ফাঁকা পড়ে আছে কোভিড হাসপাতালের শয্যাগুলো

চট্টগ্রামে ৮৬ এবং সারাদেশে ৭৯ শতাংশ ফাঁকা

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

জাহিদ হাসান
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় নির্ধারিত ঢাকা মহানগরীর ১০টি সরকারি হাসপাতালের ৪৩ শতাংশ বেড শূন্য পড়ে আছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার ৮৬ শতাংশ ও অন্যান্য বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ৯৩ শতাংশ শয্যা ফাঁকা রয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৫২৮টি সাধারণ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার ১ হাজার ৭৩৫টিতে রোগী ভর্তি ছিল। এ হিসাবে মোট শয্যার মধ্যে ৪৩ শতাংশ ফাঁকা ছিল। বিপরীতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বিভাগে শয্যা রয়েছে কোভিড ৭ হাজার ৩৮৬টি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত খালি ছিল ৬ হাজার ৮৭৭টি। এ হিসাবে এসব বিভাগে ৯৩ শতাংশ শয্যাতেই রোগী ভর্তি ছিল না। এছাড়া এই দুই বিভাগ ছাড়া সারাদেশে ২১১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ১৩৪টি অর্থাৎ করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ৬৩ শতাংশ নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বেড ফাঁকা ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ঢাকাসহ সারাদেশে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে মোট শয্যা রয়েছে ১১ হাজার ৭৩০টি। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এসব শয্যায় করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৩৫৮ জন, অর্থাৎ সারাদেশে মোট শয্যার ৭৯ ভাগই ছিল ফাঁকা। এছাড়া করোনা রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বা আইসিইউ রয়েছে ৫৬৪টি। গতকাল সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২৬০ জন, অর্থাৎ মোট আইসিইউ শয্যার ৫৩ শতাংশই ফাঁকা ছিল। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ব্যবধান এত বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা যায়যায়দিনকে বলেন, সম্প্রতি সরকার ঢাকায় প্রায় আড়াই হাজার শয্যা কমিয়েছে। যে কারণে দৈনিক ভর্তি রোগীর গড় হিসাবে এই পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, এর আগে গত ২৬ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের ৪ ভাগের ৩ ভাগ শয্যা ফাঁকা থাকছে। ওইদিন করোনার চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে ৭০ শতাংশ শয্যা ফাঁকা ছিল। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত অধিকাংশ দিনে ৭০ থেকে ৭৩ শতাংশ পর্যন্ত শয্যা ফাঁকা থাকছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাসবিষয়ক দৈনন্দিন তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি কমে আসায় গত আগস্টের শেষ দিক থেকে শয্যা কমাতে শুরু করে সরকার। ২৪ আগস্ট সাধারণ শয্যা ছিল ১৫ হাজার ২৫৫টি। আর ২ সেপ্টেম্বর শয্যা ছিল ১৪ হাজার ৪৭৪টি। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরায় কোভিড হাসপাতাল, মিরপুরে লালকুঠি হাসপাতাল ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তভুক্ত ঢাকা মহানগর হাসপাতালে কোভিড-১৯ সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. ফরিদ উদ্দীন মিঞা যায়যায়দিনকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব এবং  সংক্রমণজনিত মৃতু্যর হার কমে যাওয়া চিকিৎসা সেবায় সফলতা ও আশার দিক। এসব কারণেই কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে শয্যা ফাঁকা থাকছে। তবে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ চিকিৎসার পাশাপাশি নন-কোভিড সেবা চালুর একটা নির্দেশনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় সাধারণ রোগী ও সেবাদাতাদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। কোভিড ও নন-কোভিড রোগীরা যেন কোনোভাবেই একে অপরের সংস্পর্শে না আসে সে ব্যাপারেও সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে প্রস্তুতি হিসেবে ৬ ফেব্রম্নয়ারি রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালকে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারণ করে সরকার। এরপর থেকে বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে সরকারি-বেসরকারি ১৯টি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে গতকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাস চিকিৎসায় নির্ধারিত ঢাকা মহানগরীর ১০টি সরকারি হাসপাতালের (আইসিইউ বেড ছাড়া) মধ্যে উত্তরার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত ২০০ শয্যার মধ্যে ১২৭টি অর্থাৎ ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ ফাঁকা ছিল। একইভাবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭৫টি বেডের বিপরীতে ৩১টি অর্থাৎ ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ, ঢাকা মেডিকেল-২ এ করোনার জন্য নির্ধারিত ৮৮৩ শয্যার বিপরীতে ৩৬৮টি বা ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২০ বেডের বিপরীতে ২১০টি অর্থাৎ ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ, আড়াইশ' শয্যাবিশিষ্ট রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১০৩টি অর্থাৎ ৪১ দশমিক ২ শতাংশ, বিএসএমএমইউতে ২৩৪ শয্যার মধ্যে ৫০টি অর্থাৎ ২১ দশমিক ৩ শতাংশ শয্যা ফাঁকা ছিল। একইভাবে মহাখালীতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৪০ শয্যার মধ্যে ১০৩টি অর্থাৎ ৭৩ দশমিক ৫৭, ফুলবাড়িয়ায় সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৬৬টি বেডের মধ্যে ২৬টি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ১৫০ শয্যার ৬৮টি ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ১০ বেডের সবই ফাঁকা ছিল। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ১০টি হাসপাতালের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬৫ বেডের মধ্যে ফাঁকা ছিল ১০৬টি। ফৌজদারহাটের ৩২ বেডের বিআইটিআইডি হাসপাতালে ২৬টি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৫০ বেডের মধ্যে ১২৩টি, আগ্রাবাদে ৮৪ বেডের মা ও শিশু হাসপাতালে ৩০টি, ৪৩ বেডের আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালে ৩৯টি বেড ফাঁকা ছিল। এছাড়া ১০০ বেডের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ১০০ বেডের চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল, পাহাড়তলীতে ৪৭ শয্যার বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ভাটিয়ারীতে ৪০ বেডের ফিল্ড হাসপাতাল ও ১০০ বেডের করোনা আইসোলেশন সেন্টারের সব রোগী শূন্য অবস্থায় ছিল। এ ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিভাগের করোনার জন্য নির্ধারিত ১০ হাসপাতালে ৮২৫টি সাধারণ বেডের মধ্যে ৭১১টি অর্থাৎ ৮৬ শতাংশ ও ৩৯টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ২৪টি অর্থাৎ ৬১ শতাংশ আইসিইউ বেড ফাঁকা রয়েছে।