মহম্মদপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে পাওনাদারের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ!

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

এস আর এ হান্নান, মহম্মদপুর (মাগুরা)
সুদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে পাওনাদারের হাতে নিজের স্ত্রীকে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামী সুজয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর পাওনাদার ইসমাইল ওই গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলাধীন রাজাপুর গ্রামে। বিষয়টি মিমাংসার জন্য ওই নারী দারস্থ হয়েছেন জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার কাছে। প্রথম স্বামী বলেন, তিনি নিজের ইচ্ছায় তার স্ত্রীকে পাওনাদারের হাতে তুলে দেননি। বরং দাবিকৃত সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পাওনাদার তার স্ত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যান। অভিযুক্ত ইসমাইল বলেন, স্বেচ্ছায় ওই নারী তাকে বিয়ে করেছেন। উভয় পক্ষের সম্মতিতে বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা জটিল এই বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করছেন। তবে মিমাংসার বিষয়টি চলমান থাকায় এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি জেলার লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা। এদিকে জেলা মহিলা পরিষদের নেত্রী বলছেন, বর্তমান যুগে বিষয়টি অকল্পনীয়। তারা ওই অসহায় নারীর পাশে থেকে তাকে সহায়তা করবেন। মাগুরা সদর উপজেলার মনিরামপুর গ্রামের নির্যাতিতা ওই নারী জানান, ৮ বছর আগে তার বিয়ে হয় মহম্মদপুরের রাজাপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী সুজয় বিশ্বাসের সঙ্গে। বছর দুয়েক আগে হঠাৎ করে তিনি জানতে পারেন, একই এলাকার ইসমাইল মন্ডলের কাছ থেকে তার স্বামী সুদে টাকা নিয়েছেন। ইসমাইলের দাবি অনুযায়ী সুদে-আসলে যার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা। ইসমাইল তার স্বামীকে টাকা পরিশোধের জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। মূল টাকা পরিশোধ করলেও তার স্বামী দাবিকৃত মোটা অঙ্কের সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে ইসমাইল টাকা দিতে না পারলে স্ত্রীকে (তাকে) তার হাতে তুলে দিতে বলেন। ইসমাইলের চাপে পড়ে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তাকে তার স্বামী যশোর নিয়ে ইসমাইলের হাতে তুলে দেন। এরপর তাকে ধর্মান্তরিত করে ইসমাইল বিয়ে করে প্রথমে ঢাকায় নিয়ে একটি বাসায় আটকে রাখে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেন। মাস দুয়েক পর ইসমাইল তাকে মাগুরায় তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে ইসমাইল এবং তার প্রথম স্ত্রী ও ছেলে ওই নারীর ওপর নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি প্রায় পাঁচ মাস আগে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন এবং ইসমাইলকে দুই মাস আগে তালাক দেন। বর্তমানে তিনি মাগুরা শহরে এক নারীর আশ্রয়ে থেকে একটি ক্লিনিকে সেবিকার চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে তালাক দিলেও ইসমাইল তার পিছু ছাড়ছেন না। ফোনেসহ তার কর্মস্থলে এসে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ অবস্থায় তিনি ইসমাইলের হাত থেকে রেহাই পেতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিষয়টি মিমাংসার জন্য আবেদন করেছেন। ওই নারীর প্রথম স্বামী সুজয় বিশ্বাসের দাবি- তিনি ইসমাইলের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিলেন, তা পরিশোধ করে দিয়েছেন। তারপরও ইসমাইল তার কাছে সুদে-আসলে ৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ডাক্তার দেখাতে গেলে ইসমাইল যশোর থেকে তাকে মারধর করে স্ত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তবে অভিযুক্ত ইসমাইল বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। তিনি সুদের ব্যবসা করেন না। ওই নারীকে তিনি জোর করে তুলে নিয়ে বিয়েও করেননি। সে স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়ে তাকে বিয়ে করেছে। এখন তিনি তার স্ত্রীকে ফিরে পেতে চান। এ বিষয়ে জেলা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট শাহিনা আক্তার ডেইলী বলেন, আইনগতভাবে তালাক দিলে কোনো নারীকে তার স্বামী তখন আর স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে পারেন না। তালাক দেওয়ার পরও যদি কোনো ব্যক্তি তার সাবেক স্ত্রী উত্ত্যক্ত বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তবে সেটা বড় ধরনের ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী মমতাজ বেগম বলছেন, বর্তমান সময়ে সুদের কারণে একটি নারীর ওপর যে অন্যায়-অত্যাচার করা হয়েছে তা অকল্পনীয়। নারী কোনো ভোগ্যপণ্য বা সম্পদ নয়, যা অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর করা যায়। মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, ওই নারী এ ঘটনায় পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।