, তারা নিশ্চয়ই কারও দ্বারা প্রভাবিত কিংবা ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এসব করছেন বলে মনে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সচিব ডা. দুলাল বলেন, এই অনভিপ্রেত ঘটনাই এখন সংশ্লিষ্ট বিভাগে ঘটে চলেছে। এটাই নির্মম সত্য। মন্ত্রী বিষয়টি প্রথমে অবগত ছিলেন না। তিনি পরে অবগত হলেও তার করণীয় নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে যা ঘটছে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনাও নয়, এটা হলো আমলাতান্ত্রিক আগ্রাসন।