নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধর দেহরক্ষীসহ ইরফান সেলিমের এক বছর কারাদন্ড

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম এবং তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে এক বছর করে কারাদন্ড দিয়েছের্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটে হাজি সেলিমের বাড়িতে অভিযান শেষে এই দন্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া রোববার রাতে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি মামলাও রয়েছে তার নামে। ওই মামলাও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা গেছে। র্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিলস্নাহ জানান, তার বাসা থেকে অবৈধভাবে মজুত রাখা বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করেছের্ যাব। এ ছাড়া তার শয়নকক্ষ থেকে একটি অস্ত্র, বিপুলসংখ্যক ওয়াকিটকি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। বেআইনিভাবে মাদক ও ওয়াকিটকি রাখার কারণের্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক বছর কারাদন্ড দেয়। জানা গেছে, রোববার রাতে ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজি মোহাম্মদ সেলিমের 'সংসদ সদস্য' স্টিকারযুক্ত সরকারি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করা হয়। রাতে এ ঘটনায় জিডি করা হলেও সোমবার ভোরে হামলার শিকার ওয়াসিফ আহমেদ বাদী হয়ে হাজি সেলিমের ছেলেসহ সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যাপ্রচেষ্টার মামলা করেন। ওয়াসিফ আহমেদ এজাহারে অভিযোগ করেন, তিনি নীলক্ষেত থেকে বই কিনে মোটরসাইকেলে করে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরছিলেন। সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন। ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে তার মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। ওয়াসিফ আহমেদ মোটরসাইকেল থামিয়ে গাড়িটির গস্নাসে নক করে নিজের পরিচয় দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে চান। তখন এক ব্যক্তি বের হয়ে তাকে গালিগালাজ করে। পরে গাড়িটি কলাবাগানের দিকে যেতে থাকে। ওয়াসিফ আহমেদও মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের অনুসরণ করেন। গাড়িটি কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে থামলে ওয়াসিফ মোটরসাইকেল নিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ান। তখন আসামিরা একসঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে তাকে কিল-ঘুষি মেরে রক্তাক্ত জখম করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যান। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার সময় তার স্ত্রীকেও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে স্থানীয় জনতা এবং পাশে ডিউটিরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথচারীরা এই দৃশ্য ভিডিও করেন, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ধানমন্ডি থানা পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে গাড়িটি থানায় নিয়ে যায়। ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুন্নাহার জানান, এ ঘটনায় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খান বাদী হয়ে সোমবার ভোরে হত্যাপ্রচেষ্টা মামলাটি করেন। মামলায় চারজনের নাম উলেস্নখ এবং অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন এরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ, হাজি সেলিমের মদিনা গ্রম্নপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জন। তাদের মধ্যে গাড়িচালক মিজানুর রহমান ও বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সোমবার দুপুর ১টার দিকের্ যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বের্ যাব-৩ ও ১০ এর সদস্যরা সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের বাসায় অভিযান চালায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা সাংসদপুত্র ইরফানকে গ্রেপ্তার করে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। র্ যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র লে. কর্নেল আশিক বিলস্নাহ জানান, হাজি সেলিমের পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটের দেবদাস লেনের নবমতলা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ইরফান সেলিম বসবাস করেন। তার ওই দুটি ফ্ল্যাটে তলস্নাশি করে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া, বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো লাইসেন্স নেই। এ ছাড়া ওয়াকিটকিগুলোও অবৈধ। কারণ, কালো রঙের ওয়াকিটকি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করতে পারে। অভিযানে অংশগ্রহণকারী একজনর্ যাব কর্মকর্তা জানান, ইরফান সেলিমের শোবার ঘরের ঘাটের তোষকের নিচ থেকে ম্যাগাজিনসহ পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়। ঘরের একটি কাঠের আলমারিতে বিয়ার ও মদ মজুত ছিল। এদিকে হাজি সেলিমের গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান শুনানি শেষে মিজানুর রহমানের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত থেকে বের হওয়ার সময় মিজান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, 'আমি মারধর করিনি, মারধর করেছে সিকিউরিটি গার্ড জাহিদ। আমি তো এক সপ্তাহ আগে হাজি সেলিমের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি নেই। ঘটনার সময় দুইপক্ষই আরেক পক্ষকে মারধর করেছে।' রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, 'মিজানুরকে রিমান্ডে এনে মূল ঘটনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেহেতু সে গাড়ি চালাচ্ছিল, সুতরাং সবকিছু তার চোখের সামনেই ঘটেছে। তাই তার কাছ থেকে সবকিছুই জানা যাবে।'