রিফাত হত্যা মামলার রায়

১১ অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

মিজানুর রহমান, বরগুনা
রিফাত শরীফ
বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডে দায়ের করা মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ৬ জনের ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ মামলার অন্য ৪ আসামিকে ৫ বছর, একজনকে ৩ বছর এবং তিনজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এ মামলার আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী, মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদা, মো. আবু আবদুলস্নাহ রায়হান, মো. ওলিউলস্নাহ অলি, মো. নাঈম এবং তানভীর হোসেনকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জয়চন্দ্র সরকার চন্দন, মো. নাজমুল হাসান, রাকিবুল হাসান নিয়ামত, সাইয়েদ মারুফ বিলস্নাহ ওরফে মহিবুলস্নাহকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। আর প্রিন্স মোলস্নাকে দেওয়া হয়েছে তিন বছরের কারাদন্ড। এছাড়া এ মামলার অন্য তিন আসামি- মারুফ মলিস্নক, রাতুল সিকদার জয় এবং আরিয়ান হোসেন শ্রাবণকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে আদালতপাড়ায় পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সকাল সোয়া ৯টার দিকে আদালতে আসেন বিচারক। কারাগারে থাকা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয় আসামিকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে করে সকাল ৯.৩৫ মিনিটের সময় আদালতে আনা হয়। জামিনে থাকা অন্য আসামিরা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আসেন। মামলার রায়ে বিচারক বলেন, 'সারাদেশের কিশোর অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিশোর অপরাধীদের যারা গর্ডফাদার তারা তাদের ব্যবহার করছে। আদালত বলেছেন, কিশোর অপরাধীর সাজা যেহেতু কম সেহেতু তাদের সাজা বৃদ্ধি করে দিলে কিশোর অপরাধ কমে আসবে। আদালত আরও বলেন, এ মামলায় যারা কিশোর অপরাধী ছিলেন এদের বয়স যথাসময়ে নির্ধারণ করা হয়নি। তাদের অভিভাবকদের যথাসময়ে জানানো হয়নি। এদের সম্পর্কে প্রবিশন কর্মকর্তাকে জানানো হয়নি।' এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনার শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, আদালতের রায়ে আমরা খুশি। আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নার্গিস পারভীন সুরমা বলেন, আমার আসামি নির্দোশ। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, আদালতের রায়ে আমরা খুশি। আমার ছেলের হত্যার সঠিক বিচার পেয়েছি। এ মামলায় পুলিশ ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। এরপর ১৩ জানুয়ারি থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়। গত ১৪ অক্টোবর বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২৭ অক্টোবর রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। উলেস্নখ্য, এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন। আর বাকি চারজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকান্ড ঘটে। ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু'ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছিল।