প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গাপূজা

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের দুর্গোৎসব। ছবিটি সোমবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা -স্টার মেইল
করোনা মহামারির বিধিনিষেধে দেবী দুর্গার দেবালয়ে ফেরার শোভাযাত্রায় ভক্তের সংখ্যা সীমিত হলেও অভাব ছিল না ভক্তি ও ভালোবাসার। শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের বাজনার সঙ্গে দেবী প্রতিমাকে বিসর্জন দিয়েছেন ভক্তরা। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। সোমবার ছিল দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী। এ দিন দুপুর দেড়টার দিকে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নানঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর একের পর এক বিভিন্ন মন্ডপ থেকে ঘাটে প্রতিমা আসতে থাকে বিসর্জনের জন্য। ওয়াইজঘাট ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতি বছর বিসর্জনের জন্য একটি ট্রাকে একসঙ্গে অনেক মানুষ গেলেও এবার একটি ট্রাকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ১০ জনের অতিরিক্ত যাওয়া যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রতিমা ঘাটে নেওয়ার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতি করেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার চন্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয় দুর্গাপূজা। এবার দেবী এসেছেন দোলায়, যাবেন গজে (হাতি) চড়ে। করোনা মহামারির কারণে সংক্রমণ এড়াতে এ বছর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু 'দুর্গাপূজা' \হহিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। দশমীর দিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে শ্রী শ্রী দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ প্রতিমা-নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হয়। দর্পণ বিসর্জনের পর দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেবদেবীর বিসর্জন দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরেন। এদিকে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয় একে একে প্রতিমা বিসর্জন। তেল-সিঁদুর পরিয়ে, পান, মিষ্টি মুখে দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভিড় করেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। নানা ধর্মের, নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বেলা ১১টা থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন পূজামন্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ট্রাকবাহী প্রতিমা নিয়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে পূজারি ও ভক্তরা জড়ো হতে শুরু করেন পতেঙ্গা সৈকতে। এরপর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের পালা। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এবার শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়নি। শঙ্খ উলুধ্বনির পাশাপাশি বাদ্যের ঘণ্টা বাজিয়ে 'জয়, দুর্গা মায়ের জয়' বলে একের পর এক প্রতিমা ভাসিয়ে দেওয়া হয় সাগরে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সর্বশেষ দেওয়া তথ্য অনুসারে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ২২৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার মন্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গত বছরের তুলনায় এবার এক হাজার ১৭৫টি মন্ডপে পূজা কম হয়। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজামন্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পূজা হয় ৭৪০টি মন্ডপে।