পঞ্চগড়

করোনাময় শীতে বাড়ছে উৎকণ্ঠা

উত্তরাঞ্চলে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। হেমন্তের শুরুতেই মৃদু ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ভোর ও সন্ধ্যায় কুয়াশা ও শিশির পড়ছে। সর্বত্র শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া শীতের আগাম প্রস্তুতির একটি চিত্র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

মো. আব্দুল কাইউম
এবার আগেভাগেই জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। ভোরে পড়তে শুরু করেছে হালকা শিশির -যাযাদি
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থান হওয়ার কারণে প্রতি বছরই পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। শীতকালে অধিকাংশ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করে এ জেলার তেঁতুলিয়ায় আবহাওয়া অফিস। এখানে দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে আগে শীত অনুভূত হয়। আর শেষ হয় সবার পরে। এসময় শীতে ও শীতজনিত রোগে প্রাণ হারান অনেকে। এবারও পঞ্চগড়ে আগাম শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। তবে এবার শীত আসছে করোনাময় হয়ে। এবার শীতের পাশাপাশি পঞ্চগড়বাসীকে লড়তে হবে করোনার সঙ্গেও। করোনাময় শীত সামাল দিতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হলেও পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতে আশ্বিনের শেষ ও কার্তিক থেকে শুরু হয়ে যায় শীত। প্রতি বছর এ সময়টায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ঝড়-বৃষ্টির পর থেকেই শীতের দেখা মিলতে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের পর থেকে পঞ্চগড়ে শীত অনুভূত হচ্ছে। আকাশ মেঘলা থাকার পাশাপাশি সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা ঝরছে। আর অগ্রহায়ন থেকেই শুরু হয়ে যাবে তীব্র শীত। তবে এবারের শীত নিয়ে আতঙ্কে আছেন পঞ্চগড়ের মানুষ। বাংলাদেশে করোনার শুরু থেকেই পঞ্চগড়ে আক্রান্তের সংখ্যা খুব বেশি নয়। মৃতু্যর সংখ্যাও অন্যান্য জেলার তুলনায় কম। তবে শীতকালে করোনা নতুন করে বিস্তার লাভ করবে; এই আশঙ্কায় চিন্তিত এখানকার মানুষ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া এবং স্বল্প আয়ের মানুষ শীতে বেশি কষ্টের মধ্যে থাকে। খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাদের শীত নিবারণ করতে দেখা যায়। পুরো শীতকাল তাদের অপেক্ষা করতে হয় সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিলি করা শীতবস্ত্রের দিকে। তীব্র শীতে তারা কাজে বের হতে না পারলেও পরিবার নিয়ে তাদের উপোস থাকতে হয়। এরই সঙ্গে করোনা তাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এমনিতেই শীতকালে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বর, কাশ, নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সময়টায় শিশু ও বৃদ্ধরা থাকেন অতিরিক্তি ঝুঁকির মধ্যে। এর মধ্যে কিছু রোগের উপসর্গ করোনার মধ্যেও রয়েছে। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে সাধারণ মানুষ। তবে শীতকালে করোনা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানালেন পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুর রহমান। তিনি জানান, শীত ও করোনা মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। এমনিতেই শুরু থেকেই পঞ্চগড়ে করোনা শনাক্তের হার খুবই কম। আবার শনাক্তদের অধিকাংশই বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা খুবই কম। তারপরও আমরা শীতে মোট ২০টি বেড প্রস্তুত রেখেছি। আমাদের পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী থাকায় আমরা আশা করছি, শীতে করোনা মোকাবিলায় আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আজাদ জাহান জানান, শীতের সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় ইতোমধ্যে আমরা জেলা পর্যায়ে সভা করেছি। সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা জেলা পর্যায়ে ৩০টি এবং উপজেলা পর্যায়ে ২০টিসহ মোট ৫০টি বেড প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রয়োজনে আধুনিক সদর হাসপাতালে আরও একটি ওয়ার্ডকে কোভিড ডেডিকেটেড করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া জরুরি রোগী হেলিকপ্টারে পরিবহণের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে হ্যালিপ্যাড করার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। এছাড়া শীতার্ত মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।